শ্রদ্ধা
শ্রদ্ধা আজ আসবে এখানে
সাজিয়ে রেখেছি ঘরদোর
আর হৃদয়ের উঠোনটুক পরিচ্ছন্ন করেছি
ফুল-চন্দন-ধূপ সব আয়োজন আছে
অস্ফুট মৃদু গান ঠোঁটে শুধু গুনগুন
মৌমাছি হয়ে তাই সারাদিন কাটে
শ্রদ্ধা আসবে
পেয়ালা ভর্তি ননীর মতো নরম ও সুন্দর স্পর্শ তার
পদ্ম পাতার মতো নাভি, চোখদুটি শরৎ-সরোবর
বেণী দুলবে, বেণী দুলবে
আমরা শুধু চেয়ে দেখব বেণীর বাহার
শ্রদ্ধা ঠিক হাঁসের মতো, সরস্বতীর হাঁস
আমরা অঞ্জলি নিয়ে বসে থাকি
পূজা হয়, মন্ত্রপাঠ হয় এখানে বারোমাস।
সবাই শ্রদ্ধাকে চেনে,
সবারই বুকে ঢেউ আছড়ে পড়েছে একদিন
সাঁতার কাটতে কেউ আর ঝাঁপায়নি জলে।
শ্রদ্ধা আসবে
অনেক অনেক জ্বরের পর
অনেক অনেক নির্ঘুম রাতে বাঁশি ভেঙে ফেলে
ক্ষয় হওয়া জ্যোৎস্নার আলো-আঁধারিতে
আমাদের বসন্তের চিঠিগুলি এখনও লেখা হয়
শুধু তাকে দেবো বলে….
প্রাচীন পুরাণ
অনেক অনেক মৃত্যু নেমেছে বাজারে
কাছাকাছি এসেও কেউ কেউ ছুঁয়ে যাচ্ছে
অনেকেই প্রেমে পড়ছে
অনেকেই পড়বো পড়বো করছে এবার
আমার বউ নিয়ন্ত্রণ আমাকে সাবধান করেছে
আমি বউকে গোপন রেখেই চলে যাচ্ছি বারে বারে
কত সিংহাসন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে
মিউজিয়ামে মিউজিয়ামে সিংহদের গর্জন
ইতিহাস সাজিয়ে রাখছে একে একে
মলিন পতাকারা উড়তে উড়তে
অদৃশ্যের দিকে উড়ে যাচ্ছে সবাই
ঈশ্বর বিশ্বাসের কাছে দীক্ষা নিয়ে
মাঝে মাঝে ঢোল বাজাচ্ছি
সবাই বাজাচ্ছে তাই আমিও তাদের মতো
বিভ্রান্ত আরও এক বাজনদার
স্মৃতিরা মৃত কাক হয়ে উঠোন আগলায়
উঠোনে ক্ষুন্নিবৃত্তি রাঙা চোখের ইশারা
রাজ্যজুড়ে শোকাঞ্জলি
তবুও আনন্দ মঞ্চ ঘিরে জড়ো হয়েছে প্রজারা
কুশীলব গান গেয়ে শোনাচ্ছে তাদের….
রাত্রিজীবী
গানের সুরে ধমক দিলে
যাব আমি কেমন করে?
ফুল তুলতে পারলাম না।
বৃষ্টি এল পথে
বৃষ্টির সাথে দেখা হল
আবেগ ছিল সাথে।
এ-শহর তো একটি খাঁচা
সব পথেই তার গোলকধাঁধা
বৃষ্টির হাতে বজ্র ছিল
বজ্রে আমি ভয় পাইনি
আবেগ শুধু কাঁপিয়ে দিল।
আজও আমি বিশ্রাম চাই
বিশ্রামের দুয়ার খুঁজি
কোথায় হিয়া?
ধমক শুধু, ধমকই ক্রিয়া!
আমার কোনো জমক নেই
বাক্যজল, জলবাক্যেই নদী
পার হতে গিয়ে রাত হল তাই
এখন রাত্রিজীবী।
আমাদের কোনো রাস্তা নেই
সবাই ভেঙে যাচ্ছি আর নিয়তির কথা বলছি সবাই
আমরা সারাজীবন ঘর বানাচ্ছি
আর জামরঙের জামদানি কিনে দিচ্ছি
আর মর্নিংওয়াক থেকে ফিরে
চিনি ছাড়া চা খেতে খেতে
ভাঙা জীবনকে মেপে নিচ্ছি
খুব পরিষ্কার আমাদের ভাবনা,
কিন্তু জীবনচক্র জুড়ে শুধু গর্ত
আর প্রতিটি গর্তেই একেকটি সর্প
বেরিয়ে আসছে, আবার ঢুকে যাচ্ছে,জিভ দেখাচ্ছে
আবার ফণা তুলছে, ফণা নামিয়ে নিচ্ছে
নিয়তি ওদের রাস্তা করে দিয়েছে
অথচ আমাদের কোনো রাস্তা নেই
সামাজিক যানবাহনগুলি প্রাচীনত্ব নিয়ে স্থবির হয়ে জেগে আছে
ক্ষীণ আয়ুরেখায় দু-একটা উড়ে আসা প্রজাপতি বসেছে
আগামীর স্বপ্নেরা সবাই শুঁয়োপোকা
আমরা কতটুকু অপেক্ষা করলে তবে সেতু পার হবো?
ভেঙে যেতে যেতে কাঁচা বাদামে আমাদেরও বদল করে নেবে!
উদ্বেগ
রাজনৈতিক মাঠে শুধু হত্যার নকশা
জিঘাংসার উদ্ধত পতাকারা ওড়ে
সব রাস্তা ঘিরে আছে অন্ধকার
অন্ধকারে সর্বনাশ আত্মগোপন করে
আমি ও আমার ভয় আর সংশয়
আর কোনো কোনো অবিশ্বাস যায়
মৃত্যু কি এখন খুব সস্তা নাকি তবে?
হয়তো আমরাই ঘাতকের দোকানে চা খাই!
প্রতিদিন ফুল কিনে নিজেকে দিই
নিজেকে পরাই মালা, আয়নায় দেখি
দুঃখ এবং হতাশারা যতই বাজাক বাঁশি
নিজেকে দেখাই চাঁদ। সারারাত নিজের পাশে থাকি।
মাঝে মাঝে হাওয়া ওঠে। হাওয়া ঝড় হয়।
আমাদের ঘরবাড়ি ওড়ে। হৃদয় উড়ে যায়।
কে কোথায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, অশ্রু পারাবার।
ডুবে যেতে থাকি একে একে, রাজনীতির হাঙরেরা যেন গিলে খায়!
আত্ম-অন্বেষণ
ঘুমানোর ভেতর, জাগরণের ভেতর, নীরবতার ভেতর
নিজেকে খুঁজে যাচ্ছি
আর সম্পর্কের ভেতর, ক্রোধ ও সহিষ্ণুতার ভেতর
নিজেকে চিনতে চাইছি
আমি শব্দটি এখন বিরক্তিকর, পিচ্ছিল, দুমুখো সাপ
বেগুনি রঙের জামা পরে বিকেলের রোদ পোহাচ্ছে
আমার শব্দটি চায়ের দোকান থেকে হাটে-বাজারে
বিপুল তর্কের ভেতর বেশ অহংকারী
মানব-বাগানে আমি ও আমার বলে কোনো ফুল নেই
শুধু দুমুখো পাইপ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দূষিত জল
পিপাসারা সবাই অচরিতার্থ, পার্থিব আসক্তি নিয়ে
ধূসর কাঙাল
কী উৎসব আসছে তবে?
‘আমি’র নতুন নতুন মুখ এবং ‘আমার’ গার্হস্থ্য সংবাদ
চিত্রনাট্যের স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হলে শূন্য উদ্যান শুধু
মরুভূমি পার হয় প্রজন্মের উট…