বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় একের পর এক লাশ ভেসে উঠছে। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত আরও ১৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ জনে। এখনও নিখোঁজ প্রায় ২০ জন।
পঞ্চগড়ের মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থাপিত জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৫১ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে গতকাল রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছিলো ৫০ জনের মৃতদেহ।
এখন পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে ২৯ জন নারী, জন ২০ শিশু ও পুরুষ ১৬ জন রয়েছেন।
করতোয়া নদীর তীরে এবং তথ্য কেন্দ্রে এখনো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন নিখোঁজ ব্যাক্তিদের স্বজনরা। তারা চাইছেন জীবিত অথবা মৃত স্বজনদের খোঁজ। নদীতীরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ভীড় করে আছেন উৎসুক জনতা।
ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিটের ডুবুরি দল এবং স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছে। নৌকা ডুবিতে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পঞ্চগড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এর আগে গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মহালয়া পুজা দিতে নৌকা বেয়ে নদী পাড় হতে গিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনাটি ঘটে। এর মধ্যে ঘটনার প্রথম দিনে ২৫ জনের ও দ্বিতীয় দিনে ২৫সহ ৩য় দিনে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত যেসব মৃতদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- হাশেম আলী (৭০), শ্যামলী রানী (১৪), লক্ষ্মী রানী (২৫), অমল চন্দ্র (৩৫), শোভা রানী (২৭), দীপঙ্কর (৩), প্রিয়ন্ত (২.৫), রুপালি ওরফে খুকি রানী (৩৫), প্রমিলা রানী (৫৫), ধনবালা (৬০), সুনিতা রানী (৬০), ফাল্গুনী (৪৫), প্রমিলা দেবী, জ্যোতিশ চন্দ্র (৫৫), তারা রানী (২৫), সানেকা রানী (৬০), সফলতা রানী (৪০), বিলাশ চন্দ্র (৪৫), শ্যামলী রানী ওরফে শিমুলি (৩৫), উষশী (৮), তনুশ্রী (৫), শ্রেয়সী, প্রিয়ন্তী (৮), সনেকা রানী (৬০), ব্রজেন্দ্র নাথ (৫৫), ঝর্ণা রানী (৪৫), দীপ বাবু (১০), সূচিত্রা (২২), কবিতা রানী (৫০), বেজ্যে বালা (৫০), দিপশিখা রানী (১০), সুব্রত (২), জগদীশ (৩৫), যতি মিম্রয় (১৫), গেন্দা রানী, কনিকা রানী, সুমিত্রা রানী, আদুরী (৫০), পুষ্পা রানী, প্রতিমা রানী (৫০), সূর্যনাথ বর্মন (১২), হরিকেশর বর্মন (৪৫), নিখিল চন্দ্র (৬০), সুশীল চন্দ্র (৬৫), যুথি রানী (০১), রাজমোহন অধিকারী (৬৫), রুপালী রানী (৩৮), প্রদীপ রায় (৩০), পারুল রানী (৩২), প্রতিমা রানী (৩৯) ও শৈলবালা।
এর আগে রবিবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহালয়া উপলক্ষে জেলার বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় করে বোদার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় নদীর মাঝ পথে উল্টে যায় নৌকাটি।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিপঙ্কর রায়কে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবগুলো মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের সৎকারে ২০ হাজার এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
নৌকাডুবিতে হতাহতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য জরুরি তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে ৬ নম্বর মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে।