কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার পর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।
চলতি বছরের জুলাই শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৫২ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল এই পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৮৭ হাজার ০১১ কোটি টাকা।
এদিকে, পাবলিক সেক্টরের ঋণও জুলাই মাসে ২৩.৩৮% বেড়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি জুলাই মাসে ছিল ১৩.৯৫%। যা জুনের ১৩.৬৬% থেকে বেশি এবং এফওয়াই ২৩-এর জন্য নির্ধারিত ১৪.১% এর আর্থিক সীমার কাছাকাছি।
কোভিড -১৯ লকডাউনের সময় একটি বড় ধাক্কার পর এই সূচক অর্থনীতি যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সেটিকে নির্দেশ করে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রকৃত বিনিয়োগ কতটা বাড়ছে তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিনিয়োগের কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রকৃত বিনিয়োগ খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় মেটাতে আরও ঋণের প্রয়োজন আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “বেসরকারি খাতে বর্ধিত ঋণের প্রবাহ যদি উৎপাদনে ব্যয় করা হয়, তাহলে তা মুদ্রাস্ফীতিকে আটকে রাখবে না, বরং এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।” তবে এটি প্রকৃতপক্ষে মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করছে বলে তিনি মনে করেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতে ঋণ কমাতে হবে। এ জন্য ঋণের হার বাড়াতে হবে।”
তথ্য বিশ্লেষণ দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে, ক্রেডিট প্রবাহের বৃদ্ধি ছিল ১১.০৭%। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফেব্রুয়ারিতে এটি ১০.৭২% এ নেমে আসে। পরে, মার্চে আবার বেড়ে ১১.২৯% হয়। এপ্রিলে, এটি ছিল ১২.৪৮%। মে মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ১২.৯৪% হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের গড় ঋণ প্রবৃদ্ধি ১০.৬৭% ছিল। যা ১৪.৮% এর আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক কম।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতির বিবৃতি অনুসারে, অর্থ প্রবাহকে শক্ত করার অংশ হিসাবে, বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধির সীমা এফওয়াই২৩ এর জন্য ১৪.১% থেকে এফওয়াই২২ এর জন্য ১৪.৮% থেকে কমিয়ে ১৪.১% করা হয়েছে।
২০২০ সালে মহামারি বেসরকারি খাতের ঋণ বৃদ্ধিকে প্রায় ৮% এ ঠেলে দিয়েছিল।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরের ৪৭ দিনে ১৭ হাজার ৬০৩ কোটি টাকায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।