৫ মাস আগে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর প্রাথমিক পর্যায়েই দেশটির বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দখল নিয়েছিল রুশ সেনারা। এবার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ বাহিনী।
বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সি অ্যারিস্টোভিচ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে রুশ বাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় শহর ভুলহারস্কের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলেছে।’
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলে স্থাপিত হয়েছিল এই ভুলহারস্ক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লাভিত্তিক এই কেন্দ্রটি ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই প্রদেশ দনেতস্ক ও লুহানস্কের বিদ্যুৎ চাহিদা প্রধানত এই কেন্দ্র থেকেই মেটানো হয়।
কন্টেন্ট শেয়ারিং মাধ্যম ইউটিউবে পোস্ট করা সেই সাক্ষাৎকারে অ্যারিস্টোভিচ বলেন, ‘রুশ বাহিনী তাদের রণকৌশলে পরিবর্তন এনেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও সামরিক অবকাঠামোতে হামলার মাত্রা কমিয়ে বেসামরিক বিভিন্ন অবকাঠামোতে হামলার হার বাড়িয়েছে।’
‘তাদের বর্তমান কৌশল হলো ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল যতদূর সম্ভব হয় দখল করা। যদি তারা এই কৌশলে এগোতে থাকে, তাহলে একসময় বাধ্য হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আপোস সংলাপে বসতে হবে আমাদের,’ সাক্ষাৎকারে বলেন জেলেনস্কির উপদেষ্টা।
এর আগে গত ৪ মার্চ ইউক্রেনের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জাপোরিজ্জিয়ার পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দখল নেয় রুশ সেনারা। দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ইউরোপেরও বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ১৫৪তম দিনে গড়িয়েছে ইউক্রেনে রুশ সেনাদের অভিযান। এই চার মাস সময়ের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ লুহানস্ক, ইউক্রেনের দুই বন্দর শহর খেরসন ও মারিউপোল, দনেতস্ক প্রদেশের শহর লিয়াম, মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ জাপোরিজ্জিয়ার আংশিক এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রুশ বাহিনীর হাতে।
এদিকে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুশ সেনাদের দখল করে নেওয়া বিভিন্ন অঞ্চল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত- খেরসন পুনরুদ্ধারের মধ্যে দিয়েই শুরু হবে এই অভিযান।
সেই অনুযায়ী খেরসনে রুশ-ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে সংঘাত তীব্র হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে। তার মধ্যেই ভুলহারস্কের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দখল নিল রুশ সেনারা।
সূত্র: রয়টার্স