।।এক।।
যমুনা ডুবে যায়
শরীর জুঁড়ে থৈ থৈ জল
বাতাস কার গন্ধে বিভোর
বাঁশী কাঁদে নিশি ভোর
চাঁদ ডুবে গেলে
তোমার অভিসার।
হৃদয়ের গোপন খেলায়
তুমি লাল রাবার বল-
লীলাবতী তুমি, তুমি বৃন্দাবন
ঝড়ের রাতে হৃদয় বুনে
শ্রীমতি রাঁধিকা কীর্তন।
।।দুই।।
চুলে গাঁথনি ময়ূর পালক
তবু খোলাচুলে হাওয়ায় সৌরভ
কৃষ্ণের বাঁশী ঘুমোতে যায়
তুবু ঠোঁটে তোমার শরীরের সুর –
ঈশ্বরও মগ্ন হয় নগ্নতায় তোমার
চিবুকে লীনহয় মেঘমালা
টলমলে যমুনার জল;
তোমাকে জপকরি শ্রীমতি রাই
পূজোঘরে কৃষ্ণ থাক
পুরুষ শরীর তোমাকে চাই।
।।তিন।।
অন্ধকার গাঢ় হলে
আমি পূজাঁরী তুমি বৃন্দাবন-
আঁচলে মিকিমিকি তারারা
চুপ অভিসারে ব্রা থেকে
উকিঁ দেয় চাঁদ;
ভ’রা কাঁটাল স্রোতে
ভেসে যাই নির্জন যমুনায়-
স্বর্গ থেকে তুমি
তুমিই স্বর্গ
নরকের আগুনেও পুড়তে রাজি
যদি সাঁতারের নদী হও
কিংবা ভূমিহীন চাষার নোনাভূমি।
।।চার।।
অভিধান পরক্রিয়া বলে
অথচ তোমাকেই চেয়েছি
গতজন্মের জ্যোৎস্নায় পূজায়-
দোলে ওঠো দোলনচাঁপা
শুভ্রঘ্রাণে ঝরে ঝরে পড়া চাঁদ
কুঁড়তে এসে
আঙুল ছোঁয় তোমার আঁচল অতল
টলমলে দিঘী ঘিরে পরীদের স্নাণস্মারক;
ঠোঁট ঠোঁট মেখে
বুনে যাই বৃন্দাবন
তোমার শরীর জুঁড়ে ভরা যমুনা
রাঁধা রাঁধা উৎসব।
।।পাঁচ।।
“রাই জাগো গো
জাগো শ্যামের মনমোহিণী
বিনোদিনী রাই”
তুমি বরং ঘুমাও-
তোমার সুডৌল স্তনে নেমে আসুক চাঁদ
টলমলে জ্যোৎস্নার নির্জনতায়
নদীর ছলাৎ সংগীত;
ইচ্ছে হলে জেগে ওঠো
আপন মনের মোহনায়-
বিনোদের ইনি হতে যাবে কেন তুমি
বিনয়ী হই তোমার নগ্নতায়
মগ্নতায় মুগ্ধ বাতাসে
তোমার নাভীমূলের মৌসুমি ঘ্রাণ;
ঝরে ঝরে পরে বেঁলফুল
ফটিক ভোরের বিভোরতা মাখা চিবুক
ঠোঁটে লীলাবতী লীলাবতী ঢেউ-
হে যমুনাবতী আমারে লীলায় ডুবাও।
।।ছয়।।
মৃতপাখিদের ডানায় আকাশ জড়ো হয়
মেঘ ও মায়ায় ময়ূরপুচ্ছ উড়াই
ডানার রথে তোমার নুপুর ধ্বনি
ওগো রাঁধিকা শ্রাবণ নিভে যায়
আমাকে ভেজাও এবার –
দুরের আলোর মৃদু আদরে
কেপে কেপে উঠে মধ্যরাত
কোন ঝড়ে তোমার অভিসার,
চোখের পথ হয়ে ওঠে কারু’পা
অপরূপ আঁধারের গন্ধে
ফোঁটে নিশিন্দা ফুল
বুকের চাঁদে তুমি জ্বলে দাও
আলৌকিক ঝোঁপঝাঁড়
আমি আদুরে বীতংসে আটকে
যাওয়া আদিম নিষাদ।
।।সাত।।
ব্যাকারণ ভেঙে বৃষ্টি নামে
চাঁদস্নান করে বাঁশবনের আড়ালে
তুমুল আঁধারের তুমি ডাকপাঠাও জোনাকি
টলমলে দিঘী ও তার সুনসান ঘাট
একমুঠো জুঁই ফুল একটু ঘ্রাণ।
জোয়ারের মতো সহজিয়া জল
নোনতা নোনতা বাউল গান,
তোমার চিবুকে গুপ্তযুগ
প্রাচীন পুঁথির ঘোরে
ক্রমে ডুবি।
উঠোন থেকে স্তণ
উবুর হয়ে শোও তুমি
জলে ভাসে উল্টে দেওয়া সোনার কলস
আমি কপিলাবস্তুর দিকে যাচ্ছি নেশায়
যেন নতুন কোন শ্রমণ গৌতম…
।।আট।।
ধ্যানের মগডালে তুমিই ঈশ্বরী দোলনচাঁপা-
শিল্পের আতুর ঘরে
তোমার নোনাঘ্রাণ;
দীর্ঘ নিরবতার ওপারে
দাঁড়িয়ে আছি
একাকী-
নিস্তব্ধতা মুখোরিত করো কণ্ঠনিয়নে
হে আমার শিল্পিত ঈশ্বরী…
।।নয়।।
সন্ধ্যার মুখোমুখি যে নদী খুলে দেয়
গোপন দরজা আর নির্জনতা
তাকে তোমার ডাকনামে ডাকি-
ত্রিকোণমিতির সূত্রসমূহ ক্রমে
ট্রায়াঙ্গলে রূপান্তর হয়;
রূপে তোমার অরূপ জ্যোৎস্নার
ছোট ছোট ঢেউ-
পাহাড়ি পথের মতো নেমে আসি
মাতাল পর্যটক, তোমার জুমভূমির
নোনা বিভোরতা ঠোঁটের জড়োয়া
মখমল মায়ায়।
শ্রীমতি তোমার স্বর্গে যাবো,
চৌকাঠে জ্বেলে দাও যোজনগন্ধা ধূপ।