হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে সতর্ক থাকতে দেশবাসীকে আলেম সমাজের আহবান জানিয়ে আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন স্বনামখ্যাত ৫১ জন আলেম ওলামা। হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতৃত্বকে ফেতনা সৃষ্টিকারী ও ধর্ম ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ৫১ জন আলেম ওলামা স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তারা এ কথা জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আলেম সমাজের নামে স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে হেফাজত। বিবৃতির উদ্দেশ্য বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের বিভিন্ন অপকর্ম এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে যেভাবে জনগণ ও আলেম-ওলামারা ফুসে উঠেছে তা আড়াল করা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে গত মার্চ মাসে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে ইসলাম রক্ষার নামে হেফাজতে ইসলাম ২৫-২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব মাদরাাসার কোমলমতি শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষকদের ভুল পথে প্ররোচনার মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ভাঙচুর, সরকারি অফিস-আদালত, ভূমি অফিস,পুলিশ স্টেশন, বিদ্যুৎ অফিস, শিশুদের বিদ্যালয়, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত যানবাহনে আগুন দিয়েছিল। তারা সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছিল। এরা মূলত ইসলামের শত্রু। মুখে ইসলামের কথা বলে, ধর্মের দোহাই দিয়ে আসলে হেফাজতে ইসলাম) রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যস্ত।
আপনারা জানেন হেফাজতে ইসলামের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা যিনি বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দা সবসময় নীতি-নৈতিকতার বক্তব্য দিয়ে গরম করে রাখতেন, তিনি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ব্যতীত অন্য একজন নারীকে নিয়ে রিসোর্টে সময় কাটাতে গেলে স্থানীয় জনরোষের মুখে পড়েন। পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি তার প্রকৃত স্ত্রীর নাম দিয়ে বুকিং করে এ নারীর সাথে সেখানে যান। তিনি উত্তেজিত জনগণের কাছে এ নারীকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও পরবর্তীতে সোশ্যাল-মিডিয়ায়-ভাইরাল হওয়া তার প্রকৃত স্ত্রীর সাথে ফোনালাপে নারীকে অন্য ব্যক্তির স্ত্রী দাবি করেন। হেফাজতের বর্তমান নেতৃত্ব এ ধরনের ভন্ড, নারী লোভী, দুশ্চরিত্র ব্যক্তির পক্ষ অবলম্বন করে বিবৃতি দেন যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘হেফাজতের এ নেতৃত্ব কিংবা যারা এ ভন্ড নেতৃত্ব অনুসরণ করছে, দেশের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তারা শুধুমাত্র ইসলামের শত্রু নয়, তারা দেশ ও দশের শত্রু। যখন তাদের সকল ভন্ডামি দেশবাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে তখন তারা এই পবিত্র রমজান মাসে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশবাসীকে ইসলামের দোহাই দিয়ে তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার জন্য মিথ্যা বিবৃতি আশ্রয় নিয়েছে। তাই আমরা আলেম সমাজ এ সকল ভন্ড ও ফেতনা সৃষ্টিকারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি মুসলমান ভাই-বোনদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।তারা কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি এদের বর্জনের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাব- এ সকল মতলববাজ, রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিদৃষ্ট আলেমদেরকে বর্জনের জন্য। যাতে তারা আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করতে না পারে।
বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, রাসুল (সা.) জীবদ্দশায় ইসলাম ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করতে গিয়ে অন্য ধর্মের মানুষদের প্রতি অপমান-আঘাত, বাধার শিকার হয়েও কোনদিন তাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেননি। বরং সব সময় তাদের প্রতি সহমর্মিতা, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে দশে হেফাজতে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে যেভাবে অন্য ধর্মের মানুষের উপসনালয়ে, তাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে তা আমাদের রাসুলের দেখিয়ে যাওয়া পথের পরিপন্থী। তাই এরা কখনোই প্রকৃত মুসলমান হতে পারে না। এরা দেশ ও দশের শত্রু। হেফাজতে ইসলাম হচ্ছে দেশে ফেতনা সৃষ্টিকারী ফাসেকের দল। এদের হাতে আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম নিরাপদ নয়। তাই আমরা আলেমসমাজ এসব ফেতনা সৃষ্টিকারী ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি মুসলমান ভাই-বোনদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী আলেমদের মধ্যে রয়েছেন-মাওলানা মো. ইসমাঈল হোসাইন, শাইখুল হাদিস মাওলানা মোঃ শাহাদাত হোসেন, কাজী মাওলানা শাহ মো. ওমর ফারুক, ডা. প্রফেসর আল ইমরান, মাওলানা মোঃ মুফতি সাহাবুদ্দিন ভূইয়া, মাওলানা মো. মুহিবুল্লাহ, মাওলানা মোঃ গোলাম মোস্তফা, মাওলানা মোঃ আব্দুল আজিজ, মাওলানা মো. মোস্তফা চৌধুরী, মাওলানা মোঃ ইলিয়াস হোসাইন, মাওলানা মোঃ একলাছুর রহমান, মাওলানা মোঃ মাহফুজুর রহমান, মাওলানা মোঃ নুরে আলম সরকার, মাওলানা মোঃ শামসুল হক, মাওলানা মোঃ আবুল খায়ের মজুমদার, মাওলানা মোঃ নুরুল আমিন পীর সাহেব ভাঙ্গা, মাওলানা মোঃ আফলাতুল কাউছার, হাফেজ মাওলানা মোঃ জহিরুল ইসলাম খান, মাওলানা মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন, মাওলানা মোঃ এনামুল হক সিদ্দিকী, মাওলানা মোঃ মনির হোসাইন চৌধুরী, ডঃ মোঃ আবু বক্কর ছিদ্দিক, মাওলানা মোঃ হারুনুর রশিদ মিরন পীর সাহেব, মাওলানা মোহাম্মদ মোছাদ্দেক, মাওলানা মোঃ ওসমান গনি, মাওলানা মোঃ নুরুল ইসলাম, মাওলানা মোঃ রেজাউল করিম, কাজী মাওলানা মোঃ তাজুল ইসলাম, মাওলানা হাফেজ মোঃ ফারুখ আব্দুল্লাহ, মাওলানা মোহাম্মদ মনজুররুল হক, মাওলানা মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, মাওলানা মোহাম্মদ দৌলতখান, মাওলানা মোঃ মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মোঃ আজমির হোসাইন, মাওলানা মোঃ হারুনুর রশিদ, মাওলানা মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, এড. মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মোসা. আফসানা পারভীন মনা, মোসা. জয়নাব আরা ফেরদৌসী, মোসা. রোকেয়া বেগম, মোসা. ইসরাত জাহান লামিয়া, মাওলানা মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা মোঃ আনোয়ারুল হক, মাওলানা মোঃ দেলোয়ার হোসেন ফরিদপুরী, মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান, মাওলানা মোঃ আলমগীর হোসেন, মাওলানা মোঃ ইকবাল হোসেন, মাওলানা মোঃ গোলাম মোস্তফা, মাওলানা মোঃ রফিকুল ইসলাম ও মাওলানা মোঃ মিজানুর রহমান।