পাঁচ পর্বের সমাজ-ভাবনা; কোভিড-১৯ এর দায় কার! (দ্বিতীয় পর্ব)
এই সভ্য জগতে মানুষে মানুষে নাকি কোনো ভেদাভেদ নেই কিন্তু ভয়াল করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই সমাজের শিকড়ের বাস্তব রূপ! যাদের নেই ঘরে বসার ঠাঁই,তাদের পিটিয়ে গৃহবন্দী! ‘যাদের আছে ভুরি ভুরি’ তাদের ঢোল পিটানি দানের প্রশংসায়,অবাধ গণসংযোগ সুরক্ষায় পাহারারত! যাদের আক্রান্তের হার বেশি তারাই গা ঘেষাঘেষি ফটোসেশন,অন্যান্যরা সামাজিক দূরত্ব। হায়রে, আজব কারবার! করোনা সংক্রামক রোধের অজুহাতে; অগ্রজ মনিবকে,যুব চাকর করে লাঞ্ছনা! কান ধরে উঠবস! রথ চলেছে উল্টো পথে! জনগণের কি করার আছে! তাই,সভ্য সমাজের কাছে করে নিবেদন “চির সুখীজন ভ্রমে কি কখন,ব্যথিত বেদন বুঝিতে পারে! কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে…’’
উন্নত বিশ্বে,একই খেলা একটু ভিন্ন রূপে; কথন-লিখন-চলনে স্বতন্ত্রতা ব্যক্তি মানুষের সামষ্টিক পরিচয়,তাই নীতি বাক্য বই-পত্র-কাগজে-কলমে-পাথরে খোদাই করে লেখা থাকলেও বাস্তবে আশঙ্কাজনক ভাবে তা অদৃশ্যমান…! উন্নত দেশের মানুষের মধ্যে জাতি-বর্ণ-ধর্মে শ্রেণী বিভাজন প্রকট আকারে বিদ্যমান! যা প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত হাড়ে হাড়ে ঠিক পায়…! বিশ্বব্যাপী অদৃশ্য করোনা সংক্রামক ব্যাধির মতো,সব সভ্য সমাজেই যা বিরাজমান। ফলশ্রুতিতে,জনগণের সেবক হয়েছে প্রভু! চাকর হয়েছে মনিব! রথ চলেছে উল্টো পথে জনগণের কি করার আছে। ‘কোনো এক উল্টো রাজা, উল্টো বুঝলি প্রজার দেশে, চলে সব উল্টো পথে, উল্টো রথে, উল্টো বেশে’ তাইতো, বিশ্বায়নের কুপ্রভাবে…, দুঃখের সংবাদ এখন হাসিমুখে গণমাধ্যমে প্রকাশ…!
অদৃশ্য কোভিড-১৯ দংশেনির দুঃসংবাদ প্রচার মাধ্যমে ক্ষণে ক্ষণে আপডেট উপস্থাপন! মুহূর্তে আতঙ্ক Exponential হারে বিশ্বময় চাউর! যা ভার্চুয়াল জগতে ঘুরেফিরে স্থায়ী আবাস গড়ে মনভয়! কুফলে, বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতেই এখন করোনা জুজুর ভয়..! বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ মহানগর ঢাকা,ভর সন্ধ্যায় সুনসান নিস্তবদ্ধতায় ঢাকা! মনে হয়, কোনো মৃত্যুপুরীর যমালয়ে বসবাস! গুজবের প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত দিশেহারা মানুষের দিগি¦দিক ছোটাছুটিতে বিধ্বস্ত…! তখন, চক্ষু বন্ধনসহ সারা অঙ্গ আষ্টেপৃষ্টে বাঁধা বন্দী দাস, কলুর বলদের গন্ডিভূত পিচ্ছিল চক্রাকার পথটিও বিধ্বস্ত-অবরুদ্ধ! আদিম উন্মাদনায় বলির পাঠারা কিংকর্তব্য বিমূঢ়; পরম মমতায় লালন-পালনকারীও আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে নিয়ে চলছে,খর্গ হাতে মাটাম পানে,তাদের চোখে-মুখে মাংস ভক্ষণের চকচকে লোভ! নিবিড় পরিচর্চ্চা কেন্দ্রে জায়গা নেই,অপেক্ষামান রোগীর পরিবার অসহায়ভাবে আইসিউতে থাকা অন্য মানুষের মৃত্যু কামনা করে!
এখন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস-বিশ্বাসে বিশ্বময় করোনা বিষ! পরাধীন গোটা বিশ্বের মনুষ্য জাতি! ‘সাত গুটি বাঘ বন্দী’ খেলার মত দুর্বল নগন্য অনুজীবের সম্মিলিত শক্তির কাছে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের ক্ষণে-ক্ষণে ক্ষণিকের জীবন ও মানবিকতার পরাজয়! যা হতে মনুষ্যকূল বাঁচতে-বাঁচাতে সাধারণ মানুষ একা একা অবরুদ্ধ! মানুষই একমাত্র প্রাণী,যাকে জন্ম হতে মৃত্যু অবধি, পরস্পর নির্ভরতায় চলতে হয়। তাইতো সমাজবদ্ধ জীব মানুষ কাঁহাতক অবরুদ্ধ খাঁচায় নিঃসঙ্গ থাকতে পারে? এভাবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতায় আর কতদিন!
করোনা হতে ব্যক্তিগত সুরক্ষায় বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ,বর্তমানে সঙ্গ নিরোধ-সামাজিক দূরত্বে অবরুদ্ধ! সর্বস্তরের মানুষের মনে এর থেকে বেশী আতঙ্ক কাজ করছে। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন-জীবিকার উপর তার কুপ্রভাব! বেকারত্বের অভিশাপ মোকাবেলা করবে কিভাবে! শক্তিশালী রুপে আবার করোনা আবির্ভাব! ভবিষ্যৎ দু:শ্চিন্তার কালো মেঘের ঘনঘটা…! অদৃশ্য করোনা থেকে,নিম্নবিত্ত মানুষের বাস্তব জীবনে…“ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” অন্যদিকে অতি ধনীদের পুঁজি আরো বৃদ্ধি হচ্ছে। ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের সফলতা ক্ষুণ্ণ, শাঁখের করাতের মতোই অবস্থা! অকুল সাগরের দিকভ্রান্ত নাবিক, এক নরক যন্ত্রনার অস্তিত্ব সংকটে দিশেহারা, দিনে দিনে মানসিক রুগি বনে যাচ্ছে। জীবনের জন্য জীবিকায় প্রধান হয়ে যাচ্ছে কুফল করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাচ্ছে-
এ হতে পরিত্রাণে তবে কি বিদ্রোহ! কার সাথে! অদৃশ্য ছায়ার সাথে কিভাবে যুদ্ধ করতে হয়,তা তো এখনো মানুষের অজানা! ‘প্রেম-ভালোবাসা-বিদ্রোহ-যুদ্ধ পরিকল্পনা মাফিক চলে না বিধায়, এগুলো কোনো নিয়ম-কানুন মানেনা। বর্ণচোরা নীরব ঘাতক কোভিড-১৯ এর মতোই…, তাই এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের যত ভয়!
ঠিক তাই, ‘আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি’ কিন্তু এখন আধুনিক বেনিয়ারা সব চৌকস। সব খোঁজ খবর না রাখলে ব্যবসা নাকি লাটে উঠে। একটার সাথে অন্যটার সংযোগ! যেমন; মহামারীর সাথে দুর্ভিক্ষ-দুর্যোগ সম্পর্কযুক্ত কেন,তা বিশ্ববিজ্ঞ জনেরা ভালো বলতে পারেন। সাধারণ মানুষ হিসেবে বাস্তবায়নে সুফল প্রত্যাশা করে। তার জন্য দরকার নীতিনির্ধারকদের আগাম পরিকল্পনা! রাজনৈতিক স্বদেচ্ছা ও দূরদর্শিতা ছাড়া কোন কিছু আশা করা অলিক কল্পনা। তাইতো এই মহা দূর্যোগের মধ্যে হানা-হানি কাটা-কাটি থেমে নেই। নারী নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি। এই জটিল পরিস্থিতিতে পরাশক্তিদের যুদ্ধের ঢামাডল,বিশ্ব মোড়লী পরিবর্তনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত-
এই জটিল পরিস্থিতিতে সমাজকর্মীদের ভূমিকায় বা কী; অনুজীব করোনা বা কোভিড-১৯ এক ধরনের পরজীব। অনেকটা পরগাছার মত,অন্যের উপর নির্ভর করে তার বেঁচে থাকা। অনুকূল পরিবেশ পেলে তরতর করে বেড়ে উঠে জেকে বসে অথবা অগ্রিম প্রতিরোধ হওয়ায় নির্মূল হয়। সাবধান-সতর্কতা ও সচেতনতায় মূল বৃক্ষটির একমাত্র সুরক্ষা। নচেৎ; বিষবৃক্ষ করোনার ক্ষুদে চারা,ধীরে ধীরে মহীরুহ হয়ে, একসময় করোনা রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে গোটা বৃক্ষটিকেই গ্রাস করে!
(চলবে…)