রুশ তেল কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

রাশিয়া থেকে ৩৫ টাকা দরে পরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসবে। এ বিষয়ে তৈরি কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

কমিটি তেল কেনার বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ দিলেই বাংলাদেশ রুশ তেল কিনবে বলেও জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি তেলের দরকার। আমরা বাজার থেকে তা সংগ্রহ করব। যারা কম দরে দেবে, যেখানে সস্তায় পাব, সেখান থেকে কিনব।’

তিনি বলেন, ‘আমি কমিটি করে দিয়ে দিয়েছি। তারা আলোচনা করছে। তারা কার সঙ্গে কী আলোচনা করছে, আমি তা জানি না। তাদের আলোচনা শেষ হলে তারা রিপোর্ট রেডি করে জমা দেবে। সে মতো সিদ্ধান্ত আসবে।’

- বিজ্ঞাপন -

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমে এলেও এখনও যে দাম, তাতে ডিজেলে অনেকখানিই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। যে দরে ডিজেল কিনে আনা হয়, তাতে দাম পড়ে ১২২ টাকা, কিন্তু সরকার বিক্রি করছে ১১৪ টাকায়।

এর মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি রোসনেফ্ট অয়েল রাশিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া প্রতি লিটার পরিশোধিত ডিজেলের দর দাঁড়াবে ৩৫ টাকার সামান্য বেশি। এর সঙ্গে সব কর ও অন্যান্য খরচ যোগ হলেও তা ৫০ টাকার কিছু বেশি হয়।

গত ৫ আগস্ট থেকে সরকার জ্বালানি তেলের দর বাড়িয়ে দেয়ার পর পরিবহন খরচ বেড়ে গিয়ে পণ্যমূল্য বেড়েছে।

বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটে চাপে পড়া বাংলাদেশের জন্য এই প্রস্তাব নিঃসন্দেহে লুফে নেয়ার মতো। গত ৫ আগস্ট থেকে সরকার ডিজেল ও কেরোসিন লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রল ৪৪ ও অকটেনের দর ৪৬ টাকা করে বাড়ানোর পর পরিবহন খরচ বেড়ে গিয়ে যাতায়াত খরচ ও নিত্যপণ্যের দামে দিয়েছে নতুন লাফ, যা জন-অসন্তোষ তৈরি করেছে। রাশিয়ার তেল কিনতে পারলে এই দাম কমিয়ে আনা সম্ভব। তাতে পরিবহন ভাড়া ও নিত্যপণ্যের দাম কমে আসা সম্ভব।

কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। ইউক্রেনে রুশ হামলার পর দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটিও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও ভাবতে বাধ্য করছে।

- বিজ্ঞাপন -

বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান অংশই যায় পশ্চিমে। কম দামে রুশ তেল কিনতে গিয়ে সেই রপ্তানিতে প্রভাব পড়ে কি না, সেটিই প্রধান দুশ্চিন্তা।

প্রস্তাবটি যাচাই করতে একটি কমিটিও গঠন করেছে সরকার। অচিরেই ঢাকায় আসছে রোসনেফ্ট প্রতিনিধিদল। ডিজেলের পাশাপাশি বাংলাদেশে অপরিশোধিত তেল পাঠানোর সম্ভাব্যতাও যাচাই করতে চাইছে আরেকটি রুশ বিশেষজ্ঞ দল। তারা চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারির সক্ষমতা যাচাই এবং রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল পরিশোধনে করণীয় ঠিক করবেন।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কীভাবে জ্বালানি কেনা হবে, কীভাবে জাহাজীকরণ হবে, জাহাজ কোথা থেকে আসবে, পেমেন্ট কীভাবে হবে, কমিটি সবকিছু আলোচনা করেই আমার কাছে ফাইনাল রিপোর্ট দেবে। এই সপ্তাহের মধ্যেই এই রিপোর্ট দেয়ার কথা।’

- বিজ্ঞাপন -

দাম কত পড়বে?

বিপিসির তথ্য বলছে, রুশ প্রতিষ্ঠান রোসনেফ্ট প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেল ৫৯ ডলারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। এই দরে তারা চট্টগ্রামে তেল পৌঁছে দেবে।

এক ব্যারেল সমান ১৫৯ লিটার। প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে সে ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পরিশোধিত ডিজেলের দর পড়ে ৩৫ টাকা ২৫ পয়সার কিছু বেশি।

প্রস্তাবিত দরের সঙ্গে ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার প্রিমিয়াম (জাহাজ ভাড়া, বিমা, লোড-আনলোড, ঝুঁকি ও ব্যাংক সুদ) এবং ৩৮ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্স যুক্ত হবে। সে হিসাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাদে লিটারপ্রতি ডিজেলের দর দাঁড়াবে ৫০ টাকার কিছু বেশি।

সরকার জ্বালানি তেল আমদানিতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি প্রস্তাব তৈরি করতে বলেছে। ভ্যাট ও ট্যাক্স কমানো হলে প্রতি লিটার রুশ ডিজেলের দর ৫০ টাকার নিচে নেমে আসবে।

কত দরে তেল আনে বাংলাদেশ

বর্তমানে বিপিসি আটটি দেশ থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। দেশগুলো হলো কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারত

বর্তমানে প্রতি ব্যারেল ডিজেল আমদানি করতে ১২৫ ডলারের মতো খরচ পড়ছে। আর অপরিশোধিত ক্রুড অয়েল আনতে খরচ পড়ছে ৯০ ডলার।

এই হিসাবে প্রতি লিটার ডিজেলের আমদানি ব্যয় পড়ছে ১২২ টাকা ১৩ পয়সা, যা বিক্রয়মূল্য ১১৪ টাকার চেয়ে ৮ টাকা বেশি।

বাংলাদেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬১ লাখ টনের বেশি জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর তিন-চতুর্থাংশই পরিশোধিত তেল। দেশে ব্যবহৃত তেলের ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেল। দেশে ৫৫ লাখ টনের বেশি ডিজেল প্রয়োজন পড়ে। এর ৪৫ হাজার টনই আমদানি করা।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অবরোধে পড়া রাশিয়া তার তেল বিক্রির ক্ষেত্রে দাম কমিয়ে পাল্টা চাল দিয়েছে।

এরপর বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশ চীন ও ভারত এই তেলের বড় আমদানিকারক হয়ে উঠেছে। যুদ্ধ শুরুর পর দেশ দুটি ৩৫ শতাংশ ছাড়ে তেল কিনছে।

বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারও রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ঘোষণা দিয়েছে।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!