তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা এতদিন ধরে ছিল মধ্যম আয়ের দেশ, তবে আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণের আশায় এখন এ দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র বান্দুলা গুনাবর্ধনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
২০২১ সালে দেশটির মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৩ হাজার ৮১৫ ডলার। এই আয়ে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাংকের স্বীকৃতি পায় দ্বীপরাষ্ট্রটি।
তবে চলতি বছরে মাথাপিছু কমেছে অনেক- এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভা বিশ্বব্যাংকের তালিকায় এই দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র বন্দুলা গুনাবর্ধনে।
তিনি বলেন, গুরুতর আর্থিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা আমাদের জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কাকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হলে তহবিল পাওয়া সহজ হবে।
এ কারণে শ্রীলঙ্কাকে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান বন্দুলা গুনাবর্ধনে।
অবশ্য বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে এখনও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোনো দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৫ ডলার বা তার নিচে হলে তাদের বলা হয় নিম্ন আয়ের দেশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পর্যন্ত সবাই মধ্যম আয়ের দেশ।
আর আয় ১ হাজার ৪৬ ডলার থেকে ৪ হাজার ১২৫ পর্যন্ত হলে তা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হয় যখন মাথাপিছু জাতীয় আয় থাকে ৪ হাজার ১২৬ থেকে ১২ হাজার ৭৩৬ ডলার পর্যন্ত। এর চেয়ে বেশি হলেই হবে উচ্চ আয়ের দেশ।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ রাজের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে বিপর্যস্ত জনজীবন।
মূল্যস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারে। লোডশেডিং; খাবার, ওষুধ ও জ্বালানিসংকটে ক্ষোভ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
গত কয়েক বছর শ্রীলঙ্কার রাজনীতি বেশ টালমাটাল ছিল। এই অবস্থায় দেশটির বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নাটকীয়ভাবে কমে আসে। এই প্রেক্ষাপটে সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিকে দায়ী করেন বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভরতদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের সংঘর্ষে প্রাণ গেছে পুলিশ সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজপাকসে ও তার ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। এসেছে নতুন নেতৃত্ব।