টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। মস্কোর এই আগ্রাসনের মুখে কার্যত বিপর্যস্ত ইউক্রেন। পশ্চিমা অস্ত্র হাতে নেওয়ার পরও কোনো কৌশলেই যেন মস্কোর অগ্রযাত্রা থামাতে পারছে না কিয়েভ।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে ইউক্রেনের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একইসঙ্গে রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রসিকিউটর জেনারেলকেও বরখাস্ত করেছেন তিনি। সোমবার (১৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রভাবশালী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার (এসবিইউ) প্রধান এবং দেশের শীর্ষ প্রসিকিউটর জেনারেলকে রোববার তাদের পদ থেকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই দুই সংস্থার কর্মকর্তারা রুশ হামলায় সহযোগিতা করছেন এমন বহু অভিযোগের উদ্ধৃতি দিয়ে এই দুই শীর্ষ কর্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
রয়টার্স বলছে, ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ প্রধান ইভান বাকানভকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও তিনি মূলত প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শৈশবের বন্ধু। অন্যদিকে দেশটির শীর্ষ প্রসিকিউটর জেনারেল ইরিনা ভেনেডিক্টোভা রাশিয়ান যুদ্ধাপরাধের বিচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছিলেন। রোববার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তাদেরকে বরখাস্ত করেন।
বিবিসি বলছে, বিশ্বাসঘাকতার বহু অভিযোগ সামনে এনে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থার (এসবিইউ) প্রধান এবং প্রসিকিউটর জেনারেলকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টর অভিযোগ, এই দু’টি সংস্থার ৬০ জনেরও বেশি সাবেক কর্মচারী এখন রাশিয়ান-অধিকৃত এলাকায় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার মোট ৬৫১টি অভিযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে।
অবশ্য বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ইভান বাকানভ এবং ইরিনা ভেনেডিক্টোভা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
রোববার রাতে নিজের ভিডিও ভাষণে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন: ‘রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তির বিরুদ্ধে প্রাসঙ্গিক (দু’টি সংস্থার) প্রধানদের এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া… অত্যন্ত গুরুতর প্রশ্ন সামনে তুলেছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, ‘প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর বের করা হবে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
মস্কো অবশ্য ইউক্রেনে তাদের এই আগ্রাসনকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে আখ্যায়িত করছে। এছাড়া যুদ্ধের শুরুতে পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড আক্রান্ত হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর মূল মনোযোগ এখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া মূলত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প এলাকা ডনবাস দখল করতে চাইছে। এই ভূখণ্ডটি লুহানস্ক এবং দোনেতস্ক নামে দু’টি অঞ্চল নিয়ে গঠিত। সেখানে রুশপন্থি দু’টি বিদ্রোহী স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যুদ্ধ শুরুর পর প্রায় পাঁচ মাসে ইউক্রেনে হাজারও মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ ঘর-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন। এছাড়া রুশ আগ্রাসনে ইউক্রেনের সামরিক-বেসামরিক অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।