চীন তাইওয়ানে হামলা চালানোর মহড়া চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভূখণ্ডটি। আর এরপরই ‘উস্কানিমূলক’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ পদক্ষেপের জন্য বেইজিংকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
একইসঙ্গে বেইজিং তাইওয়ানের ‘স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার’ চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছে হোয়াইট হাউস। রোববার (৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মূলত মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির নেতৃত্বে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলের তাইওয়ান সফরের পরে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন এই সফরকে নিজেদের সার্বভৌমত্বের দাবির প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে। কারণ দ্বীপ ভূখণ্ডটিকে নিজেদের প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, চীনা জাহাজ এবং যুদ্ধবিমানগুলো শনিবার তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক হামলার মিশন চালিয়েছে। এর মধ্যে কিছু যুদ্ধবিমান আবার (তাইওয়ান প্রণালীর) মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। মূলত এই প্রণালী একটি অনানুষ্ঠানিক বাফার যা দুই পক্ষকে পৃথক করেছে।
বিবিসি বলছে, শনিবার চীনের মহড়ার সময় তাইওয়ানের যুদ্ধবিমানগুলো অবশ্য তাদের সতর্ক করার জন্য এগিয়ে গিয়েছিল। তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মহড়াগুলো ছিল এই দ্বীপে হামলার অনুকরণ।
বেইজিং অবশ্য সর্বশেষ মহড়া সম্পর্কে এখনও মন্তব্য করেনি। গত বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশে আকাশ ও সমুদ্রে শুরু হওয়া এই সামরিক মহড়া রোববার পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে তাইওয়ান প্রণালী ও এর আশপাশে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই ধরনের কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তাইওয়ানের স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। এগুলো উস্কানিমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং ভুল হিসাব-নিকাশের ঝুঁকি বাড়ায়।’
তবে চীন বলেছে, ন্যান্সির পেলোসির সফর তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে ‘গুরুতর হুমকি’ মুখে ঠেলে দিয়েছে। আর এই কারণে গত শুক্রবার পেলোসি এবং তার পরিবারের ওপর এই সফরের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেইজিং।
বেইজিং আরও জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, সামরিক আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রচেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতা বন্ধ করেছে চীন।
উল্লেখ্য, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ান পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ, যা তাইওয়ান প্রণালীর পূর্বে চীনা মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত। অবশ্য তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং।
গত বছরের অক্টোবরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, মূল ভূখণ্ডের সাথে তাইওয়ানের পুনরেকত্রীকরণ অবশ্যই সম্পূর্ণ করতে হবে। এজন্য সামরিক পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টিও খোলা রেখেছে বেইজিং।
অন্যদিকে চীনের প্রদেশ নয়, বরং নিজেকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে মনে করে থাকে তাইওয়ান। চীনা প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের জবাবে সেসময় তাইওয়ান জানায়, দেশের ভবিষ্যৎ তার জনগণের হাতেই থাকবে।
তবে তাইওয়ানকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে বেইজিংয়ের চেষ্টার কমতি নেই। তাইওয়ান উপত্যাকার চারদিকে সামরিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে চীন। এমনকি গত বছরের মতো চলতি বছরের শুরু থেকেই তাইওয়ানের এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (এডিআইজেড) লঙ্ঘন করে আসছে বৈশ্বিক এই পরাশক্তি দেশটি।
তবে এরইমধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে তাইওয়ানের রাজধানী তাইপে পৌঁছান ন্যান্সি পেলাসি। ১৯৯৭ সালের পর এটি কোনো মার্কিন শীর্ষ রাজনীতিকের তাইওয়ান সফর। এই সফরকে কেন্দ্র করে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠেছে।
দফায় দফায় হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই স্পিকারের তাইওয়ান সফরকে মোটেই সহজভাবে নেয়নি চীন। আর তাই ন্যান্সির সফরের প্রতিক্রিয়ায় রাতেই তাইওয়ানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয় চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান দেশটির মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যদিও তাইওয়ানকে বরাবরই নিজেদের একটি প্রদেশ বলে মনে করে থাকে বেইজিং। এরপর থেকে তাইওয়ান নিজস্ব সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছে।