বেলুন
(এক)
আমার যৌনতা দেখি উড়ে যাচ্ছে ট্রাউজারবিহীন
উত্তরভারত হয়ে উত্তরপূর্বের কোনও দেশে;
মহান কবির খোঁজে পাঠহেতু ঝুলে আছে হুকে।
প্রগতির অহংকার কালো হয়ে মিশে যাচ্ছে যমুনার জলে!
আমার বাঁদিকে যারা রত্নাকর, দ্বৈপায়ন এবং বিধ ভাবে বর্তমান
শুনেছি তাঁদের কথা শিষ্ট ছাত্রের ভাবাবেশে
এবং ডাইনে যাঁরা; লিঙ্গশরীর হয়ে, বেলুনের মতো ভাসমান
খুঁজতে তাঁদের মুখ, পা-গুলোই বড় হয়ে ভাসে।
(দুই)
মরে যাচ্ছি ‘ক’ লিখতে; মেঘ এঁকে ফেললাম খাতায়
তখন দোয়াত ছিল, এখন তা মেঘের সামিল
মাস্টারের কথা মতো ‘ম’ লিখতে ‘মাইরি’ লিখেছি
‘ব’ লিখতে অসভ্যের অন্য কোনো শব্দ মনে আসে
এ হচ্ছে বঙ্গদেশ, ‘মা’ বললে মাসি মনে ভাসে!
বন্য ঘোটকী
অন্ধকারে ছোঁড়া ঢিল লক্ষগুণ শক্তি নিয়ে ফিরে এল উঠোনে আবার
ফুলে উঠল জলরাশি, দুলে উঠল বহুতল, ঝালাঅঙ্গদ্যুতিতে ত্রিতাল
পাল্লা দিচ্ছে তরঙ্গের মুহূর্মুহূ অভিঘাতে, আঙুলেরা এতই চপল!
আজ থেকে ধরা যাক ৩৬৩তম পুরুষের আগে এক দুপুর বেলায়
৮০তলা গাছেদের ঘিরে থাকা কোনো এক উপলখণ্ডকে কাছে পেয়ে
পাথর-কুড়ুল আর নিজেদের ধনুর্বান, পাতার পোশাক খুলে রেখে,
বাছুরের ঝলসানো মাংস আর সোম নিয়ে বসে পড়ল
সে যুগের প্রেমিক-যুগল…
সোনার উজ্জ্বল রং দুজনার খোলা চুল হাওয়াতে ছড়িয়ে দিয়ে কাছে ঝর্ণায়
ঘন হয়ে মিশে গেল পিঙ্গল বর্ণের দেহ; সাক্ষী থাকল শুধু বন, নদী ও পাহাড়
ছেলেটি সে পুষ্পধন্বা, মেয়েটির নাম রতি; ভাই-বোন, যাকে ঘিরে প্রকৃতি উত্তাল!
ভোল্গার তট ছঁয়ে চঞ্চলতা উঠে এল ‘জন-দম’ মধ্য থেকে ছড়াল হাওয়ায়
এখানে নারীরা কারো অধিকারভুক্ত নয়; বুনো ঘোটকীর মতো দুরন্ত, স্বাধীন
সন্তানেরা সকলেই দেবত্বের অধিকার, ব্রহ্মাণী-জনের অংশ, পবিত্রতা অগ্নিশিখার …
বন্দী ছড়ার গান
অন্ধ আকাশ মেঘের কাছে চাইতে গেলাম বর
মা বলল ‘খোকন সোনা, এবার শুয়ে পড়’
মেঘ ডাকল ‘আয় কাছে আয়,দিচ্ছি ফোটা ফোটা
মধুর সমান জলের ধারা, মুক্তো গোটা গোটা
রাত বেড়ে যায়, ঘুম আসে না, হঠাৎ ডাকে পাখি
মেঘের কোলে মুখ লুকিয়ে সুর্য দিল উঁকি
মাথার উপর জানলা দিয়ে দেখি পাতার ঘর
একটা চড়ুই দেখতে পেলাম অনেকদিনের পর
কাচবন্দী বাইস তলায় বন্দী আমি একা
আন্টি এসে বকে শুধু, পাচ্ছিনা মা’র দেখা
অন্ধ আকাশ ঝলক দিচ্ছে, বলছে ‘খোকা, পড়’
আমি শুনছি মায়ের ডাক ‘খোকা, শুয়ে পড়’
স্বপ্ন দেখা জলে
তখন হাতের সামনে শুধু এক নোংরা বওয়া নদী
সেই জলে স্বপ্ন দেখা, সেই জলে আমার শর্বরী
আমার গোপন অঙ্গে গা এলিয়ে মৃদু বলে ওঠেঃ
এখনো সমর্থ আছো! ছবি আঁকছ, দেখি আকছার
তোমার ও সৃষ্টি-দেশে রেখে দিচ্ছি আমার সংসার
আমি যে নিদাঘ প্রিয়, উষ্ণ দেশে জন্মেছি যেহেতু
আমার শরীর ভরা নুন শুধু; নুন আর নুনের পাহাড়
তা ডিঙোতে পার যদি, নিয়ে যেতে পারি সেইখানে
যেখানে বল্মীক মধ্যে ঢেকে যায় অনাবৃত পুরোটা শরীর
যেখানে গুহার মধ্যে হিম থেকে জন্ম হয় আগুন নদীর
সাগরদাড়ির থেকে কপোতাক্ষ নদীজলে ডুবে উঠে ভেসে
ছুঁয়ে যেতে পারি ভাঙা লাল শালিখের ডানা শঙ্খচিলের ছদ্মবেশে।
আদিম রাক্ষস
দু’লক্ষ বছর প্রায় এক-ই ভাবে বসে থাকা ঘুমন্ত সে আগ্নেয়গিরিতে
কটু গন্ধ গন্ধকের, সাদা ছাই, তরল ধাতুর ধারা এখন কঠিন
গড়ানোর জমা দাগ আপাদ-মস্তক দেখে অনুভূত হ’তে থাকে
কোনোদিন এই খানে কী ভীষণ রক্ত ঝরে ছিল! হয়তো বা
অর্ধদগ্ধ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নিয়ে খেলা করেছিল এক আদিম রাক্ষস!
একটা অদৃশ্য চোখ টুকে রাখছে ছবি তার, তারপর ছুটে যাচ্ছে আরো…
দৌড়তে দৌড়তে থাকে কঠিন আগ্নেয় শিলা, ছোট নুড়ি,
তার উপরে সদ্য ওঠা ঘাস
কলম ছলকে খোঁজে ছোট ছোট ঝোরা গুলো, ফড়িং গুলোর ওড়াউড়ি।
কাগজে চলকে যায় বিখ্যাত লোকের বাণী, রাংতা মোড়কে থাকা মন
কাচের জারের মধ্যে ফরমালিনে ডুবে থাকা হৃৎপিণ্ড নিয়ে খেলা করে!
মাটি
খুব বড় হয়ে যাচ্ছে ছায়ার নিচে থাকা সমস্ত ছায়ারা
বেঁটেদের বেঁটে বলা সৌজন্যবিরোধী, তবু মাঝে মাঝে
স্পষ্ট করে না বললে পপআপে খুলে যায় পুরোটা ঝিনুক
তখন আর চিহ্নগুলো পথিকআলোয় দৃষ্টিগোচরে থাকে না
এরকম হয় জেনে অণু-পরমাণুদের সেই মৌলিক গঠন
একেক রকম থেকে একসুরে বেজে ওঠে পিঁপড়েবৃত্তিতে
লাভের গুড়ের ভাগ কারা খেয়ে যাবে রোজ একথা ভাবার
জন্য তৈরি চেয়ার হাত বোলায় দাঁড়িতে: হাঃ মাটি তো আমার!