হিজাব ঠিকমতো না পরার অভিযোগে নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটকের পর ইরানে মাহসা আমিনির (২২) মৃত্যুর পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান সরকারের ক্রমাগত “হুমকি ও রক্তচক্ষু” উপেক্ষা করে দেশটির ৮০টিরও বেশি শহরে বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে সরকার বিক্ষোভ দমাতে গণগ্রেপ্তার, ইন্টারনেট সেবা নিয়ন্ত্রণসহ নানারকম নিপীড়নমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ দেশটির অধিকার সংস্থাগুলোর।
মাহসার মৃত্যুর প্রতিবাদে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে “ইরান হিউম্যান রাইটস” (আইএইচআর)। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
ইরান হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মোহাম্মদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সিদ্ধান্তমূলক এবং ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদকারীদের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেছেন, “ভিডিও ফুটেজ এবং আমাদের কাছে আসা মৃত্যু সনদগুলো থেকে দেখা গেছে যে, মিছিলে সরাসরি বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে।”
ইরান হিউম্যান রাইটস বলেছে, ইরানের অন্তত ৮০টি শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, রাজধানী তেহরানের আশপাশের শহরগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে। এর আগে সরকার-সমর্থকেরাও সমাবেশ করেছে। ইরান সরকার বিক্ষোভকারীদের জমায়েত ঠেকাতে তেহরানে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইরান হিউম্যান রাইটস আরও জানিয়েছে, ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর তার জন্মস্থান কুর্দিস্তান থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। কিন্তু এখন তা কেবল কুর্দিস্তানে সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর পোশাকবিধি না মানার অভিযোগে মাহসা আমিনিকে তেহরান থেকে গ্রেপ্তার করেছিল ইরানের নৈতিকতা পুলিশ। তিন দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
তার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযোগ ওঠে, পুলিশের নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর শুরু হয় বিক্ষোভ।
অবশ্য এই বিক্ষোভ দমাতে ইরান সরকার “কঠোর” অবস্থানে রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে একাধিকবা বলে আসছেন, ইরানের চলমান বিক্ষোভ অগ্রহণযোগ্য।
দেশটি সোমবার তেহরানে নিযুক্ত নরওয়ে ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমমে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এবং নরওয়ের সংসদের প্রেসিডেন্ট চলমান বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করায় তাদের তলব করা হয়।