মাজরুল ইসলাম এর ছয়টি কবিতা

মাজরুল ইসলাম
মাজরুল ইসলাম
2 মিনিটে পড়ুন

জেগে থাকো

উৎসর্গ: প্রয়াত কবি নাসিম এ আলম

মৃত্যুর খবর এসেছে
তোমাকে নিয়ে শোকের ছায়া ঘরে ঘরে।

তোমার কবিতা ভরায় মন
তাইতো, প্রশংসায় পঞ্চমুখ সুশীল কুমার।

নাসিম এ আলম,
তোমার মৃত্যু হয় না
জেগে থাকো তোমার সৃষ্টিতে।

ফিরে এসো

উৎসর্গ: রাজা রামমোহন রায়

তুমি চিরসত্য, তোমার
সৃষ্টির জন্য।

- বিজ্ঞাপন -

তোমার প্রাসঙ্গিকতা এতটুকু কমেনি
এই সময় কালেও।

অমিল কবিতা কিংবা ভোরের শিশিরে
জরাজীর্ণ ভবন,
লক্ষ্মণ রেখা ডিঙিয়ে যাক বা না যাক
সীতার দুঃখের কোনও সীমা নেই।

রাজা, তোমার সৃষ্টি কিংবা
তোমার সেই স্পর্ধাটাকে তুলে ধরতে পারিনি।

নব ভারতের অগ্রদূত,
নতমস্তকে কৃতজ্ঞ তোমার কাছে, তুমি
আর একবার এসো ফিরে।

সিত্রাং

নদীর তীর বিদ্ধ করে এখন
গ্রামগঞ্জের বুক চিরে,
কোনওকিছু না মেনে দুরন্ত গতিতে
ছুটে চলেছে সিত্রাং।

- বিজ্ঞাপন -

পিরের থান, পুজোর মণ্ডপ ভাঙে
তার প্রতাপে
বাড়ি,ঘর,ঘরের চাল ভেসে যাচ্ছে নদীতে
জবুথবু মানুষ কিংবা
নদীর বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা বুড়োবট গাছটা
এক নিমেষে তলিয়ে গেল।

হাওয়া অফিস থেকে টান টান কথা হেঁকেছিল
দিনে সতেরোবার।

তোমাকে আর একবার মনে করিয়ে দিই
চারদিকে যখন শ্মশানের শান্তি
তখন ভাঙ্গন দেখতে
তারা ইচ্ছেডাঙ্গা থেকে নেমে এসে দর্শনার্থীর মত ভিড় করে।

- বিজ্ঞাপন -

বিকাশ

অজস্র তোমার ফেসবুক-বন্ধু।
সজাগ দৃষ্টি, আবার মনোযোগী তারা
শুধু তোমারই জন্য, কিন্তু—
পাশের চির-চেনা কানা গলি, গলির রং রয়ে গেল
বাহুমূলের নিম্নদেশে।অথচ

মুঠোফোনের গলি, তস্য গলিতে গিয়ে
অভীপ্সিত চাঁদ-বুড়িকে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার সবই দিচ্ছে।

এমন ফেসবুকে থাকে কী—
জীবন্ত বিকাশ

খেলা

নিয়োগ দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ হওয়ায়
বিধ্বস্ত তোমার কথিত শ্বেত আঁচল।

সাদা খাতায় খেলা করে
কেউ, কেউ ফুলে উঠেছে। আর
প্রচেতা হন্যে হয়ে খুঁজে
জীবন ধারণের কিনারা
দয়া করে তার দারুন দুর্দশার কথা শুনুন একবার!

এতকিছুর পরও পুণ্যার্থী পুজো দিতে ভিড় করে
কালীঘাট মন্দিরে।
তোমার হাতের স্পট ছাপে এ’খেলা যে,
জীবন মরণের খেলা হয়ে উঠল?

আত্মগ্লানি

নামহীন নই, গোত্রহীনও নই
তবুও নিষিদ্ধ পল্লিতে দিন-যাপনের গ্লানি।

ঠিকানা ছিল—
চাইবাসা ,সরাইকেলা ,গুমলা কিংবা
কোনও এক গাঁ-ঘর।

এখন এখানে আমি খুব অসুস্থ
চোখের নিচে কালি
সারারাত ঘুমোতে দেয় না
রাতজাগা গিলটি-করা জোনাকির দৌরাত্ম্য।

দিনের বেলা এ-পথে এলে
জোনাকির গায়ে পাক দেয় ,
কেননা গা-ভরতি স্পর্শদোষে
আমি তখন একঘরে থাকি। কিন্তু

রাত নামতেই নেশাগ্রস্থ জোনাকি এসে
খেলা করে এখানে
প্রসাদ খায়,
কোন জাদু বলে!

এই গোপন কথা থাক, নীরবে নিরন্তর।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ জেলার অধুনা রানিতলা থানার অন্তর্গত বেণীপুর গ্রামে মাতুলালয়ে কবি ও প্রাবন্ধিক মাজরুল ইসলাম ১৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ওই থানার অন্তর্গত শিমুলডাঙ্গা গ্রামে। বর্তমানে তিনি পার্শ্ববর্তী ছাতাই গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পিতা মরহুম মহাম্মদ মণ্ডল,মাতা মরহুমা হাসিনা বিবি।মাজরুল ইসলাম তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি ছাতাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে এবং ৪/৫ বছর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর নিজের প্রচেষ্টায় আখেরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এবং ১৯৮৪ সালে সেখান থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। জিয়াগঞ্জ শ্রীপৎ সিং মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য পুনরায় পড়াশোনা অসমাপ্ত।মাজরুল ইসলাম সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন কবিতা চর্চাশুরু করেন। অবশ্য প্রবন্ধও লেখেন। মুর্শিদাবাদ তথা পশ্চিমবাংলা ও বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। কবি মাজরুল ইসলাম সহজ-সরল কাব্য ভাষার একজন শক্তিশালী কবি। সাবলীল বাক্য গঠন ও বোধগম্য শব্দচয়নের রূপ- মাধুর্য তাঁর কাব্যে উপস্থিত। কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ছায়াছন্ন ঘরবাড়ি' ।তারপরে 'পুনর্বাসন আপনাকে ... ' , 'নীল জলের কাব্য' ও 'কালের শঙ্খধ্বনি' (যন্ত্রস্থ) । এবং 'লোকায়ত প্রবন্ধ', 'আবার ফিরে এসেছি' , ' ,উপমা' 'মহুয়ামন' , 'লোক' , 'প্রদর্শিকা' , 'অনুভব' , 'অর্বাচীন', 'ডুয়ার্স সমাচার, , 'নন্দন' ,'গোরাগাঙনি' , 'কলাপাতা' , 'স্বপ্ন' , 'বুলবুল' 'উল্কা বৃষ্টি' , 'অন্যমুখ' , 'দ্বাদশাঞ্জলী', 'ধামসা মাদল' , 'আজকের ধূমকেতু' , 'সামান্থা' , প্রভৃতি পত্র -পত্রিকায় লেখেন। ২০১১ সালে তিনি, 'বর্ণ পরিচয়' সাহিত্য পুরস্কার পান। 'অষ্টবসু সাহিত্য পুরস্কার' , 'দূর্গাপদ ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার' , 'নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেওয়া স্মৃতি পুরস্কার' খোলা চিঠি পত্রিকার পক্ষ থেকেও ২০১৯ সালে সংবর্ধিত হন। ২০২১সালে সৈয়দ আহাসান আলী স্মৃতি পুরস্কার পান এবং 'কলকাতা লোকসংস্কৃতি পরিষদ'- এর পক্ষ থেকে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ স্মারক সম্মান অর্জন করেন ২০২২ সালে।এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কার ও সংবর্ধনা সম্মানে ভূষিত। ১৯৮৯ সালে নাসিমা বেগম-এর সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের কন্যাদ্বয় যথাক্রমে কামিনা ইসলাম(জুঁই), মালিকা ইসলাম(জবা)।মাজরুল ইসলাম বর্তমানে ভারতীয় জীবন বিমা নিগমের প্রতিনিধি এবং নাসিমা বেগম লহড়ী শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!