চক্রবৃদ্ধি হারে বেদনা বাড়ে
দিনদিন ক্ষয়ে ক্ষয়ে আসছে বরাদ্দকৃত আয়ুষ্কাল,
ক্ষয়ে আসছে বিশুদ্ধ অক্সিজেন, দমের গাড়ি ও সম্পর্ক।
ক্ষয়ে আসছে পাঁজরের হাঁড়গোড়, দাঁতের এনামেল
গলার স্বর, বুদ্ধি বিবেক ও স্মৃতি কাতরতা
ক্ষয়ে আসছে রোমান্টিসিজম, বাকপটুতা ও চটুলতা
আহা! হু হু করে বয়সও কমছে।
কেবল তোমার দেয়া অবহেলাগুলোর ক্ষয় নেই
কেবল কষ্টগুলো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে তো বাড়ছেই!
অভিমানপত্র
আমাকে তুমি ছেড়ে গেলে নির্লিপ্তভাবে দেখে হিজলগাছ
নদীটাও কাঁদে না কভু; জল নিয়ে বয়ে যায় অন্য মোহনায়
হবু মিলনের চুক্তিপত্র নিয়ে উড়াল দেয় না পোষা কবুতর
টুকটুকে লাল গোলাপফুল গুচ্ছও ইউটার্ণে ঘুরে যায়
নতুন ভোরে হাঁটু গেড়ে বসে; অন্য কাউকে প্রপোজ করে!
তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে কারো কোনো শোক হয় না
দুঃখ দুঃখ অনুভবে জীবনকে কেউ অনর্থক মনে করে না!
কেবলই আমার যন্ত্রণার পাহাড় উঁচু থেকে উঁচুতর হয়
শোকের নদী গোপনে বয়ে যায় বিরহীপথ
আমার কাছে এই যাপিত জীবনককে খুব অনাহূত মনে হয়
আমাকে তুমি ছেড়ে গেলে
আমার বুকে অভিমানপত্রের স্তূপ জমা হতে থাকে।
আমারও যন্ত্রণা হয়
আঘাতের যন্ত্রণা ফুলেরও হয়
টোকায় টোকায় পাপড়িগুলো ঝরে যায় অবেলায়,
হাতুড়ির পুনঃপুন আঘাতে চৌচির হয় পাথুরে শরীর
মেঘেদের দিনে গুমোট হাওয়ায় দুঃখ দুঃখ ঘ্রাণ উড়ে
আঘাতের দাগ মুছতে বৃষ্টির প্রার্থনায় মগ্ন থাকে মাটি
জলেও জল ভাঙে; সুনামির তোড়ে ভাঙে নিজস্ব তীর।
পাদটীকায় লিখে গেলাম-
তোমার অবহেলায় আমারও যন্ত্রণা হয় ভীষণ….
জোছনা ও মন ছোঁয়ার বিদ্যা
যারা অবাক জোছনা দেখেও দুই চোখ বুজে রয়
দিব্যি কেটে বলছি- তারা আমার মনের মানুষ নয়
যারা জোছনাকে পিঠ দেখিয়ে বিছানায় যায়
তারা নির্ঘাত নারী-পুরুষ, প্রেমিক-প্রেমিকা নয়,
যারা জোছনাকে হাতের মুঠোয় নেয়ার কৌশল জানেনা
নিশ্চিত তারা দৈহিক রসায়ন বুঝে না; বিক্রিয়া বুঝে না।
যে পুরুষ জোছনাকে চিনে, হাতের মুঠোয় নিতে জানে
সে আগাগোড়া প্রেমিক; সে প্রেমিকার মন ছুঁইতে জানে,
যে নারী জোছনাকে চিনে, হাতের মুঠোয় নিতে জানে
সে আপাদমস্তক প্রেমিকা, সে প্রেমিকের মন ছুঁইতে জানে।
হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণ ও আদিম সাপ
হাসনাহেনার গন্ধে আড়মোড়া দিয়া ওঠে রাইত
নিকষ আন্ধার আদিম লেবাসে বেসামাল নাচে
মস্তিষ্কের বারামখানায় ভাবনারা টালমাটাল হাঁটে
গলিপথ থেকে মহাসড়ক,
আবার মহাসড়ক থেকে গলিপথ
গলির মাথায় ট্যাপ মইরা খাঁড়াইয়া থাকে
যুতসই শিকারের জন্য হাতিয়ারে শান দেয়
আলগোস্তে শিরদাঁড়া ধইরা হাঁইট্টা যায় আদিম সাপ
মখমলের বিছনা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস লেখে
সর্বশক্তি লইয়া সেই সাপ বিছনায় ফণা তুইল্লা খাঁড়ায়
হাসনাহেনাও কম যায় না; বুকের আস্তিন খুইল্লা গন্ধ বিলায়
শুরু হয় যুগলের আদিম খেলা
সেই খেলায় মুহুর্মুহু করতালি দেয় অন্ধকার; দর্শক।
শরতে প্রতিশ্রুতি
হেমন্তের বাতাসে উড়ে যাচ্ছে কাশফুল
তল্পিতল্পা গুটিয়ে ফিরে যাচ্ছে অভিমানী শরত
জলরঙে আঁকা শরতের ছবি মুছে দিচ্ছে হিমেল কুয়াশা
পেঁজা তুলো মেঘ উত্তরের হাওয়ায় বিদায়ী কোরাস গায়।
তবুও তুমি এলে না! কেন এলে না?
প্রতীক্ষায় প্রতীক্ষায় শরত চলে যায়;
আহা! প্রতিশ্রুত কথা তুমি রাখলে না।
শরত একা ফিরে গেলে মরে যায় কাশ
আক্ষেপের চরাচরে আমার দীর্ঘশ্বাস।