পরিবেশ আন্দোলনে নারীর ভূমিকা
যোধপুরের মহারাজা অভয়সিং সুরম্য প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। কড়া নির্দেশ দিয়ে তিনি সৈন্য পাঠালেন খেজার্লি গ্রামে, কারণ এই এলাকার খেজ্রি গাছ থেকে পাওয়া যায় নানাজাতের বিল্ডিং তৈরির উপাদান। খেজ্রি (Prosopis cinerariya) এক অসাধারণ মরুবৃক্ষ। যখন সমস্ত প্রকৃতি অসহ দাবদাহে জলের অভাবে শুকিয়ে ধূসর হয়ে ওঠে তখনও এই গাছ সবুজ সতেজ থাকে। বহু নিচে শিকড় প্রোথিত করে বেঁচে থাকে খেজ্রি গাছ। এই গাছের নাম থেকেই গ্রামের নাম খেজার্লি।
রাজার সৈন্যরা গাছ কাটতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ল। গাছে কুঠার মারার আগেই এক নারী এসে গাছটিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। কিছুতেই তাকে সরানো গেল না, খুব স্পষ্ট করে বলল সেই নারী, ‘সে মৃত্যু বরণ করবে কিন্তু গাছ কাটতে দেবে না, কারণ তার শিরের মূল্য গাছের মূল্য থেকে কম।’ দুর্বিনীত সৈন্যরা নির্মমভাবে তৎক্ষণাৎ তার শিরশ্ছেদ করলো।
সৈন্যদের এই অত্যাচারের খবর বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ল আশপাশের সকল গ্রামে। দলে দলে গ্রামবাসীরা ছুটে এসে গাছ জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল, জীবন যায় যাক কিন্তু গাছ কাটতে দেবে না তারা। বৃদ্ধারা এগিয়ে এল প্রথমে। সৈন্যরা উপহাস করে উঠল, বৃদ্ধদের সময় শেষ, তাদের আর করার কিই বা আছে, তাই তারা জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু সৈন্যদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হল, কারণ যুবতী নারীরা, এমন কি শিশু-কিশোরীরাও স্বেচ্ছায় এতে সামিল হতে লাগল। অপমানে ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সৈন্যদল মরিয়া হয়ে একে একে ৩৬৩ জনের শিরশ্ছেদ করল। এই অভাবনীয় হত্যাযজ্ঞের খবর যখন রাজার কানে পৌঁছাল তখনই তিনি ছুটে গেলেন অকুস্থলে। সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আদেশ জারী করলেন, ‘এই গ্রামে এখন থেকে যে কোনো রকম হত্যা নিষিদ্ধ, তা গাছ প্রাণী যাই হোক’; যে আদেশ অদ্যাবধি বহাল রয়েছে।
যে মহিয়ষী নারী জীবনের বিনিময়ে বৃক্ষকে বাঁচাতে গিয়ে অন্য নারীদের প্রভাবিত করেছিলেন তিনি বৃক্ষপ্রেমী ও পরিবেশবাদীদের শ্রদ্ধাভাজন ‘অমৃতা দেবী।’ ১৭৩১ সালের ২৪শে মার্চে, রাজস্থানে পৃথিবীর ইতিহাসে বৃক্ষরক্ষায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন তিনি। তাঁর ধর্ম ছিল ‘বিশনয়’, বিষ্ণু উপাসক হলেও এঁরা বলেন, এঁদের ধর্মের নাম ‘বিশনয়’, যা ২০ ও ৯ এই দুটি সংখ্যার সমন্বয়। এর কারণ, এই ধর্মের প্রবর্তক গুরু জাম্বেশ্বর ২৯টি ঐশী হিতোপদেশ দিয়ে গেছেন তাঁর অনুসারীদের। আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে গুরুজী অনেক ভেবেছেন প্রকৃতি ও মানুষ নিয়ে, একের সঙ্গে অপরের নিবিড় সম্পর্ক নিয়ে। যে শুভ সম্পর্কের কারণে গ্রামের উঠান দিয়ে মিত্রের মতো হেঁটে গেছে শ্বাপদ প্রাণী, ব্যাঘ্র, সিংহ।
গুরুজীর আদর্শের অনুসারী বিশনয়ীরা ভোরবেলা স্নান করে দিনের কাজ শুরু করেন, বিনয়ের সাথে অত্যন্ত স্পষ্ট ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলেন, এবং কখনো অন্যের সমালোচনা করেন না। নিরামিষভোজী প্রতিটি বিশনয়ী নিজের খাবার নিজে রান্না করতে জানেন এবং জল ও দুধ পরিশ্রুত করে পান করেন। এঁরা কখনো গাঁজা ভাং আফিম তামাক এবং মদ্য সেবন করেন না, নীল রঙের পোষাকও পরেন না কারণ এই রঙ তৈরি হয় নীলগাছের পাতা নষ্ট করে। গুরুর বিশেষ উপদেশ, তারা যেন কখনো সবুজ গাছ না কাটে, হৃদয় দিয়ে যে কোনো প্রাণকে উপলব্ধি করে এবং দুর্দিনে প্রাণীদের আশ্রয়দাতা হিসাবে কাজ করে। মৃত্যুর পরে বিশনয়ীদের মাটিতে সমাহিত করা হয়, কারণ শবদাহের সঙ্গে জড়িত থাকে বৃক্ষনিধন।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, বৃক্ষগুরু দ্বিজেন শর্মাও ছিলেন এই মতের অনুসারী। তিনি তাঁর এক নিকট আত্মীয়াকে পত্র মারফৎ জানিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহকে যেন দাহ না করে মাটিতে সমাহিত করা হয়, যদিও আদতে তা ঘটে ওঠেনি।। এই মহাপ্রাণ মানুষ, যিনি সারা জীবন ধরে দিকে দিকে মানুষের কাছে বৃক্ষের প্রতি ভালবাসার কথা প্রচার করেছেন, তাঁর ইচ্ছা ছিল, তাঁর দেহের শেষকৃত্যে যেন সেই বৃক্ষ প্রজ্জ্বলিত করা না হয়। সংখ্যায় নগন্য হলেও ভারতে এখনো কিছু জরাথুস্ত্রবাদী (Zoroastrian) বাস করেন, মৃত্যুর পর যাদের দেহ শকুনদের জন্য রেখে আসা হয় দাখ্মা নামক উঁচু স্থানে যার ইংরেজি নাম ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স।’ এখন পরিবেশ দূষণের কারণে শকুন অতি দুর্লভ হওয়ায় জরাথুস্ত্রবাদীরা বহু পরিশ্রমে এই উপকারী পাখিদের চাষ করে চলেছেন, কিন্তু নীতি-আদর্শ বিসর্জন দেননি।
খেজ্রি গাছ রাজস্থানের স্টেট-প্ল্যান্ট এবং আরব আমিরাতের জাতীয় বৃক্ষ, যেখানে একে বাগানে বাগানে লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয় বালিয়াড়ি নিয়ন্ত্রণ করে মরুপরিবেশকে সংহত রাখার জন্য। প্রচণ্ড ক্ষারযুক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে এরা সহজেই জন্মাতে পারে। এর শিকড় ১৫০ ফুট নিচ পর্যন্ত চলে যায় জল সংগ্রহের জন্য। অনেক প্রাণীসহ কালোহরিণ (Antelope cervicapra) এবং চিঙ্কারা হরিণ (Gazella bennettii) এর পাতা খায়। এর ডালে বাসা বেঁধে বাস করে ঈগলসহ কয়েক জাতের পাখি। এই গাছের পাতা ও কাণ্ড থেকে তৈরি হয় নানা প্রকার ওষুধ।
কথায় বলে, বিজন মরুতে যার একটি উট, ছাগল ও খেজ্রি গাছ আছে সে কখনো মৃত্যুবরণ করে না। নাইট্রোজেন স্থিতিকরণের ক্ষমতা থাকার জন্য এই গাছের সঙ্গে বজরা (Millet) লাগানো হয় কৃষিতে। কোনো কারণে এসব গাছের মৃত্যু হলে মরুভূমির ফুড চেইন ও ইকোসিস্টেম ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই গাছকে ভারত, পাকিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে দেখা যায়।
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষ ও প্রাণী নিধনের কথা জোর গলায় প্রচার করা হয় সারা বিশ্বেই। নিয়মনীতি দিয়ে তৈরি করা হয় রক্ষাকবচ, সরকার এর পৃষ্ঠপোষকতাও করেন কিন্তু ফলাফল কখনো সন্তোষজনক হয় না। আজকের দিনেও প্রহরির চোখে ধুলো দিয়ে সংরক্ষিত এলাকা বা অভয়ারণ্য থেকে চুরি হয়ে যায় লুপ্তপ্রায় প্রাণী ও বনজ সম্পদ। আগে তো নৃপতিরাই ছিলেন এর কর্ণধার। প্রাণীর প্রতি মোগল সম্রাটদের আচরণ ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন এদের অন্যতম। ফারসি ভাষায় লিখিত ‘তুজুখ-ই-জাহাঙ্গিরি’তে এর অনেক নজীর আছে।
১৬১৬ সাল পর্যন্ত ৩ বছর ধরে নীলগাই, কালো হরিণ ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা আছে এতে। রাজাবাদশাদের শিকারের উৎকৃষ্ট জায়গা ছিল রাজস্থান ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ। জানা যায়, জাহাঙ্গীর ৮৬টা সিংহ শিকার করেছিলেন ৩৬ বছরে, কিন্তু ব্রিটিশ সাহেব কলোনেল স্মিথ মেরেছিলেন ৩০০টা ও স্থানীয় রাজা বিশেন সিং ১০০টা (Faunal heritage of Rajasthan, 2013)। কিমাশ্চর্যম! সিংহরা তাদের রাজ্য গিলে খাচ্ছিল নাকি! জর্জ বার্নার্ড শ’য়ের বিখ্যাত প্রবাদটির কথা মনে পড়ছে এই প্রসঙ্গে…
‘When a man wants to murder a tiger, he calls it sport;
When the tiger wants to murder him, he calls it ferocity’.
যাহোক, যা-ও দুয়েকটা ছিটেফোঁটা প্রাণীর অস্ত্বিত্ব ছিল মরুর গভীরে সেগুলোও সাফ হয়ে গেছে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় স্বাধীনতার সময়ে। দুর্বিনীত পোচারদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টকর কাজ হয়ে উঠেছে ইদানীং। বৃক্ষ ও প্রাণী নিধনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ শ্রেণীর মানুষের ভিতর যে চেতনা জাগ্রত হয়েছে তার মূল সূত্র সেই ‘অমৃতা দেবী।’ রাজস্থানে তার সাদামাটা সমাধিতে প্রতিবছর ভক্তেরা আসে নিহতদের প্রতি পূজা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। এই সৌধের অভ্যন্তরে ৩৬৩ জন আত্মোৎসর্গী মানুষের নামও উল্লেখ করা আছে। অমৃতা দেবীর আদর্শকে অনুসরণ করে ১৯৭০ সাল থেকে ‘চিপকো মুভমেন্ট’ শুরু হয়েছে ভারতের নানান জায়গায়। ‘চিপকো’ অর্থ জড়ানো বা বেষ্টন করা, অর্থাৎ ‘চিপকো আন্দোলন’ বলতে গাছকে বেষ্টন করে জীবন বাজী রেখে পোচারদের গাছ-কাটা থেকে বিরত রাখা বোঝায়।
১৯৭৩ সালে উত্তর প্রদেশের গোপেশ্বরে যখন পোচারদের আগমন প্রকাশ হয়ে পড়ল তখন পুরুষদের জন্য অপেক্ষা না করে নারীরাই গাছের চারদিক বেষ্টন করে ফেললেন। কর্তনকারীদের গাছ-কাটা সনদ বা অধিকারের প্রমাণপত্র কোনো কাজই করল না। দুর্বিনীতরা গালিগালাজ করে, বন্দুকের ভয় দেখিয়েও নারীদের গাছের বেষ্টনী থেকে একবিন্দু সরাতে পারল না। গাছকাটার প্রোগ্রাম বানচাল হয়ে গেল। রাস্তায়, বাজারে, জলের ঘাটে যেখানেই দেখা হল, নারীরা আলোচনা করতে শুরু করলেন বৃক্ষনিধন নিয়ে এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন পূর্বসুরী নারীদের, যার পুরোভাগে রয়েছেন খেজার্লি গ্রামের ‘অমৃতা দেবী’ এবং হরিয়ানা রাজ্যের রামীদেবী।
১৯৭৮ সালের ১০ই মে হরিয়ানার এই মমতাময়ী নারী একটি ক্ষুধার্ত কালো হরিণের বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করিয়েছিলেন, যখন সারা বন তচনচ করে পোচাররা খোঁজ করছিল প্রাণীদের। এই অতিমানবিক স্নেহকে অনেক বড় করে দেখেছেন সংগ্রামী নারীরা। পুরুষরা কাজে-কর্মে বাইরে যায়, যে কাজ থেকে তাদের জীবিকা চলে। অনন্যোপায় হয়ে তাদের মাইল মাইল পথ হেঁটে যেতে হয় পশুখাদ্য সংগ্রহের জন্য। গাছের সঙ্গে একনিষ্ঠভাবে বাঁধা নারীরা জীবনে অত্যন্ত অসহায় বোধ করে, তাঁরা নিজেরাই এগিয়ে আসেন এর প্রতিকারে। এভাবে ১৯৭৪ সালে হিমালয়ের রেনি গ্রামে এবং ১৯৮৩ সালে কর্ণাটকেও নারীরা একত্রিত হয়ে বৃক্ষ ও পরিবেশকে রক্ষা করেন। এসব কৃতকার্যতার পর থেকে ‘চিপকো আন্দোলনের’ গুরুত্ব ক্রমশ বেড়ে গেছে।
নারীরা গান বাঁধে, গেয়ে বেড়ায় গ্রামের রাস্তায় রাস্তায়। সেই গানের লাইনে থাকে অদ্ভুত রকম সত্যভাষণ। গানের চরণে পোচার বলে…
‘হে বেকুব নারী, তুমি কি জানো, বন থেকে আসে তক্তা আর বৈদেশিক মুদ্রা?’ নারী বলে, ‘বনে আছে বাঁচবার মতো মাটি, জল আর বিশুদ্ধ হাওয়া।’
কোনো গাছ কেটে ফেলার জন্য নির্বাচন-চিহ্ন (Earmark) দেয়া হলে তার চারদিকে অনেক সময় মেয়েরা রাখীবন্ধনের মতো দড়ির ঘের দিয়ে বেঁধে রাখে, ধর্মীয় ও হৃদয়ের অনুভব থেকে; যেন এই গাছটি তাদের ভাই, কিছুতেই তার অনিষ্ট হবে না, হতে দেবে না। এ ধরনের অনুভবের কথা শোনা গেছে ১৮৫২ সালে, যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, ‘সিয়াটল্’ এলাকার রেড ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে কৌশলে তাদের পিতৃপুরুষের ভিটামাটি কিনে নিতে চেয়েছিল। ইন্ডিয়ানদের এই অনুভব প্রকাশ পেয়েছিল প্রেসিডেন্টকে লেখা ইন্ডিয়ানদের এক বিনীত পত্রে, বিশ্বব্যাপী যার অনুপম সাহিত্যমূল্য নিরূপিত হয়েছে।
নিচে তার একটি আংশিক কাব্যরূপ দেয়া হল…
আদিবাসীদের শিরায় শিরায় বইছে বৃক্ষরস
ফুলগুলি দেখো, আমাদেরই প্রিয় বোন
ভালুক হরিণ ঈগল তাদেরই ভাই…
এই পৃথিবীকে আমরাও ভালবাসি
শিশুরা যেমন ভালবাসে জননীর, হৃদযন্ত্রের ধ্বনি!
বলি প্রেসিডেন্ট, উভয়ের কাছে সমান মূল্য ভূমি
লাল আর সাদা মানুষ কেবল, ঈশ্বর তবু একই
কেনিয়ার পরিবেশবিদ ‘ওয়াঙ্গারি মাথাই’ ছিলেন আফ্রিকার প্রথম নারী যিনি ২০০৪ সালে নোবেল শান্তি পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি ভাবতেন, সাময়িক সুবিধার জন্য যে প্রজন্ম পরিবেশ ধ্বংস করে তার অভিশাপ বহন করে তার পরবর্তী প্রজন্ম। দলগত কাজের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করতেন তিনি, কারণ যখন মানুষ জনহিতকর একটি মহতি কাজ একলা করা শুরু করে তখন তার প্রস্থানের পর সেই কাজ চালিয়ে নেয়ার মতো কোনো মানুষ থাকে না।
বাংলাদেশের কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ এক বিধবা নারী খুরশিদা বেগমের আদর্শও ছিল তাই। তিনি ২৮ জন নারীর সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলেন একটি দায়িত্বশীল ‘নারী টহলদার বাহিনী’ (CPG)। এঁরা শত বিপদ উপেক্ষা করেও শ্বাপদসঙ্কুল বন্য এলাকায় অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন গাছ ও বন্যপ্রাণীকে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর জীববৈচিত্র ও বনরক্ষার বাণী শুনে বনরক্ষীরাও সোৎসাহে এগিয়ে এসেছে পরম নির্ভরতায়, যেন তারা কাজ করছে এক বনদেবীর সাথে। এই বনদেবীর মরমী কার্যকলাপ পৃথিবীর নিসর্গী পরিবেশবিদদের নজরে চলে আসে, ২০১২ সালে, তিনি লাভ করেন সম্মানজনক ‘ওয়াঙ্গারি মাথাই পুরষ্কার।’
পরিবেশ রক্ষায়, দেশের গাছপালা বাঁচানোর তাগিদে মহিয়ষী নারীদের ‘চিপকো মুভমেন্ট’ ধরনের কার্যক্রম কখনো থামবার নয়, কিছু রূপান্তর ঘটলেও এর বহিঃপ্রকাশ ঘটতেই থাকবে। এসব ঘটনার পরে মানুষ এখন পরিবেশ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎকে ভালবাসতে শিখছে।
উপরিউক্ত ঘটনাবলীর আলোকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, পরিবেশের প্রতি নারীদের অনুভব অনেক বেশি, সংসার ও জীবনের প্রতিও যেমন তাঁদের উৎসর্গ অপরিসীম। যে সমাজ তাদের এই অনুভব ও শক্তিকে মূল্যায়ন করে না সে সমাজে অভাবনীয় দুর্যোগ আসা খুবই স্বাভাবিক। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা অনেক বাধা উপেক্ষা করে নিরবে-সরবে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে জীবনব্যাপী কাজ করে গেছেন, উপদেশ রেখে গেছেন নিসর্গপ্রাণ নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতি। তিনি ছিলেন মৃত্তিকার মতো, যে মৃত্তিকার ভিতর থেকে আমাদের নতুন করে জন্মাতে হবে পরবর্তী প্রজন্মকে পথনির্দেশ করতে, সুস্থ সুন্দর সংস্কৃতিময় এক জীবনের লক্ষ্যে।