পাকিস্তানের ‘ডিপ স্টেট’ বা ‘রাষ্ট্রের গভীরে রাষ্ট্র’ দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। তার অভিযোগ, পাকিস্তানের ডিপ স্টেট তার ওপর হত্যা প্রচেষ্টার এফআইআর দায়ের করতে পাঞ্জাব পুলিশকে বাধা দিচ্ছে।
তুরস্কের নিউজ চ্যানেল টিআরটি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান এসব মন্তব্য করেন। মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মঙ্গলবারের ওই সাক্ষাৎকারে ইমরান বলেন, প্রতিটি ব্যক্তিকে এমনকি সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে আইনের শাসনের আওতায় আনা হলে সেটার মাধ্যমে মূলত ন্যায়বিচারকেই এগিয়ে নেওয়া হয়। আর তাই পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতিকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ‘আরও দৃঢ়’ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং একজন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, ‘পাঞ্জাবে আমার দল ক্ষমতায় রয়েছে (…), আমি পাকিস্তানের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তির প্রধান, তবুও আমি এই তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি।’
বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার বলেন, ‘আমি জানি তারা জড়িত ছিল। আমি জানি, এই তিনজনই হামলায় সংশ্লিষ্ট। কিন্তু তারপরও আমি তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে পারছি না।’
ইমরান আরও বলেন, ‘এটা (অভিযোগ দায়ের করতে পারা) আমার অধিকার (…) তারা আমাকে প্রায় মেরে ফেলেছিল (…) মৃত্যুর ফাঁদ থেকে আমি বেঁচে এসেছি। আর তাই অন্তত আমার এটা খুঁজে বের করার অধিকার থাকা উচিত যে, কারা আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল।’
সরকারবিরোধী লংমার্চে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদ শহরে গত বৃহস্পতিবার পিটিআই প্রধান পায়ে একাধিক গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে এক ভিডিও বার্তায় ইমরান তার ওপর হত্যাচেষ্টার জন্য দায়ী তিনজনের নাম উল্লেখ করেন। এই ঘটনায় পাকিস্তানের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, হামলার ঘটনার কয়েকদিন পর এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। মূলত গত সোমবার পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিদর্শককে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট আল্টিমেটাম দেওয়ার পরে পুলিশ মামলাটি নথিভুক্ত করে। তবে সেই এফআইআর-এ ইমরান খানের অভিযুক্ত তিনজনের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পাঞ্জাবে তার দল সরকার থাকা সত্ত্বেও তিনি হামলার এফআইআর নথিভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ইমরান বলেন, ‘(নাম উল্লেখ করে এফআইআর দায়েরের বিষয়টি) পাঞ্জাব পুলিশ প্রত্যাখ্যান করেছে। পাঞ্জাব পুলিশ কারা নিয়ন্ত্রণ করছে?’
পিটিআই প্রধান বলেন, ‘একটি প্রদেশের প্রধান হিসাবে আমি নির্দিষ্ট তিনজনকে তদন্তের আওতায় আনতে পারছি না, তাহলে সাধারণ মানুষের জন্য পরিস্থিতি কী হবে তা কল্পনা করুন।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ন্যায়বিচার তখনই নিশ্চিত হবে যখন অভিযুক্ত প্রতিটি ব্যক্তি, এমনকি সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনা যাবে। তিনি বলেন, পিটিআইয়ের ‘প্রকৃত স্বাধীনতার’ আন্দোলন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি করে।