প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা মানে বহুগামীতা নয়

ভায়লেট হালদার
ভায়লেট হালদার - প্রধান সম্পাদক
10 মিনিটে পড়ুন
ছবি সংগৃহিত

মামুনুল হকের বিবাহ শুদ্ধ- বলেছেন হেফাজতের নেতারা।

মামুনুল হকের কোন বিয়েটি শুদ্ধ?
ক) আমেনা তাইয়্যেবা নামের নারী, প্রথম যাকে বিয়ে করেছিলেন?
খ) আমেনা তাইয়্যেবা নামে রয়েল রিসোর্ট রেজিস্টারে যার নাম লিখেছিলেন এবং দ্বিতীয় স্ত্রী দাবী করেছিলেন?

কোনটি আসলে আমেনা তাইয়্যেবা? এইটা পরিষ্কার করে নাই হেফাজতে ইসলামের নেতারা। কোনটি তার আসল আমেনা তাইয়্যেবা। মামুনুল হক যদি দ্বিতীয় বিবাহ করে থাকেন তবে এত লুকোচুরি কেন? গণমাধ্যমে আমরা জেনেছি তার প্রথম স্ত্রীর নাম তাইয়্যেবা এবং তিনি চার সন্তানের জননী। তাকে নিয়ে মামুনুল হক রিসোর্টে অবকাশ যাপন করেন নি। উনি দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন, ইসলামি বিধান মতে তিনি আরও কয়েকটি বিবাহ করতেই পারেন। তিনি যদি দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে অবকাশ যাপন করতে রিসোর্টে যান, তবে হোটেল রেজিস্টারের খাতায় প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা’র নামে দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম লিখলেন কেন?

স্থানীয় জনতার প্রশ্নের মুখে তিনি আল্লাহ’র নামে শপথ ও কসম খেয়ে ঐ নারীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা এবং নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবী করেছেন, একজন আলেমের পক্ষে এই কাজ কিভাবে সম্ভব?

- বিজ্ঞাপন -

আমেনা তাইয়্যেবা নামে মামুনুল হকের একজন স্ত্রী আছেন। বহু বছর ধরে তারা একসঙ্গে বসবাস করছেন এবং তাদের ঘরে চারটি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের আমরা জেনেছি, যে নারীকে নিয়ে তিনি হোটেলে ছিলেন তার নাম জান্নাত আরা ওরফে শাহিদা ইসলাম ওরফে ঝর্ণা। মামুনুল হক হোটেল রেজিস্টারের খাতায় কথিত স্ত্রী ঝর্ণার নাম না লিখে কেন প্রথম স্ত্রীর নাম লিখলেন? মামুনুল হক ঝর্না নাম্নী নারীকে দ্বিতীয় দাবী করলেও প্রথম স্ত্রী সঙ্গে ফোলানাপের দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার কথা সময় স্বীকার করেনি বরং বন্ধু শহীদুল ইসলামের বউ বলে পরিচয় দিয়েছেন এবং প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা’কে মিথ্যে বানোয়াট কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কেন করেছিলেন?

মামুনুলের বড়বোন টেলিফোনে মামুনুলের স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা’কে মিথ্যা কথা বলার তালিম দিয়েছিলেন কেন?

মামুনুল হক যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেই থাকেন তবে কি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়নি? তার প্রথম স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা কেন জানেন না মামুনুল আরও একটি বিবাহ করেছেন?
মামুনুল ও তার পরিবার কি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেন নাই?
দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে হোটেলে গেলেও সেখানে দ্বিতীয় স্ত্রীর নামের জায়গায় প্রথম স্ত্রীর নাম লিখে তিনি কি ঐ দ্বিতীয় স্ত্রীকে অপমানিত করে নাই?
মামুনুল হক যদি জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিবাহ করে থাকেন তবে তাকে স্বীকৃতি কেন দেন নাই?
তিনি মামুনুল হক যদি দ্বিতীয় বিয়ে করেই থাকেন তবে কি প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়নি?

তার স্ত্রী আমেনা তাইয়্যেবা তো জানেই না মামুনুল আরও বিবাহ করেছেন। মামুনুল ও তার পরিবার কি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে প্রতারণা করেন নাই?
আমেনা তাইয়্যেবা ও জান্নাত আরা ঝর্ণা নামের এই দুইজন নারীর সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। মামুনুলের নৈতিক স্খলনের শিকার এই দুইজন নারীই চরম ভুক্তভোগী।

- বিজ্ঞাপন -

মামুনুল হক বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারক ও ধর্মীয় রাজনীতিতবিদ হিসেবে পরিচিত একটি মুখ। তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের বিধি ও বিধান প্রচার করে বেড়ান। আজকে আমরা ইসলামিক বিবাহ বিধান সম্পর্কিত মামুনুল হকের প্রচার শুনবো এবং দেখবো তিনি কি বলেছেন?

https://www.facebook.com/bindu.udvid/videos/10223701339654981

হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের নরনারীর বিবাহ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর পর্ব একটি ভিডিও।

পালিয়ে বিয়ে করা জায়েজ কিনা?
মেয়ের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিবাহ করতে পারবে কিনা?
উত্তরে আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, না। মেয়েদের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া এভাবে বিবাহ করা ঠিক নয়। এসময় তিনি আল্লাহ’র রসুল (সাঃ) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যে নারী নিজের নিজের অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে,আল্লাহ’র রসুল ( সাঃ) বলেছেন তার বিবাহ বাতিল।

- বিজ্ঞাপন -

মামুনুল হক একজন ইসলাম প্রচারক এবং তিনি ইসলামের সকল বিধান ও অনুশাসন সমন্ধে জানেন। তাহলে তিনি কিভাবে অভিভাবকের বিনানুমতিতে দ্বিতীয় বিবাহ করলেন? তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী পিতামাতা ভাইবোন, আত্মীয় স্বজন কেউ জানেন না কবে, কখন, কিভাবে মামুনুল হক তাদের কন্যা জান্নাত আরা ঝর্ণাকে বিয়ে করেছেন। তার দ্বিতীয় বিবাহ সম্পর্কে জানেনা মামুনুলের স্ত্রী, পরিবার এমনকি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা।

তিনি কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অবকাশ যাপনের জন্য নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়্যাল রিসোর্টে একটি রুম ভাড়া নেন। হোটেল ‘রেজিস্ট্রেশন বইয়ে’ প্রথম স্ত্রীর নাম লিখেছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।

কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা হলেও রিসোর্টে রেজিস্ট্রেশন বুকে যে নাম মামুনুল লিখেছিলেন, সেটি ছিল আমিনা তাইয়্যেবা। পুলিশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ‘আমিনা তাইয়্যেবা’ হলেন মামুনুল হকে প্রথম স্ত্রী, যার ঘরে রয়েছে চারটি সন্তান।

হোটেলে অবকাশযাপনের সময় স্থানীয় জনগণ, পুলিশ ও সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মামুনুল হক তার সঙ্গে থাকা নারীর নাম বলেছিলেন আমিনা তাইয়্যেবা। কিন্তু মহিলা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ওই নারী জানান, তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। তার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।

আরও প্রশ্ন থেকে যায়!
মামুনুল হক দ্বিতীয় বিবাহ মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ আইন মেনে করেছিলেন কি?
যদি না করে থাকেন তাহলে তিনি আইন ভঙ্গকারী নন?

হেফাজতে ইসলাম কি রাষ্ট্রের কোন আদালতের অথোরিটি ?
অথবা হেফাজতে ইসলামের নেতারা কি মুসলিম পারিবারিক আদালতের সালিসী পরিষদের কেউ?
কিভাবে তারা মামুনুলের বিবাহ শুদ্ধ বলে রায় দিতে পারেন?

মামুনুল হক নিজের নিজের বিবাহ নিয়ে যে নাটক করছেন-তা কমবেশী সকলেই বুঝতে পারছেন। তথাকথিত প্রগতিশীল মুক্তমনাদের একটি অংশ মনে করে, ‘প্রাপ্তবয়স্ক দু’জন মানুষ নিজেদের সম্মতিতে একান্ত সময় কাটাতে চাইলে কিলবা শারীরিক মিলন করতে চাইলে সেখানে কারো মাথা ঘামানো কিংবা বাধার সৃষ্টি করা উচিত নয়।’- তর্কের খাতিরে মানলাম। কিন্তু প্রশ্ন হইলো এই প্রাপ্ত বয়স্ক দুইজন কারা হইবেন?
বিবাহিত দম্পতি?
অবিবাহিত/ অবিবাহিতা?
ডিভোর্সি নরনারী?
বিধবা/বিপত্নীক?
পৃথিবীর এমন কোন দেশ আছে, যেখানে কোন বিবাহিত দম্পতি একই ছাদের নিচে বসবাস করিয়া আরেকটা সঙ্গীর সহিত দৈহিক সম্পর্ক আইনত অনুমোদিত? অথবা একই সঙ্গে একাধিক যৌনসঙ্গী রাখার অনুমোদন দেয়? সেক্যুলার মুক্তমনাদের কাছে জানতে চাই।
যদি তারা এমন কোন আইন দেখাতে না পারেন তবে কি কারণে তারা বিবাহিত মামুনুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে?
তাহলে স্বঘোষিত সেক্যুলার গং বরং ইসলামের রীতি ও আইন অনুযায়ী একাধিক স্ত্রী বা যৌনসঙ্গীর পোষা বা রাখার পক্ষে?
কোন মুক্তমনা নারী একসঙ্গে একাধিক পুরুষ সঙ্গী রাখিতে ইচ্ছুক হয় তবে কোন মুক্তমনা পুরুষ কি তাহা মানিয়া নিয়া ঐ নারীর সঙ্গে থাকিবেন?

মামুনুল হক একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ। তিনি যদি কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় এটা তার ব্যক্তিগত ব্যপার। নিশ্চয়ই, যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ স্বাধীনভাবে জীবন যাপন করার এবং পছন্দের সঙ্গীর সঙ্গে অবকাশ যাপন করতে পারেন। এই প্রগতিশীলগণ এটা বলে না, বিয়ের নামে একজন মানুষকে স্ত্রী বানিয়ে গৃহবন্দী করে বাইরে এসে অন্য নারী নিয়ে স্ফূর্তি করা মানে ঘরের স্ত্রী’কে অসম্মানিত করা। বিয়ে মানেই তো শর্ত বা চুক্তি। সেই চুক্তি ভঙ্গ করা মামুনুল হকের দ্বিতীয় নারী নিয়ে ঘরসংসার অথবা সময় কাটানোকে সমর্থন করা কি ঘরের স্ত্রী নারীটিকে অপমান করা নয়? যদি মামুনুল হক অন্য নারীতে আসক্ত হন, তবে প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করছেন না কেন? ইসলাম মতেও যদি তিনি চান তবে প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়নি- যা আমরা গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি। আবার দ্বিতীয় নারীটিকে তিনি স্বীকৃতি দেননি। তিনি তাকে স্ত্রী দাবী করলে, নামটা কিন্তু প্রথম স্ত্রী’র নামই বলেছিল। এক্ষত্রে মামুনুল হক একজন প্রতারক, তিনি দুইজন নারীকে ঠকিয়েছে এবং তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

দুইজন নারী আলেম মামুনুল দ্বারা প্রবঞ্চিত হওয়ার পরেও বাংলাদেশের নারীবান্ধব সংগঠন ও নারীনেত্রীরা চুপ রয়েছেন কেন? আপনারা কি ভাবছেন, যারা প্রতারণা শিকার হয়েছে তারা যদি মামুনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের না করে তাহলে আমাদের কি করার আছে? আসলেই কিছুই করার নেই! ঐ নারীদের পক্ষে প্রতিবাদ করা উচিত বলে মনে করেন না আপনারা? এদেশের নারীর ক্ষমতায়ন বাড়ছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা সহ বিরোধী দলীয় নেতা সবাই নারী। তবুও এদেশের নারীরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মামুনুল হকে প্রথম স্ত্রী’র কথাই ধরুন, যে নারীর জীবন চারদেয়ালের মধ্যে বন্দী , যে নারী বাড়ির বাইরে কি ঘটছে সে বিষয়ে অবগত নন, সে তো তার মানবিক অধিকার সমন্ধেই সচেতন নন। নৈতিকতা বোধ বিবর্জিত স্বামীর অসৎ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে অবগত হওয়ার পরেও স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাকে মিথ্যা কথা বলছে, সেগুলো সে বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। সেই নারীর জন্য কি কিছুই করার নেই রাষ্ট্রের, সমাজের কর্মীদের?

সমাজ আপনাকে বলছি, আপনারা কালো কাপড়ের তাবু বানিয়ে তার ভেতরে নারীকে বন্দী করবেন। স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রী বেহেশত। স্বামীর কথা অবাধ্য হওয়া যাবে না। পতি বিনে গতি নাই। এরকম অসংখ্য বাক্য শুনিয়ে শিখিয়ে নারীকে গড়ে তোলেন, পরনির্ভরশীল করে রাখেন। বিয়ের পর স্বামীরা ধর্মের নামে, সামাজিক সংস্কৃতি ও প্রথার নামে স্ত্রীকে অবলা এক নারী বানিয়ে গৃহকোণে আবদ্ধ রাখেন। আবার স্বামীরা কারণে অকারণে স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবে। আপনারা তবুও চুপ থাকবেন! কেননা ওটা পরের ঘরের ব্যাপার! দুজন মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় বলে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন। থাকুন তবে।

আজকে ধর্মের দোহাই দিয়ে মামুনুল তার প্রথম স্ত্রী ও কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী’র প্রতি যে অবিচার করেছে- আগামীকাল আপনার কন্যাও একই অবিচারের শিকার হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক কোন ব্যক্তির স্বাধীনতা মানে একই সঙ্গে একাধিক যৌনসঙ্গী রাখা কিংবা বহুগামীতা নয়।

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
প্রধান সম্পাদক
প্রধান সম্পাদক (২০২১-২০২৩), সাময়িকী
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!