ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ মানেই বাড়তি উন্মাদনা! এই দুই দেশের ক্রিকেট ভক্ততো বটেই, সারাবিশ্বের ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে এর থেকে বড় ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ আর কিছুতেই নেই। আবেগ,উম্মাদনা, ইতিহাস,ও গৌরবের দিক বিবেচনা করলে শুধুমাত্র অ্যাশেজকেই এর উপরে রাখা যায়। এমন ম্যাচে দুই দলের ক্রিকেটারদের মাঝেও বাড়তি চাপ থাকে। সেই চাপকে জয় করেছি রোহিত শর্মার ভারত। বিরাট কোহলির শততম ম্যাচে পাকিস্তানের দেওয়া ১৪৮ রান ২ বল হাতে রেখে ৫ উইকেট হারিয়ে ছুঁয়ে ফেলে ভারত।
রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে আইসিসি ইভেন্ট কিংবা এসিসির ইভেন্ট ছাড়া দুই দলের মহারণ দেখার সুযোগ নেই ক্রিকেটেপ্রেমীদের। ফলে যখনই দুই দল মাঠের লড়াই মুখোমুখি হয়, গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই উত্তাপের আঁচ লাগে। সেই আঁচ গায়ে মেখে ২২ গজে লড়াই করেন দুই দেশের ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপে বরাবরই ভারতের আধিপত্য থাকে। এই ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার এশিয়া কাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। সবমিলিয়ে ১৫ বার একে অন্যের বিপক্ষে এশিয়া কাপে খেলেছে। তার মধ্যে ৯ বার জিতেছে ভারত, বাকি ৫ বার পাকিস্তান। ১৯৯৭ সালের এশিয়া কাপে দুই দলের লড়াইয়ের ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।
রবিবার ১৪৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ভারত। ওভারের দ্বিতীয় বলেই মোহাম্মদ নওয়াজ তুলে নেন ওপেনার লোকেশ রাহুলের উইকেট। শুরুর ধাক্কা সামলে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা মিলে ৫০ রানের জুটি গড়েন। ১ ছক্কায় ১৮ বলে ১২ রান করে নাওয়াজের বলে আউট হন রোহিত। অধিনায়ককে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের শততম ম্যাচ খেলতে নামা কোহলিও সাজঘরে ফেরেন। দীর্ঘদিন ধরে অফফর্মে থাকা এই ব্যাটার ৩৪ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন।
৩ রানের ব্যবধানে রোহিত- কোহলি আউট হওয়ার পর রবীন্দ্র জাদেজা ও সূর্যকুমার যাদব মিলে ৩৬ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু দলীয় ৮৯ রানের মাথায় নাসিম শাহর বলে সরাসরি বোল্ড হন সূর্যকুমার (১৮)। বাকি কাজটুকু অনায়াসেই করে ফেলেছিলেন জাদেজা ও হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু শেষ ওভারে জয় থেকে ৭ রান দূরে থাকতে নাওয়াজের বলে বোল্ড হন জাদেজা। আর তাতেই তাদের ৫২ রানের জুটি ভাঙ্গে। জাদেজা ২৯ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। প্রথম বলে জাদেজার আউটের পরের দুই বলে ভারত নিতে পারে ১ রান। শেষ তিন বলে ভারতের প্রয়োজন তখন ৫ রানের। তবে চতুর্থ বলে হার্দিক পান্ডিয়ার বিশাল ছক্কায় আরও একবার এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে বধ করার আনন্দে মাতে ভারত। পান্ডিয়া ১৭ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে মোহাম্মদ নাওয়াজ সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন। এছাড়া নাসিম শাহ নেন দুটি উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া পাকিস্তান শর্ট বলে খেই হারিয়েছে। ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে মাত্র ১৪৭ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। শেষ দিকে দাহানির ক্যামিও ইনিংস না এলে দেড়শোর কাছে যেতে পারতো না বাবর আজমের দল।
প্রথম ওভারেই পাকিস্তানকে ভয় পাইয়ে দেন ভুবনেশ্বর। যদিও রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যায় রিজওয়ান। ওই ওভারে আরও একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যায় পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত ভুবনেশ্বরের তৃতীয় ওভারে পরাস্ত হন অধিনায়ক বাবর আজম। বাউন্সারে বাবর পুল করতে গেলে ফাইন লেগে ধরা পড়েন র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটার।
শুরুতেই অধিনায়কের বিদায়ে সতর্ক ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন রিজওয়ান। পাওয়ার প্লে শেষ ওভারেই অবশ্য হাত খুলে স্কোরটা বাড়িয়ে নিতে মনোযোগী হন তিনি। আবেশ খানের ওভারে একটি চার ও একটি ছয় মেরে স্কোরটা ৪৩ এ নিয়ে যান। অবশ্য একই ওভারে ফখর জামান ফিরলে পাওয়ার প্লেতেই দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
তার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নেওয়ার চেষ্টা ছিল রিজওয়ান-ইফতিখারের। কিন্তু পান্ডিয়ার শর্ট বলে ২৮ রানে ফেরেন ইফতিখার। কিছুক্ষণ পর পান্ডিয়ার শট বলে পরাস্ত হন পাকিস্তানের ইনিংসে সফলতম ব্যাটার রিজওয়ান (৪২)। আরেকটি শর্ট বলে খুশদিল শাহও গ্লাভসবন্দি হলে বিপদ আরও বাড়ে তাদের। বিপজ্জনক আসিফ আলীও মাত্র ৯ রানে ভুবির বলে তালুবন্দি হলে ইনিংসটা যে বেশি দূর যে যাচ্ছে না, সেটি নিশ্চিত হয়ে যায়। তার পর নওয়াজ (১), শাদাব (১০) ও অভিষিক্ত নাসিম (০) কোনও অবদান রাখতে পারেননি। শেষ দিকে শাহনেওয়াজ দাহানির ৬ বলে ১৬ রানে ১৯.৫ ওভারে ১৪৭ রানের পুঁজি পায় পাকিস্তান।
২৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। ২৫ রানে তিনটি নেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৩৩ রানে দুটি শিকার করেছেন আরশদ্বীপ। ১৯ রানে একটি নিয়েছেন আবেশ খান।