রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে সেলিম রেজা নামে এক কলেজ অধ্যক্ষকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে।
গত ৭ জুলাই রাতে নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ওমর থিম প্লাজার চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আরও সাতজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেপরোয়াভাবে পিটিয়ে জখম করলেও এমপির হুংকারে কেউ তাকে বাঁধা দেওয়ার সাহস পাননি।
এদিকে ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ওই অধ্যক্ষ রাজশাহী নগরীর রায়পাড়ায় তার নিজ বাসায় চলে যান। তবে ভয় ও আতঙ্কে এখনো কোথাও অভিযোগ করেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাতে ওমর প্লাজায় সংসদ সদস্যের চেম্বারে আসার নির্দেশ দেন। ওমর ফারুক চৌধুরীর অনুসারী অধ্যক্ষ রাজু। তার ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ চেম্বারে হাজির হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কতিপয় শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন।
জবাবে সেলিম বলেন, ‘যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না’। এরপর মোবাইল ফোনের অডিও রেকর্ড চালু করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এর মধ্যে ফারুক চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে সেলিম রেজাকে মারধর শুরু করেন।
এক পর্যায়ে প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে আবারও চেম্বারে রাখা হকস্টিক দিয়ে পেটাতে থাকেন। অধ্যক্ষদের একজন সেলিমকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের করে আনেন।
পরে আহত তাকে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাঈদ আহমেদের চেম্বারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কয়েকজন স্বজন ও সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাসায় ফেরেন। ঘটনার পর নগরীর রায়পাড়ায় নিজ বাসা থেকে আর বের হননি।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ সেলিম রেজা বলেন, ‘‘৭ জুলাই রাতের ঘটনার পর আমি বাড়িতেই থাকছি। গত সোমবার বিকালে সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। এ সময় এমপি সাহেব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি সময় করে আমাকে সাক্ষাৎ করতে বলেন। যেহেতু তিনি (এমপি) দুঃখ প্রকাশ করেছেন, তাই আমিও আর কিছু বলছি না।’’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোদাগাড়ীর একটি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘কী বলবো কীভাবে বলবো, তা বুঝতে পারছি না। একজন সংসদ সদস্য এমন কাজ করতে পারেন, আমরা ভাবতেই পারছি না। একজন কলেজ অধ্যক্ষকে গরু পেটা করে পেটানো, কী সাংঘাতিক ঘটনা! আমরা বিচার দেব কার কাছে?’’
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ সেলিম রেজার সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনও মারধরের দাগ রয়েছে।’
‘এমপি ফারুক চৌধুরী শুধু সেলিম রেজাই নয়- তারও আগে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। তাদের গায়ে হাতও তুলেছেন। ফারুক চৌধুরীর মতো বেপরোয়া এমপিদের কারণেই সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলে করেন তিনি।’’
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে আমার চেম্বারে তারা অনেকেই এসেছিলেন। নিজেরা মারামারি শুরু করলে আমি গিয়ে তাদেরকে থামাই।’’