চীনের সামরিক হুমকি পায়ে ঠেলে তাইওয়ান সফরে গেছেন মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। তার এই সফরে বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং এতে করে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র উত্তেজনা।
আর এর মধ্যেই এবার মিয়ানমার সফরে আসছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। বুধবারই (৩ আগস্ট) দেশটিতে সফর করবেন তিনি। রুশ বার্তাসংস্থা তাসের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। বন্দি করা হয় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে। এরপর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে।
তাস জানিয়েছে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বুধবার মিয়ানমার সফর করবেন। গত বছর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে এটিই সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল সফরগুলোর একটি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার ব্রিফিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে রুশ এই বার্তাসংস্থা বলেছে, সফরে সের্গেই ল্যাভরভ মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মং লুইনের সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং রাজধানী নেইপিদোতে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সাথে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
জাখারোভা আরও বলেন, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরের সময় উভয়পক্ষের বৈঠকে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং মানবিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী দমন অভিযান শুরু করার পর থেকে বহু পশ্চিমা দেশ থেকে বিচ্ছিন্নতা ও নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণই রয়ে গেছে। এমনকি সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং মস্কো সফর করার পরে উভয় দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর হবে।
এছাড়া মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ টমাস অ্যান্ড্রুস ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, মিয়ানমারের জান্তাকে ড্রোন, দুই ধরনের ফাইটার জেট এবং দুই ধরনের সাঁজোয়া যান, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছে রাশিয়া।
মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে এবং বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নিতে মিয়ানমার সফরের পর কম্বোডিয়া যাবেন ল্যাভরভ।
তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ভূখণ্ডটিতে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরকে ঘিরে কার্যত মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে চীন-যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া পেলোসির তাইওয়ান সফর ইস্যুতে প্রকাশেই চীনের পাশে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে দেশটি।
মঙ্গলবার মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসির সফর উস্কানিমূলক এবং এর জেরে এশিয়ার এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।