প্যাটার্নিটি লিভ

সলিল মজুমদার
সলিল মজুমদার
5 মিনিটে পড়ুন
জীবিকার তাগিদে অনেক দূরে চাকরি করতে হয়। সেদিন অফিসের কাজে আরেকটি মাঠ পর্যায়ের অফিসে যেতে যেই না গাড়িতে উঠতে যাবো শাশুড়ি মা কল করলো, রৌদ্র এখনি রওনা হও। মেঘের শরীরটা খারাপ করছে। ওকে হাসপাতালে নেয়া লাগতে পারে।
ও! মেঘ হচ্ছে আমার স্ত্রী।ওর ডেলিভারির ডেট আর কিছুদিন পর ছিলো। স্বাভাবিক ভাবে এখন প্রসব বেদনা হতে পারে। রৌদ্র বিলম্ব না করে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে রওনা হয়। এইদিকে সেঝদা, মামা, শ্বশুর মহাশয় মেঘকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হতে শুরু করে সব ব্যবস্থা এগিয়ে নিয়েছে।
রৌদ্র রাত দশটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। হাসপাতালে সেঝদা আল্ট্রাসনোগ্রাম এর রিপোর্ট হাতে নিয়ে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করছে।রৌদ্র মেঘকে নিয়ে কেবিনে চলে যায়।
কেবিনে চলে আসার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নার্স এসে মেঘকে অপারেশনের জন্য রেডি হতে বলে। কি করবে বুঝতে না পেরে রৌদ্র তার সেঝদা’কে খুঁজতে থাকে। সেঝদা রিসেপশন এ তখন। রৌদ্রকে মেঘকে অপারশনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে বলল।
রৌদ্র মেঘকে অপারেশন থিয়েটারের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। মেঘ কান্নায় ভেঙ্গে পরে। তখন সময় রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। কিছু সময় পর নার্স একটি ফুটফুটে বাচ্চা কোলে নিয়ে রৌদ্রের সম্মুখে উপস্থিত।
আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে! 
রাতেই অফিসের বসকে কন্যা সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার খবর জানিয়ে পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করে রা্খে। যাতে সকালে বস তা মঞ্জুর করে দেয়। সন্তান হওয়ার পরদিনই যদি রৌদ্র অফিসের কাজে ফিরে যেত হয়তো সে পিতৃত্ব বিষয়টি এখনকার মতো অনুধাবন করতে পারতো না। একজন পুরুষ তো শুধু শুক্রাণু দিয়েই তার পিতৃত্ব অর্জন করে না, এই কয়েকদিনে রৌদ্র তা বুঝতে পারে। যতটুকু পারা যায় সন্তানের নিকট থাকতে হয়। জন্মের পর নিয়মিত চেকআপের জন্য মেয়েকে নিয়ে হেঁটে নয়তলা কখনো সাততলায় ওঠা, মেঘের ঠান্ডা লাগবে বলে মেয়ের পায়খানা, প্রসাবের কাপড় নিজহাতে ধোঁয়া, রোদে শুকানো এবং শুকনো কাপড় নিয়ে ভাঁজ করে যথাস্থানে রেখে দেওয়া, ঠিক সময়ে মেঘের ওষুধ সেবনে সাহায্য করা, নবজাতক কন্যার শরীরে রোদ লাগানো, রাত জাগা, কাপড় পাল্টানো এইসব কিছু রৌদ্রের ভিতর পিতৃত্বের অনুভুতি নিয়ে আসে। সত্যিই তো নারী সন্তান জন্মের পূর্বেই তার মাতৃত্ব অনুভব করে আর পুরুষ সন্তান জন্মের পরেই তার পিতৃত্ব অনুভব করে। রৌদ্র মনে মনে চেয়েছিলো তার একটি কন্যা সন্তান হোক। রৌদ্রের মা যেমন তার দু:খ কষ্টগুলো বুঝতে পেরে তাকে আগলে রাখতো তেমনি একটি কন্যা সন্তান হয়ে যেন তাকে তার শেষ বয়স অবধি আগলে রাখে। সৃষ্টিকর্তা হয়তো তার মনের কথা শুনেছেন। যদিও কন্যা সন্তানকে বিয়ের পর অন্য সংসারে চলে যেতে হয়। তবুও রোৗদ্র এটা প্রত্যাশা করেনা তার মায়ের মত তাকে যেন তার বাবার সংসারে থাকতে না হয়। ও বলে রাখি, মেঘের সাথে বিয়ের পর রৌদ্র চেয়েছিলো মেঘকে তার সাথে তার চাকুরিস্থলে নিয়ে যেতে কিন্তু তার জন্য মেঘকে তার চাকরি ছাড়তে হতো। আর একজন নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা রৌদ্রের পক্ষে মেঘকে চাকরি ছাড়তে বলা অন্যায় বলে মনে হয়। তাছাড়া দ্বিতীয়ত রৌদ্রের চাকরিটা অনেকটা যাযাবরের ন্যায়। আজ এইখানে তো কাল ঐখানে। আর এইসবকিছু চিন্তা করে রৌদ্র আর মেঘের নিজেদের সংসার গড়ে ওঠেনি। যেখানে রৌদ্র তার আঁকা মেঘের পেইন্টিং যেখানে ইচ্ছে সেট করতে পারবে। মেঘ তার বাবার বাসায় থেকে তার চাকরিটা চালিয়ে নিচ্ছে।
রৌদ্র তার কন্যার নাম ঠিক করে রাহা। দাদু, ঠাকুরমা, জেঠু, জেঠিমণিরা কিছুক্ষণ পর কল করে জানতে চায় রাহা কেমন আছে? 
যাক এইদিকে আবার রৌদ্রের ছুটি ফুরিয়ে আসছে। আগামীকালই চলে যেতে হবে।
যাওয়ার পূর্বে রৌদ্র তার কন্যা সন্তানকে আদর করে নেয়। রৌদ্রের একটি আঙ্গুল মেয়েটি তার ছোট হাতে আলতো করে ধরে আছে। রৌদ্রের চোখে জল চলে আসে। মেঘ পাশে থেকে মোবাইলে একটি ছবি তুলে নেয়। বাসে করে যেতে যেতে ফেসবুকে মেঘের তোলা ছবিটিকে ফেসবুকে শেয়ার করে আর ছবিটির নীচে লেখে, ‘পিতৃত্বকালীন ছুটি শেষ। কন্যার পাশে আরো কয়েকদিন থেকে যেতে পারলে ভালো হতো।’ ছুটি শেষে এই চলে আসার পর তার অনুপস্থিতেতে যেন পিতৃত্বের অনুভূতি যেন নষ্ট হয়ে না যায়। যাই হোক লেখাটি যেকোন ভাবে তার বসের চোখে পড়ে। পরেরদিনই বস রৌদ্রের নিকট জানতে চায়,
ছুটিটা আর কতদিনের হলে আপনার ভালো হতো?
রোদ্র চুপ করে থাকে।
ওকে, আরো পনের দিনের ছুটি আপনাকে দেয়া হলো! খুশি তো?
রৌদ্র খুশি হয়। কিন্তু একটা সংশয় কাজ করে অন্য সংসারে গিয়ে কি পিতৃত্বটা কি সঠিকভাবে অনুভূত হয়! 
 

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

বিষয়:
এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
পিতা-শিশু গোপাল মজুমদার, মাতা-পুতুল রানী মজুমদার।অবসরে গল্প,কবিতা,নাটক,চলচ্চিত্র ও ছবি আঁকা নিয়ে থাকার চেষ্টা করি।

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!