কম দূরত্বে চলাচল করতে একসময় একমাত্র অবলম্বন ছিল সাইকেল। ক্রমান্বয়ে সভ্যতার উন্নতিতে যন্ত্র যখন সহজলভ্য হলো সাইকেল তখন পরিণত হলো শরীরচর্চার, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বাহন হিসেবে। যদিও দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো তুমুল জনপ্রিয় এই বাহনটি। শিক্ষার্থীদের স্কুলযাত্রায়, সন্ধ্যা বা বৈকালিক হাটবাজারে যেতে এখনও সাইকেল গ্রামের অনেক বাড়িতেই পাওয়া যাবে। শহরের ক্ষেত্রে পার্কে বা সকালে ফাঁকা রাস্তায় ব্যায়ামের কাজে ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্র এই পদ্ধতিটিকে অনুমোদনও করে। মস্তিষ্কের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক উপকারও পাওয়া যায়। তবে, রাজধানী ঢাকায় অসহনীয় যানজটের কারণে সাইকেল অফিস গমনে সবচেয়ে দরকারি বাহনে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সাইকেল চালাতে জ্বালানি খরচ নেই, ফলে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে ব্যয়ও তেমন নেই।
স্বাস্থ্য এবং শারীরিক দক্ষতা বাড়াতে সাইকেল চালানো সবচেয়ে বড় উপকারী। সাইকেল চালনার সময় আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশিগুলো বিভিন্ন মাত্রায় কাজে অংশগ্রহণ করে। ফলে, পেশির গঠন দৃঢ় হয়। অন্য অনেক খেলাধুলার তুলনায় সাইক্লিংয়ে তেমন কোনো শারীরিক দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। বেশির ভাগ মানুষ সাইকেল চালাতে জানে এবং একবার শিখে ফেললে কেউ তা ভোলে না। আবার সাইকেল চালানো বারবার অনুশীলন করে আয়ত্ত করতে হয় না। তাই এটি অন্য অনেক ব্যায়াম বা শারীরিক অনুশীলনের চেয়ে সহজ। সাইকেল চালানোর ফলে পথ এবং শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করার কারণে মানুষের ধৈর্যশক্তি বেড়ে যায়।
অর্থ ব্যয় না করেই কম দূরত্বের গন্তব্যে গমন করা যায়। বিশেষ করে যানজটের নগরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে সাইক্লিং একটি চমৎকার মাধ্যম হতে পারে। এছাড়া সাইক্লিং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ বা হ্রাস করার একটি ভালো মাধ্যম। কারণ এটি হজমশক্তি এবং খাবারের রুচি বাড়ায়, পেশি গঠন করে এবং শরীরের চর্বি পোড়ায়। সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি একটি স্বাস্থ্যকর পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস যেকারও ওজন কমাতে সহযোগিতা করবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন সাইক্লিংয়ের পাশাপাশি সেটির পরিমাণ বাড়ালে তা যেকারও জন্য উপকারী হতে পারে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে চলছে। শারীরিক অনুশীলনের অভাবে তা হয়ে থাকে বলে মনে করা হয়। ফিনল্যান্ডের একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে সাইক্লিং করা লোকের ৪০% এর বেশি ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
মানসিক অসুস্থতা, বিষণ্নতা, চাপ ও উদ্বেগ নিয়মিত সাইকেল চালানোর মাধ্যমে হ্রাস করা যেতে পারে। সাইকেল চালাতে মন স্থির রাখতে হয়, ব্যালান্স রাখতে হয়। মনোবিদেরা বলেন, সাইকেল চালালে মন একাগ্র থাকে। অবসাদ দূর হয়। ফুরফুরে হয় মন।
(ঢাকা ট্রিবিউন)