নিজস্বী
ছেলেটা ফেসবুকের ওয়ালে কতরকমের ভিডিও আপলোড করে। কিন্তু মনপছন্দ মত লাইক কমেন্ট পায় না। তবু সে চেষ্টা করে মরিয়া হয়ে। বন্ধুরা তাকে বলে, নিজস্বীর পেছনে ছুটিস না, এটা নেশার মত। তবু চোরে কি শোনে ধর্মের কাহিনী! শেষে ছেলেটা এক নারকীয় সেলফি তোলার সঙ্কল্প করল। নিজে ছুটন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলল। কত লোকে তার বোকামির ভিডিও তুলল। কেউ কেউ চিৎকার করে তাকে সরে যেতে বলল। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ।
ছেলেটার ভিডিও ভাইরাল হল কিন্তু সেকথা সে জানতে পারল না।
সেই ছুটন্ত ট্রেনের নিচে তার লাশটা তালগোল পাকিয়ে পড়ে রইল।
পিকনিক
পিকনিকে যাওয়ার সময় রাজু গাড়ির জন্য গড়াগড়ি দিল কিন্তু পেল না। অগত্যা অপেক্ষায় রইল। বাড়িতে দাদার সঙ্গে চটির জন্য চটাচটি হয়েছে। সকলে পৌঁছে গেছে অজয়ের পাড়ে। মোবাইলে মুভ করছে পিকনিকের লাইভ ছবি তার বন্ধু। দর কষাকষি করে আনা মাংসকষা খাচ্ছে বন্ধুরা। রাজু এখনও ভ্যানের জন্য ভ্যানভ্যান করেই চলেছে। রাজু বলছে মোবাইল ফোনে, আমার আর পিকনিকে যাওয়া হবে না বন্ধু…
সংসার
দাম্পত্যের প্রায় কুড়ি বছর পার হল। কিন্তু কোন বিষয়ে দুজনে এখনও একমত হতে পারে না। ছোটখাটো ব্যাপারে অশান্তি লেগেই আছে। কিছুদিনের মধ্যে বউটার বাবা মরে গেলেন। ছেলেটাকে নিয়ে বউটা বাবার বাড়ি গেল। এখন লোকটা একা একা কথা বলে নিজের সঙ্গে। ঝগড়া করার সঙ্গি নেই। কথা বলার মত সঙ্গি নেই। এইভাবে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেল নিজে রান্না করে খেয়ে। তারপর বুঝতে পারল একা থাকার জন্য কতটা মনের জোর প্রয়োজন। অশান্তি আর সংসারের ঝামেলায় বউটাকে চেনা হয় নি তার।
বউটা বাড়ি এলো একছাট বৃষ্টির শীতলতা নিয়ে…
বিচারক
রোজকার সূর্য ওঠার মত বেলি ভোরে উঠে দরজায় সামনে জল দেয়,ঝাঁট দেয়, ফুল তোলে। তারপর চা ফোটে। শৃঙ্খল আর শৃঙ্খলা শব্দদুটি বড় দায়িত্বের কাছাকাছি। ফুল ফোটে, সূর্য ওঠে এদেরও বোধহয় নিয়মের শৃঙ্খল আছে। যদি রাতে সূর্য ওঠে আর দিনে চাঁদ তাহলে কী দোষ হত। উত্তর খোঁজে বেলি। এখানে তার শৃঙ্খল নেই, কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সে ভাবে, যে মেয়েটি বাবা-মা’কে নিজের শ্রদ্ধা উজাড় করে দিয়েছিলো, সে আলাদা করে ঈশ্বর চেনে না, আলোকিত পূর্ণিমার মত উজ্জ্বল দুটি চোখে
মা বাবাকে দেখতো, তারপর সেবাব্রত তার কাছে আনন্দময়… তারপর সে এক আলোর দূত হলো। অথচ দেবতা বলতে সে বোঝে মানুষ
জোছনার মত উৎসারিত আলো তার মুখমন্ডলে
মানুষ তাকে মানুষ বলছে না। দেবতার আসনে বসেও সে দেবদেবী বোঝে না
ও বোঝে মানুষ,প্রাণী, কীটপতঙ্গ আর নির্জন শিশিরের শিকল…
তাচ্ছিল্যের হাওয়ায় ট্রেনে, বাসে বিকোয় দু একটি জীবন
পোলিও রোগী, অন্ধ, পাগল চটের চুলের রাশি। তবু ওদের দেহে আছে যোনী।হাড় কংকালসার দেহে ফুটে ওঠে কামের গভীরতা।ফোটোগ্রাফার ছবি তোলে আন্তর্জাতিক নামের লোভে পুরুষ সে তো শাসক, দেবদূত। অন্ধকার আলোছায়া ছবি দেখে, রক্তমাখা যৌন আনন্দ। লাখ লাখ অর্থে বিকোয় অপরিণত উপচে পড়া পেটের উদ্দিপনার ছবি। শাশ্বত কাল প্রহর গোণে, বিবেক নিদ্রায় অবতীর্ণ। মূঢ সংসার, খিদের পৃথিবী মৃত্যু মাখে। বিষাদ দুনিয়া জীবনের খোঁজে। মৃত্যুকে ছবি করে রাখে…
তারপর একদিন বেলি ধর্ষিতা হয়। সে ধোঁয়ার মত বেঁকে বেঁকে সমাজকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। বিচারক হার মানে। ল্যাংটা সমাজের মুখোশ খুলে যায় নিমেষে।
পুনর্মিলন
সুমনা তার পরিবার নিয়ে ভিড় ট্রেনে উঠে বসার জায়গা খুঁজছে। বর আর মেয়েকে বসিয়ে সুমনা পরের কামরায় গেল সিট খুঁজতে। হতাশ হয়ে সে দাঁড়িয়ে রইল।ওপাশ থেকে সুমনার বর বলল,বসার জায়গা দেখে নাও। আমি মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছি।
সুমনা বলল,বেশ।
হঠাৎ একটি লোক উঠে বলল,এখানে বোসো। আমি দাঁড়াই।
সুমনা অবাক হল লোকটার মুখ দেখে। এ যে রিন্টুদা, তার পূর্ব প্রেমিক।
অসমাপ্ত প্রেম আবার দুজনকে মিলিয়ে দিল কিছুক্ষণের জন্য।
পুজোয় প্রথম প্রেম
গতকাল পুজোর শেষে ধুনুচি নাচ চলছিলো দুর্গামন্ডপে। রিতা নাচের ফাঁকে দেখে নিলো তপুর চোখ। নিস্পলক দৃষ্টি তপুর চোখে। গিলছিলো রিতার নাচের ভঙ্গিমা। তারপর তপু গিয়ে একটা ঢাক বাজাতে শুরু করলো। কখন যে রিতার নাচ শেষ হলো তপু জানতেই পারলো না। তখন নাচ শুরু করেছে পাড়ার ক্যাবা মস্তান। ঢাকের তাল কাটতেই তপুর কপালে জুটলো তিরস্কার। রিতার তখন দারুণ হাসি। তার বান্ধবীরাও হাসছে। তপু বাজানো বন্ধ করে পাশে দাঁড়ালো। সে মনে মনে ভাবলো, অসুরের মত দেখতে ছেলেগুলো কেন মেয়েদের এত প্রিয় হয়। পাশে আমি ছিলাম। বললাম, পাগলা পুজো শেষ হয়ে যাবে। যা বলার এখনি বলে দে রিতাকে। নইলে পরে পস্তাতে হবে। তপু ঢাকের কাঠি দুটো নিয়ে গিয়ে রিতাকে বললো, তুমি আর একবার নাচো না প্লিজ। সঙ্গে সঙ্গে আবার হাসি। তারপর থেকে লজ্জায় প্যান্ডেল ছেড়ে পালিয়ে বাঁচলো। জানিনা কবে যে তপু সাবালক হবে।