কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণ করেছে ডাকাতদল। লুট করা হয়েছে যাত্রীদের সর্বস্ব।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দিবাগত মাঝরাত থেকে বুধবার ভোরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার ভোরের দিকে ডাকাতরা টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় বাসটি ফেলে পালিয়ে যায়।
ধর্ষণের শিকার নারী বুধবার বিকেলে মধুপুর থানায় ধর্ষণ ও ডাকাতির অভিযোগে মামলা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে পুলিশি তৎপরতা।
ভুক্তভোগীদের বরাতে পুলিশ সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঈগল পরিবহনের একটি বাস অন্তত ২৪ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। রাত ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে খাবারের বিরতি নেয় বাসটি। বিরতি শেষে আনুমানিক পাঁচ মিনিট চলার পর বাসটি থামিয়ে তিন যাত্রীকে তোলা হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর আরও চার যাত্রী ওঠেন। কিছুদূর যাওয়ার পর নির্ধারিত স্টেশন ছাড়া তৃতীয় দফায় বাসটিতে ওঠেন আরও তিনজন।
রাত আনুমানিক ১২টার দিকে যাত্রীদের প্রায় সবাই যখন ঘুমে কাতর, বাসটি তখন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাটিয়াপাড়া এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। কিছুদূর যাওয়ার পরে বাসটিকে ঘুরিয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী হয়ে মধুপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরই মধ্যে চলে হাত-মুখ ও চোখ বেঁধে জিম্মি পর্ব। নিয়ে নেওয়া হয় যাত্রীদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন, টাকা ও স্বর্ণালংকার। পরে ডাকাতরা গাড়িটির এক নারী যাত্রীকে গণধর্ষণ করে।
দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ক্ষান্ত হয় ডাকাতরা। তখন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া জামে মসজিদের পাশে একটি বালুর ঢিবিতে বাসটিকে উল্টে ফেলে পালিয়ে যায় তারা। বাসটির ইঞ্জিন তখনও চলছিল, ভেতরে ছিলেন যাত্রীরা।
বাসযাত্রীরা জানান, টানা তিন ঘণ্টা নির্যাতনের পর মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া এলাকায় বাসটি থামিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়। মুহূর্তেই চোখ-মুখ ও হাত বাঁধা যাত্রীদের নিয়ে বাসটি রাস্তার পাশের বালুর ঢিবিতে কাত হয়ে পড়ে। তখন স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করেন।
বাসটির চালক, সুপারভাইজার বা সহকারীকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ঈগল পরিবহনের ওই বাসটি ২৪ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে। পরে তিন দফায় যাত্রীবেশে ডাকাতদলের ১০ সদস্য গাড়িতে ওঠে। তারাই টাঙ্গাইলের কাছাকাছি এসে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ এবং সবার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, চালক ও তার সহকারীর গলায় ছুরি ধরে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাতরা। ডাকাতির সময়কালে একটি মাইক্রোবাস ওই বাসটিকে অনুসরণ করছিল বলে জানা গেছে। ডাকাতির পর ডাকাতরা ওই মাইক্রোবাসে করেই পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগসহ একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। দ্রুতই অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী নারী টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হবে।
এ ব্যাপারে মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বলেন, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৫-২৬। আশা করি দ্রুতই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
বাসটির কোনো কর্মীকে পাওয়া যায়নি। ধর্ষণের শিকার নারী ছাড়া বাকি যাত্রীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন বলে জানান তিনি।