তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য পেট্রোবাংলাকে দুই হাজার কোটি টাকা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে ঋণ হিসেবে এই তহবিল দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানটিকে।
জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পেট্রোবাংলার তহবিল সংকটে পড়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে অর্থ মন্ত্রণালয় এই অনুমোদন দিয়েছে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এলএনজির দাম ১০ মার্কিন ডলার এর কম থেকে বেড়ে ৩৯ ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, এ থেকে বোঝা যায় যে সরকার জ্বালানি খাত নিয়ন্ত্রণে গুরুতর সংকটে রয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগ আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে কোনো এলএনজি আমদানি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে গ্যাস-চালিত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস করতে হবে, যার কারণে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো পরিকল্পিত লোডশেডিং করতে বাধ্য হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা এখনও দীর্ঘমের্ঘয়াদী চুক্তির অধীনে ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি আমদানি অব্যাহত রেখেছে। সেখানে মূল্য নির্ধারিত রয়েছে, তবে বিভিন্ন শর্তে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন পেট্রোবাংলা আবার নতুন তহবিল ব্যবহার করে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা শুরু করবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে গ্যাস আমদানিতে এই তহবিল ব্যবহার করবে; তা এখনও স্পষ্ট নয়।
কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আদেশে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) তৈরি করা হয়েছিল। এটির মাধ্যমে দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে এ তহবিল তৈরির জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে গ্যাস বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার অনুমতি পায় পেট্রোবাংলা। এই ধরনের তহবিলের সব টাকা জ্বালানি বিভাগের খরচ করার কথা। কিন্তু পেট্রোবাংলা কয়েকটি ভিন্ন খাতে এই তহবিল ব্যবহার করে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশে সরকারি কোষাগারে বেশ কিছু টাকা জমা রাখে।
বর্তমান ব্যবস্থা অনুযায়ী জ্বালানি বিভাগ বা পেট্রোবাংলা কোনো কাজে তহবিল ব্যবহার করতে চাইলে অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
তবে বিইআরসি জ্বালানি বিভাগের এই ধরনের তহবিল পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে। বিইআরসি জুন মাসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলাকে তার দুটি মূল তহবিলে- জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল (ইএসএফ) এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) মোট ১২ হাজার ২২৭.৪৪ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয়। জ্বালানি নিয়ন্ত্রকের সর্বশেষ নির্দেশিকায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিইআরসির রায় অনুসারে, পেট্রোবাংলাকে ইএসএফ তহবিলে ৯ হাজার ২২৭.৪৪ কোটি টাকা এবং জিডিএফ তহবিলে তিন হাজার কোটি টাকা সুদসহ ফেরত দিতে হবে। কারণ ইতোপূর্বে এই পরিমাণ অর্থ সংস্থাটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছিল। তবে পেট্রোবাংলাকে কখন টাকা ফেরত দিতে হবে সে বিষয়ে রায়ে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।
রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে গত ২১ মার্চ গ্যাসের দামের ওপর গণশুনানির ফলোআপ হিসেবে এই আদেশ দেওয়া হয়।
যেখানে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সহ বিভিন্ন ভোক্তা অধিকার গ্রুপ ইএসএফ এবং জিডিএফ তহবিলকে ভোক্তাদের অর্থ বলে অভিহিত করেছে। কারণ ভোক্তারা তাদের বিলের অতিরিক্ত এ টাকা গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকে।
ক্যাব এবং অন্যান্য ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলো মূল তহবিলে অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য এবং ভোক্তাদের প্রতিনিধিদের দিয়ে পর্যবেক্ষণ করাসহ গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও গ্যাস সেক্টরের নিরাপত্তার উদ্দেশে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিইআরসির কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।