ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন, ইসলাম ধর্মাবলম্বী পশ্চিমবঙ্গবাসী এক তরুণ বাবা তাঁর একেবারেই বাচ্চা মেয়ের জন্মদিন পালন করছেন, সবাই যেমন করে থাকেন। এবং সবার মতোই মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত ঘরোয়া অনুষ্ঠানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। তাঁর বন্ধুরা যথারীতি সেই পোস্টটিতে মেয়েটিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছেন।
ধূমকেতুর মতো আচমকাই উদয় হয়ে, সৃষ্টিকর্তা সর্বশক্তিমান আল্লাহর এক বান্দার মন্তব্য– ‘শরীয়ত অনুযায়ী জন্মদিন পালন করা নিষেধ। শরীয়ত বিরোধী কাজ হারাম। তাই আমরা যারা না জেনে না শুনে করেছি সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করি। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মাফ করে দেবেন, কিন্তু জানার পর করলে হবে না। আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।’
বন্ধুটিও ধার্মিক, খুব সম্ভবত, যদিও ধর্মীয় গোঁড়ামি কম বলেই মনে হয়। কিন্তু ইসলামপন্থী ধার্মিকদের সমাজ আজও কট্টরপন্থী, গোঁড়া সাম্প্রদায়িক, এটি একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। সমাজে থাকতে গেলে সবাইকেই আপোস শুধু নয়, ধর্মীয় অনুশাসনের কাছে আত্মসমর্পণ করেই থাকতে হয়। দৃশ্যতই অপ্রস্তুত, ভীত বন্ধুটি কোনওরকমে জন্মদিন নয় ‘স্মরণ’ বলে আত্মরক্ষার চেষ্টা করলেন। দেখে লজ্জায়, ভয়ে আমার নিজের ভেতরটাও কুঁকড়ে গেল।
ধর্মপালন ছাড়া এই ছাগুদের জীবনে কোনও খুশি নেই, কোনও আনন্দ নেই। হারাম-হালাল, বেদাত-শিরক করতে করতেই এগুলোর ইহজাগতিক যাপন ফুরিয়ে যায়, বেহেশত-এর হুরপরীদের আকাঙ্ক্ষায়। নিজেদের জীবনে কোনও আনন্দ নেই বলেই অন্যদের আনন্দ-খুশি ওরা সহ্য করতে পারে না। এমন উদাহরণ অজস্র দেখেছি। সভ্যতার, মানবতার, শিশু ও নারীদের শত্রু এগুলো কেন যে শুধু শুধু বেঁচে থাকে আমার মাথায় ঢোকে না।
‘সনাতন’ হিন্দু বলে নিজেদেরকে ‘দাবি’-করা, ভদ্রবিত্ত পরিবারের সদস্য ‘শিক্ষিত’ তরুণ-তরুণীরাও আজকাল যা খেল দ্যাখাতে শুরু করেছেন, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পড়াশোনা’র উপর শেষ ভরসাটুকুও হারিয়ে যেতে বসেছে। এবং এই ‘শিক্ষিত’দের মধ্যে ইঞ্জিনিয়াররা শুধু নন, গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ-করা ‘অ্যালোপ্যাথিক’ ডাক্তাররা পর্যন্ত রয়েছেন।
এমনিতেই ‘শিক্ষিত’ ধার্মিকদের আমি স্থূলরুচির, বেরসিক, সাংস্কৃতিক রুচিবোধশূন্য শুধু নয়, অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রাণী বলে মনে করি; স্বভাবতই ‘বন্ধু’ হিসেবে ওঁরা একেবারেই নির্ভরযোগ্য নন।
‘পৃথিবীর গভীর গভীরতম অসুখ এখন!’
লেখকঃ কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়