বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন এই গ্রীষ্মে রেকর্ড তাপমাত্রা, আকস্মিক বন্যা এবং খরায় একপ্রকার নাস্তানাবুদ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু সংকটের কারণে এসব সংকট আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরায় গুরুতর হুমকির মুখে রয়েছে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের ফসল। দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৬০ বছরের মধ্যে চীনের দক্ষিণাঞ্চলে রেকর্ড তাপমাত্রা এবং খরা দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ফসল রক্ষার জন্য পানি সংরক্ষণের পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ জানিয়ে দেশটির সররি দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরার কারণে শরতের ফসল মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
চীন তাদের খাদ্যদ্রব্যের (ধান, গম এবং ভুট্টা) ৯৫% নিজেরাই উৎপাদন করে। এখন এই খরা ও তাপপ্রবাহের ফলে ফসলের ক্ষতি হলে তারা আমদানির দিকে ঝুঁকতে পারে। এর প্রভাব পড়বে অন্যান্য দেশের ওপর। এমনিতেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বে খাদ্যদ্রব্য আমদানি-রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
চীনের একাধিক প্রদেশে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এসি ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। ফলে জনজীবনও ব্যাপক সমস্যার সম্মুখিন হয়েছে।
বুধবার বিকেলে চীনের সিচুয়ান প্রদেশের আবহাওয়া পরিষেবা কেন্দ্র জানিয়েছে, এদিন তারা ৪৩.৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। প্রদেশটির প্রধান জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জলের স্তর নেমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে শিল্প কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম আউটলেট চায়না নিউজ সার্ভিস গত সপ্তাহে জানিয়েছে, চীনের ইয়াংজি নদীও শুকিয়ে যাচ্ছে। নদীটির প্রধান স্রোতের প্রবাহ ৫০% কমেছে।
এছাড়া বড় ধরনের দাবানলের মুখে পড়েছে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। এই অঞ্চলের চংকিং এবং সিচুয়ান এলাকায় মঙ্গলবারও আগুন নিয়ন্ত্রণে কার্যত লড়াই করছে দেশটি। এছাড়া অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রার দীর্ঘ প্রত্যাশিত পতন এবং পরের সপ্তাহে বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এশিয়ার এই দেশটি।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কাজে নিয়োজিত প্রাদেশিক কর্মকর্তারা বলেছেন, দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা চীনের তাপপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে। মূলত পশ্চিম অঞ্চল থেকে শীতল হাওয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিকে টাইফুন এগিয়ে আসায় তাপপ্রবাহ কমছে। অবশ্য তাপপ্রবাহের কারণে টানা ১২ তম দিনের জন্য চীনে “রেড অ্যালার্ট” জারি রয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল নিউজ সার্ভিস কাইজিন জানিয়েছে, অন্যান্য স্বাভাবিক বছরের তুলনায় এবছর চংকিং ও সিচুয়ান অঞ্চলে ৮০% কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে এই অঞ্চলে ১৯টির মতো দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে চীনের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, বন ও তৃণভূমিতে দাবানলের জন্য উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে জিয়াংসি, হুনান এবং গুইঝো প্রদেশও। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য চংকিং ও সিচুয়ানে ২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি প্রাদেশিক-স্তরের অগ্নিনির্বাপক কর্মী পাঠানো হয়েছে।