সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এইডস (এইচআইভি) রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন স্থানীয়রাও। গত এক বছরে কক্সবাজারে ১১৫ জন রোহিঙ্গা ও ১০জন বাংলাদেশির এইডস শনাক্ত হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এসব রোগী শনাক্ত হয়েছে।
২০১৫ সাল থেকে জেলায় এ পর্যন্ত এইডস রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১০ জন, এদের মধ্যে রোহিঙ্গা ৬১২ জন। আর সব মিলিয়ে মারা গেছেন ১১৮ জন।
এইচআইভি-এইডস নিয়ে কাজ করা এনজিও ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালের এইচআইভি ট্রিটমেন্ট সেন্টার সূত্রে পাওয়া গেছে ভয়াবহ চিত্র।
তথ্য মতে, কক্সবাজারে আশঙ্কাজনক বিস্তার ঘটছে এইডসের। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এইডস রোগের বিস্তার ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও রয়েছে এইডস ঝুঁকিতে। পেশাদার-অপেশাদার যৌনকর্মী ও মাদকাসক্তদের অবাধ যৌনাচারের কারণে এ রোগ বাড়ছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও এইচআইভি ফোকাল পারসন ডা. আশিকুর রহমান বলেন, “২০১৫ সাল থেকেই কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি বা এইডস স্ক্যানিংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে এইডস নির্ণয়, কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের বাইরে যারা আছেন, তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসার আওতায় আনার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। গত ৬ জুলাই পর্যন্ত ৭১০ জনের শরীরে এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। হিজড়ার শরীরেও এইচআইভির জীবাণু পাওয়া গেছে। এ রোগে জেলায় আক্রান্ত ৬১ রোহিঙ্গাসহ ১১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।”
তবে, এইডস আক্রান্ত জীবিতরা কে, কোথায়, কোন অবস্থায় আছে তার কোনো হিসাব সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই।
ডা. আশিকুর রহমান বলেন, “আমাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা ভিন্ন রোগ নিয়ে আসছে। চিকিৎসা পরীক্ষায় ধরা পড়ছে এইচআইভি।“
এইডস/এইচআইভি প্রতিরোধে জেলা সদর হাসপাতালে নানা উদ্যোগ ছাড়াও মাঠপর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উখিয়া ও টেকনাফে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ১২টি টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, কক্সবাজার এইডসের জন্য এখন বিপজ্জনক এলাকা। রোহিঙ্গারা যে হারে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সে তুলনায় শনাক্ত করা হচ্ছে কমই। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
সূত্র বলছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা তরুণীর যাতায়াত। তারা অনিরাপদভাবেই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও স্থানীয়দের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করছে। এতে কক্সবাজারে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা যৌনকর্মী ছাড়াও পর্যটন শহর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টাকা আয়ের উদ্দেশ্যে যৌনকর্মীদের ব্যাপকহারে কক্সবাজার আগমনও এইডস বিস্তারের আরেকটি অন্যতম কারণ।
কক্সবাজারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “এইচআইভির বিস্তারের নেপথ্যে রয়েছে অসচেতনতা। রয়েছে সামাজিক নানা কুসংস্কার। এসব মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অন্য সব রক্ষণশীল সমাজের মতোই কারো দেহে এইচআইভি পাওয়া গেলে তাকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হচ্ছে। যাদের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে তারাও চিকিৎসা নিতে গড়িমসি করে।”
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “রোহিঙ্গাদের সঙ্গে অনেক স্থানীয় যৌন সম্পর্কে জড়াচ্ছে।এছাড়াও কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোন এলাকায় শত শত রোহিঙ্গা নারীদের অবাধ বিচরণ। সেখানেও যৌনকর্মে লিপ্ত হচ্ছে স্থানীয়সহ রোহিঙ্গারা। যদি সচেতনতা বাড়ানো যায়, তাহলে এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি।”