প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে ভারত অনেক কিছু করতে পারে।একইসঙ্গে উভয় দেশ আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছান তিনি। রাতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময়কালে শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআই এবং সংবাদমাধ্যম জি নিউজ।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে ভারত কী ভূমিকা নিতে পারে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত একটি বড় দেশ। তারা অনেক কিছুই করতে পারে।’
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তঃসীমান্ত নদীগুলো যাতে পুনরুজ্জীবিত করা যায় তার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, নদীগুলো ড্রেজিং করলে এর প্রবাহ উন্নত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠকের আশা করেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (মমতা) আমার বোনের মতো, আমি যখনই চাই তার সঙ্গে দেখা করতে পারি। আমাদের সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।’
এদিকে আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় ভারতীয় এই ধনকুবের বলেন, ‘দিল্লিতে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা সম্মানের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুপ্রেরণামূলক এবং অত্যাশ্চর্যভাবে সাহসী। আমরা আমাদের ১৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা পাওয়ার প্রজেক্ট চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার ভারতে পৌঁছান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া এই সফরে ভারতের প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।
সোমবার রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের এই রাষ্ট্রীয় সফরে ব্যবসা-বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা আলোচ্যসূচির শীর্ষে রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া সফরের এজেন্ডার শীর্ষে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও উন্নত করা, আঞ্চলিক সংযোগের উদ্যোগ সম্প্রসারণ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিও রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
২০২১ সালে উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বছরপূর্তি করে। সেই মাইলফলকে পৌঁছানোর পর ভারতে এটিই প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর শেখ হাসিনার। অবশ্য গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০ তম জন্মবার্ষিকীও পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০২১ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। দিল্লি এবং ঢাকাসহ বিশ্বের ২০টি রাজধানীতে মৈত্রী দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। এছাড়া ২০১৫ সাল থেকে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ১২ বার বৈঠক করেছেন।
এএনআই বলছে, ভারত ও বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি সংযোগ উদ্যোগ পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক সহযোগিতার একটি মডেল তৈরি করেছে। আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ শিগগিরই পুনরায় চালুর পাশাপাশি আগরতলা ও চট্টগ্রাম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আকাশপথে সংযুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া শেখ হাসিনার সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।