ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন বাংলাদেশের রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি ও রাঙামাটি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ফিরোজা বেগম চিনুর মেয়ে নাজনীন আনোয়ার।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩, ২৫, ২৬, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৫ ও ২৭ ধারায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে আগামী ১৩ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলায় দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম ও পাহাড় টোয়েন্টিফোর ডটকম সম্পাদক ফজলে এলাহী, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক অনির্বাণ শাহরিয়ার, জাগো নিউজের রাঙামাটি প্রতিনিধি সাইফুল হাসান, দীপ্ত টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বায়েজিদ আহমেদ, টিবিএসের খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি দিদারুল আলম ও বণিক বার্তার রাঙামাটি প্রতিনিধি প্রান্ত রনির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়।
মামলার বাদী নাজনীন আনোয়ার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীমের স্ত্রী।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, নাম উল্লেখিত ব্যক্তিরাসহ অজ্ঞাতনামা আরও আসামি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে পোস্ট করেন। এ কারণে বাদী এবং তার মা (সাবেক এমপি ফিরোজা বেগম চিনু) সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে অপদস্থ হয়ে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৩, ২৫, ২৬, ২৯, ৩১, ৩৪, ৩৫ ও ৩৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের ডিসি বাংলো পার্কে অবস্থিত ‘‘পাইরেটস’’ রেস্টুরেন্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সাংবাদিক ফজলে এলাহীর বিরুদ্ধে মামলা করেন নাজনীন।
সেই মামলায় ফজলে এলাহী ৭ জুন গ্রেপ্তার হন ও ৮ জুন রাঙ্গামাটি আদালতে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান। গত ১৪ জুন তিনি চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত থেকে স্থায়ী জামিন পান।
এদিকে আবারও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করে সাংবাদিকদের হয়রানির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক হেফাজত সবুজ বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার অপচেষ্টা রুখতে হবে সম্মিলিতভাবে।
রাঙামাটি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সৈকত বাবু ও সাধারণ সম্পাদক মিশু দে পৃথক এক বিবৃতিতে এই মামলাকে ‘‘হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’’ দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
বান্দরবান প্রেস ইউনিটের সভাপতি আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মংসানু মারমা, সাংবাদিক ইউনিয়নের আহবায়ক আল ফয়সাল বিকাশ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি জিতেন বড়ুয়া ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের মোহাম্মদ এক বিবৃতিতে ছয় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে, অবিলম্বে সাংবাদিক হয়রানির সব পদক্ষেপ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
দৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পাদক ফজলে এলাহীসহ সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়ন।
খাগড়াছড়ি সাংবাদিকদের সংগঠন কেইউজে’র সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত দেওয়ান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।