রুশ সেনাবাহিনী সোমবার সকালে ইউক্রেনের একাধিক শহরে এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইউক্রেনের ইউক্রেনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী হান্না মালিয়ার বলেছেন, রাশিয়া ৮৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ৪৩টি ভূপাতিত করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় সংবাদমাধ্যম কিয়েভসহ অন্তত ১৬টি শহরে হামলার কথা বলছে। রাজধানীতে একটি জনপ্রিয় পার্ক ও একটি কসমেটিকসের গুদামে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
ব্যাপক আকারের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শনিবার ক্রিমিয়ার কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণের প্রতিশোধ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এই সেতুই রাশিয়াকে ক্রিমিয়ার সঙ্গে সংযোগ করেছে। বিস্ফোরণের ফলে দখলকৃত খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া অঞ্চলে বেসামরিক যান চলাচল ও সামরিক রসদ পরিবহন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে, ইউক্রেনের সিক্রেট সার্ভিস এসবিইউ এই হামলা চালিয়েছে।
যে কসমেটিকস গুদামে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে সেটির মালিক ছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি কোম্পানি ল্যামেল। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইউক্রেনীয় উদ্যোক্তা নাতালিয়া আইরোমেঙ্কো। শনিবার কার্চ সেতুতে হামলার পর ল্যামেল-এর অফিসিয়াল ইন্সটাগ্রামে একটি স্টোরি প্রকাশ করা হয়। তাতে জ্বলন্ত সেতুর একটি ছবি ছিল।
রবিবার ক্রেমলিনপন্থী সংবাদমাধ্যম লাইফ নিউজ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে ল্যামেল-এর ইন্সটাগ্রাম পোস্ট নিয়ে। সোমবার রাশিয়ার স্বতন্ত্র অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাজা নিশ্চিত করেছে কিয়েভে ল্যামেল-এর গুদামে আঘাত হেনেছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে ৪১টি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতে সক্ষম হয়েছে।
কিয়েভের তারাস শেভচেঙ্কো বুলেভার্ডে যখন বেসামরিকদের গাড়ি পুড়ছিল তখন রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা হামলা উদযাপন করছিলেন।
কমসোমোলস্কায়ারা প্রাভদা রেডিও-এর সকালের একটি অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সের্গেই মারদান টেলিগ্রামে নিজের অফিসিয়াল চ্যানেলে লিখেছেন, ক্রিমিয়ার সেতু বিস্ফোরণের কয়েক ঘণ্টা পর হামলা নিয়ে যে ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে ইউক্রেনের ডাকসেবা আমার সন্দেহ আছে তার খুব দ্রুত কিয়েভ, লভিভ, ডনিপ্রোপাত্রভস্ক, জিতোমির, ভিনিতসা, তারনোপিল, খারকভ, ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক, খেমেলনিতস্কি, ভিশগোরোদ ও ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি স্থানের ছবি দিয়ে নতুন কিছু প্রকাশ করতে পারবে।
রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইউক্রেনের সামগ্রিক মেজাজ ছিল ভিন্ন। কিয়েভ, ওডেসা ও লভিভের বাসিন্দারা মার্কিন সাময়িকী নিউজউইককে বলেছেন, তাদের মনে ভয় থেকে ক্ষোভসহ অনেক কিছু অনুভুত হচ্ছে। গত কয়েক মাসের মধ্যে তারা বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, কিয়েভের বাসিন্দারা শহরের মেট্রো স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নিতে ছুটছেন।
ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকরা নিউজউইককে দেশের আত্ম-প্রতিরক্ষার উদ্যোগ এবং রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভয় না পাওয়ার অঙ্গীকারের কথা বলেছেন।
ইউরি নামের ব্যক্তি বলেন, তারা আমাদের ভয় দেখাতে পারবে না। তারা কেবল আমাদের শক্তিশালী করবে।
ওডেসার সের্গেই বলেন, শুধু বাইডেন (মার্কিন প্রেসিডেন্ট)-কে বলে দিনে আমাদের ভালো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠাতে।
স্থানীয় সময় দুপুরের কয়েক মিনিট পর যখন বিমান হামলা সংকেত বন্ধ হয়ে যায় তখন কিয়েভের স্বাভাবিক জীবন কমবেশি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।
সরকারি পর্যায়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা মিখাইল পডোলিয়াক টেলিগ্রামে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ইউক্রেনীয় শহরগুলোগুলোর প্রাণকেন্দ্রে বড় ধরনের রকেট হামলা প্রমাণ দিচ্ছে রুশ শাসকদের সন্ত্রাসী চরিত্র। মুখোশ খুলে গেছে: এটি পরিকল্পিতভাবে বেসামরিকদের হত্যা ও বেসামরিক অবকাঠামোর ধ্বংস।
পডোলিয়াক আরও লিখেছেন, প্রশ্নাতীতভাবে এটি হলো মুমূর্ষু পশুর খিঁচুনি। তারা রণক্ষেত্রে লড়াই করতে পারছে না। ফলে রকেট দিয়ে বেসামরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
সূত্র: নিউজউইক