তামিল ব্রাহ্মণ রীতি মেনেই ভারতের তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুবিক্ষা আর বাংলাদেশের রক্ষণশীল পরিবারের কন্যা টিনার বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ হল চেন্নাইতে।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ণতা পেল ছ’বছরের সম্পর্ক। পবিরার ও বন্ধুবান্ধবদের উপস্থিতিতে তামিলনাড়ুর সুবিক্ষা সুব্রামণি বিয়ে করলেন বাংলাদেশের টিনাকে। গত বুধবার চেন্নাইতে এই সমকামী জুটির চারহাত এক হল। তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে সুবিক্ষা আর বাংলাদেশের রক্ষণশীল পরিবারের কন্যা টিনার বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ হল তামিল ব্রাহ্মণ রীতি মেনেই।
ছ’বছরের সমকামী সম্পর্কের কথা বাড়ির লোকেদের জানানো সহজ ছিল না সুবিক্ষা ও টিনার জন্য। প্রথম দিকে আপত্তি জানালেও শেষে দুই পরিবারের সম্মতি নিয়েই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন এই সমকামী যুগল।
২৯ বছর বয়সি সুবিক্ষা বললেন, ‘‘বহু বছরের প্রচেষ্টার পর এই দিন দেখতে পেয়ে দারুণ লাগছে। দুই পরিবারের সম্মতি নিয়ে সব আচার-অনুষ্ঠান মেনে বিয়ে করা আমাদের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন শেষমেশ পূরণ হল।’’
সুবিক্ষার মা পূর্ণপুষ্কলা সুব্রামণি জানালেন, মেয়ের সমকামী সম্পর্কের কথা সমাজে জানাজানি হলে নিন্দার ঝড় উঠবে ভেবে প্রথম দিকে তিনি বেশ আতঙ্কিত ছিলেন। কিন্তু সুবিক্ষা তাঁদের ভাল ভাবে বোঝানোর পর উদ্বেগ দূর হয়। তাঁরা বুঝেছিলেন, মেয়ের ভাল থাকাই আসল। সমাজের চোখরাঙনির কথা ভাবা সম্পূর্ণ অর্থহীন। চিন্তাধারায় বদল আনার জন্য সুবিক্ষার বাবা-মা মনোবিদের কাছেও যান।
বছর ৩৫-এর টিনার আগেও বিয়ে করেছিলেন। টিনার বয়স যখন ১৯ বছর তখন তাঁর বাবা-মা জানতে পারেন, মেয়ে সমকামী। তাঁদের ধারণা ছিল, মেয়ে কোনও মানসিক রোগেই আক্রান্ত হয়েছে। তাই জোর করে এক পুরুষের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। টিনার বোন এই বিষয় প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে তিনিও মেনে নেন বিয়েটি। তবে কিছু বছর পরে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। টিনা বেরিয়ে আসেন।
২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট সমকামী মেলামেশাকে অপরাধ মুক্ত করে দিলে বিয়ে এখনও ভারতে আইনি বৈধতা পায়নি। তাই সরকারি খাতায় তাঁদের বিয়ে নথিভুক্ত না হলেও পারিবারিক স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন এই দুই কন্যা। সমাজও এই বিষয়ে ধীরে ধীরে উদার হচ্ছে।
সুবিক্ষার ৮৪ বছর বয়সি ঠাকুরমাও তাঁদের বিয়েতে আশীর্বাদ দেন। তিনি বলেন, ‘‘জীবনে প্রেমের স্থান সবার আগে।’’