বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণের শ্রেণিবিন্যাস নীতি শিথিল করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হলো না। এই নীতি শিথিল করা সত্ত্বেও বেড়েই চলেছে খেলাপি ঋণ। এ বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) নন-পারফর্মিং লোন (এনপিএল) অর্থাৎ খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকায়।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছিল।
অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংকাররা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ পুনর্নির্ধারণ নীতি এবং শ্রেণিবিন্যাসের নিয়মগুলো সহজ করাসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু এই পদক্ষেপগুলো প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে এবং ব্যাংকিং খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের অন্যতম অর্থনীতি পরামর্শক জাহিদ হুসেন বলেন, “জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ফিরে আসায় চলতি বছরের শুরু থেকেই খেলাপি ঋণ বাড়তে শুরু করেছে। ঋণ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি নেই। হয়তো ছোট ঋণদাতারা সামান্য কিছু পরিশোধ করছেন কিন্তু বড় ঋণগ্রহীতাদের এ বিষয়ে রা নেই।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ
২০১৯ সালের শুরুতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, “খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না।”
সেসময় ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের (এসওবি) খেলাপি ঋণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে ৯% সরল সুদে ১০ বছরের জন্য ২% ডাউন পেমেন্ট সুবিধা ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। পরের বছর ২০২০ সালে কিছুটা কমে খেলাপি ঋণ। কমে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকায়। কিন্তু ২০২১ সালে তা আবার বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৩১৩ কোটি টাকায়।
এ বছরের জুনের পরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায়। অর্থাৎ সাড়ে তিন বছরে বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
গত ৩০ জুন পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকের। এই ব্যাংকের খেলাপি ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা (মোট ঋণের ২৫%)। সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১৮%)। অগ্রণী ব্যাংকের ১০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১৭%)। রূপালী ব্যাংকের ৬ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা (মোট ঋণের ১৭%)।
বাংলাদেশ ডেপলোভমেন্ট ব্যাংকের (বিডিবিএল) খেলাপি ঋণ ৩৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। যার পরিমাণ ৭৬৮ কোটি টাকা। মোট ঋণের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের খেলাপির হারও বেড়েছে। ব্যাংকটির এখন খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।
(সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন)