চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের পণ্য অন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। যা ২০২১ সালের অক্টোবরে ছিল ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের তুলনায় ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৭.৮৫% রপ্তানি আয় কমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালের অক্টোবরে সরকারে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১২.৮৭% রপ্তানি আয় কমেছে। এই মাসে রপ্তানি আয় খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি ডলার। সেখানে রপ্তানি হয়েছে ৪৩৫ কোটি ৬৬ লাখ ডলার।
এর ফলে ১৩ মাস টানা রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর টানা দুই মাস তার আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি আয় কমলো।
ইপিবির তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) বিশ্ববাজারে দেশের পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার ডলারের। এই চার মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৭৪২ কোটি ইউএস ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩.২৫% কম। তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ের চেয়ে এ বছরের এই প্রান্তিকে ৭.০১% রপ্তানি আয় বেড়েছে।
ইপিএসের তথ্য মতে, একক মাসে হিসেবে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে। কিন্তু আগের দুই মাস জুলাই-আগস্টে আয় বেড়েছিল। সব মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এক হাজার ২৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ডলারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ।
২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম তিন মাসের রপ্তানি আয় ছিল এক হাজার ১০২ কোটি ১৯ লাখ ৫ হাজার ডলার। সেই তুলনায় তুলনায় অর্থবছর ২০২২ এ একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৩.৩৮%।
একই সময়ের মধ্যে গত বছরের চেয়ে পোশাক রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১০.৫৫%, নিটওয়্যার রপ্তানি ৭.১৪%, হোম টেক্সটাইল খাতে ৫.১৮%, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৭.৪২% রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষিপণ্যে ২৩.১৯%, পাট ও পাটজাত পণ্যে ১.৯৬% ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যে ৪৭.৬৬%।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ভালো খবর। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হল এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে কিনা। আমরা এই প্রতিকূল সময়েও প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার চেষ্টা করবো।”
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সমস্যাগুলোর কারণে ব্যবসায়ীরা একটি কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ার মতো নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর একজন পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেছেন, “গত মাসে (সেপ্টেম্বর) নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। ফলে রপ্তানি আয় যাই বাড়ুক তা অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা অক্টোবরেও নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির শঙ্কা করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “ক্রয়াদেশ কমছে। আমাদের এখন দেখার বিষয় এই প্রবৃদ্ধি আগামী মাসগুলোতে থাকে কি-না। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি নাও থাকতে পারে। এমন সংকীর্ণ প্রবৃদ্ধি থাকলেও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।”
সঙ্গে আলাপকালে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির কারণে অক্টোবরে রপ্তানি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। এই সময়ে তৈরি পোশাক খাতে ৩% বৃদ্ধি উৎসাহজনক। তবে আসন্ন বিশ্ব মন্দার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো বড় ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হবে বলে মনে হচ্ছে না।”
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে এই খাতে। এ বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
গত রবিবার বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেছিলেন, “বিদায়ী অর্থবছরে ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়। গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছে ৭.৫%। চলতি অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০% কমতে পারে। নভেম্বরে আরও হ্রাস পাবে বলে আমাদের আশঙ্কা।”