রাজশাহীতে নতুন পাটের বাজার চাঙ্গা। শুরুতে পাটের কাঙ্ক্ষিত দামে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকায়। গত বছর ছিল দুই হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা। শুরুতে দর বেশি হওয়ায় পাট মৌসুমের শেষের দিকে দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্ষা-খরায় চাষিরা পাট জাগ (আঁশ ছাড়ানোর প্রক্রিয়া) দেওয়ার ক্ষেত্রে বেকায়দায় পড়েছিল। খাল-বিল-পুকুরে পানি ছিল না। ফলে পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছিল। মধ্য শ্রাবণের বৃষ্টিতে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। পাট জাগ দেওয়ার সুবিধা বৃদ্ধি এবং বাজারে পাটের মূল্য পাওয়ায় চাষিরা এখন পাট চাষে উৎসাহিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিনে জানা গেছে, রাজশাহী পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে নতুন পাট নিয়ে চাষিরা এসেছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি চলছে। এখন হাট-বাজারে পাটের আমদানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাটকলগুলোতে বেড়েছে পাটের চাহিদা। এ কারণে প্রতি হাটেই পাটের দাম পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাটের ভালো দাম পেয়ে খুশি পাট চাষিরা। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাও ভালো মুনাফা পাচ্ছেন।
পবা উপজেলার নওহাটা মহানন্দাখালী এলাকার কৃষক সাজু ১০ মণ পাট বাজারে এনেছেন। বিক্রি শেষে তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এ বছর ৫ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে দশ মণ পাট পেয়েছি। পানি সংকটের কারণে জমি থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে। অন্যান্য বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে ১৫ হাজার টাকা খরচ হতো। এ বছর ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও খরচ বাদ দিয়ে দশ মণ পাটে ১৪ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।”
পবা উপজেলার পুঠিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন বলেন, বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি কম হয়েছে। তাই খাল বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই। উচু জমিতে বেশি পাট হয়। এ পাট কেটে নিচু এলাকার খাল-বিলে জাগ দিতে হচ্ছে। এতে খরচ বেড়েছে। কিন্তু পাটের ভালো দাম পেয়ে এ কষ্ট লাঘব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তোষা পাটের ৮০টি পাট কাঠির একটি বান্ডিল ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে পাট জাগ, পরিবহন, বাছাই ও শুকানোসহ সব ধরনের খরচ উঠে আসছে। সব মিলিয়ে পাটে এখন আমাদের সুদিন ফিরেছে।
নওহাটা হাসেন জুট মিলের এক্সপোর্ট ম্যানেজার পার্থ সরকার বলেন, কোরবানির ঈদের আগেই হাট-বাজারে নতুন পাট আসতে শুরু করে। তখন প্রতিমণ পাট দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছিল। ঈদের পর পাটকলগুলো পাট কিনতে শুরু করে। তারপর থেকেই পাটের দাম বাড়তে শুরু করেছে। জুটমিলগুলো এভাবে পাট কেনা অব্যাহত রাখলে পাটের বাজার আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা তার।
নওহাটা জুট মিলের পাট সরবরাহকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, পবা অঞ্চলে বেশ কিছু জুট মিল গড়ে উঠেছে। এরা প্রতিযোগিতা করে পাট কিনতে মাঠে নেমেছে। এ কারণে পাটের দাম বাড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার ভালো রয়েছে।
রাজশাহী পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক মো. নাদিম আক্তার জানান, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে তোষা পাট আবাদ হয়েছে। গত বছর ছিল ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে জেলার ২৫ ভাগ পাট বাজারে এসেছে।
বাজারে পাটের দামের বিষয়ে তিনি জানান, পাট মৌসুমের শুরুতে নওহাটা বাজারে প্রতিমণ পাট দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে বানেশ্বর হাটে প্রতিমণ পাট দুই হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর প্রতিমণ পাট মৌসুমের শুরুতে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে এবং মৌসুমের শেষের দিকে তিন হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তার আগের বছর পাট মৌসুমের শেষের দিকে ৬ হাজার টাকা দরে পাট বিক্রি হয়েছিল।