ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৪৩ বছরে প্রথম শাসকদের নরম সুর

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

ইরানে ইসলামি বিপ্লবের ৪৩ বছরের মধ্যে এই প্রথম নরম সুর বের হলো দেশটির বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের কণ্ঠ থেকে। বিচার বিভাগের প্রধান কট্টরপন্থি হিসেবে পরিচিত গোলাম-হোসেইন মোহসেনি এজেই বলেছেন, কোনো ভুল করে থাকলে তারা সংশোধনে যেতে প্রস্তুত।

নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলমান আন্দোলন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে সোমবার খুবই সতর্ক ছিলেন এজেই। তবে মাত্র দিন কয়েক আগেই বিক্ষোভকারীদের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছেন তিনি।

ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমি প্রস্তুত। চলুন কথা বলি, আমরা যদি ভুল করে থাকি, সেগুলো সংশোধন করতে পারি।’

অবশ্য আলোচনার এই প্রস্তাব দিতে তিনি সম্ভবত দেরি করে ফেলেছেন। সাধারণ বিক্ষুব্ধ ইরানিরা তাকে বিশ্বাস করছে না।

- বিজ্ঞাপন -

২০১৭ সাল থেকেই ইরানের বিচার বিভাগ হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে জেলে পাঠিয়েছে এবং অনেকেই ন্যায়বিচার পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হাজারও মানুষ মারা গেলেও সে সংক্রান্ত মামলা এখনও অন্ধকারে রয়ে গেছে।

এজেই-এর সোমবারের বক্তব্যে পরিবর্তনটি একদম পরিষ্কার। ইরানের কোনো জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা বা শাসনব্যবস্থার উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তার এমন নরম সুরে বক্তব্য দেয়ার নজির নেই।

একই দিনে চলমান ইস্যুতে কথা বলার অনুমতিপ্রাপ্ত ধর্মীয় নেতারা সংস্কারবাদী দৈনিক ইতেমাদকে বলেছেন, কর্মকর্তাদের (সরকারি) বাবার মতো আচরণ করতে হবে এবং তাদের সন্তানদের বুঝতে হবে।

অন্যদিকে সংস্কারপন্থি ব্যক্তিত্ব জালাল জালালিজাদেহ রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম নামহ নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে সরকারকে দ্রুত জনগণের সঙ্গে সংলাপ শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বর্তমান বিক্ষোভে জনগণ তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চায়, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরপরই কেড়ে নেয়া হয়েছিল। নৈতিকতা পুলিশ তখন থেকে লাখ লাখ নারীকে রাস্তায় অপমান করে আসছে।

- বিজ্ঞাপন -

জালালিজাদেহ সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ‘তারা (কর্তৃপক্ষ) জনগণের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে ব্যর্থ হলে সমাজ আরও দ্বিমুখী হয়ে উঠবে এবং এটি কারও স্বার্থ রক্ষা করবে না।’

তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, শাসকদের নিজেদের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, তাদের ভোট ও মতামতকে সম্মান করতে হবে এবং তাদের দাবি শুনতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ইরানের নতুন প্রজন্মের চাহিদা আগের প্রজন্মের চাহিদার থেকে আলাদা।

- বিজ্ঞাপন -

ইতেমাদ পত্রিকা ইরানি সমাজবিজ্ঞানী আসিফ বায়াতকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘বর্তমান বিক্ষোভে জনগণ তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চায়, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরপরই কেড়ে নেয়া হয়েছিল। নৈতিকতা পুলিশ তখন থেকে লাখ লাখ নারীকে রাস্তায় অপমান করে আসছে।’

প্রায় এক দশক আগে হওয়া আরব বসন্তের কথা তুলে ধরে আসিফ বায়াত বলেন, ‘ইরানে সরকার ও সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে ব্যবধান তিউনিশিয়া বা মিসরের মতো অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে বেশি।’

তিনি ইরানে চলমান বিক্ষোভকে একটি সর্বব্যাপী আন্দোলন হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যেখানে সামাজিক শ্রেণি ও জাতি নির্বিশেষে সব ইরানি একত্রিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘তিউনিশিয়া ও মিসরের জনগণের মতো ইরানের জনগণও চায় সরকার তাদের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুক।’

বায়াতের মতে, ইরানের আন্দোলনের সঙ্গে অন্য আরব দেশের আন্দোলনের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো, ইরানে কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা।

এর আগে কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।

মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুকটুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ।

মাহসা আমিনির মৃত্যুর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে বালুচ কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার শহরের পুলিশপ্রধানের হাতে ওই কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে সেখানেও চলছে প্রবল বিক্ষোভ। কেবল ওই প্রদেশেই এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ জন।

ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকারঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতিত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।

এদিকে চলমান আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন তেল শ্রমিকরা।

তেল কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের সংগঠন সোমবার বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলাম, আমাদের সচেতন এবং সাহসী কর্মীরা জনগণের ওপর দমনপীড়ন ও হত্যার মুখে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকবেন না। তারা জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।

‘এটি শুরু হয়ে গেছে। আমরা সারা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!