শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী ৩০ দিনের জন্য প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন দেশটির স্পিকার।
এর আগে বিক্ষোভকারীরা তার সরকারি বাড়িতে ঢুকে পড়ে আর প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে ওই সময়ে প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী কেউই বাড়িতে ছিলেন না।
আর্থিক অব্যবস্থাপনার কারণে রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী কলম্বোয় কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ করছে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। শনিবার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজধানীর বাইরে থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ।
বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে ঢুকে পড়ার পর গোটাবায়া রাজাপাকসে জানিয়েছেন তিনি ১৩ জুলাই পদত্যাগ করবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও পদত্যাগে সম্মতি দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে দাপ্তরিক কাজ হস্তান্তর করার জন্যে বুধবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন।
এদিকে বুধবার, যদি দেশটির প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন, তাহলে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী স্পিকারকে ৩০ দিনের জন্য প্রেসিডেন্ট করা হবে যার মধ্যে সংসদ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবে।
এর আগে শনিবার রাজধানী কলম্বোয় রীতিমতো গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনে ঢুকে পড়েছে। তারা এখন প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিংপুলে গোসল করছে। তাদের গোসল ও আনন্দের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জনগণের তোপের মুখে বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের মতো করেই বাসভবন ছেড়ে পালিয়েছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। সটকে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ঘিরে ফেলে। তাদের দাবি, গোতাবায়াকে গ্রেফতার করতে হবে।
পার্লামেন্টের স্পিকার জানিয়েছেন, ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিশ্চিত করতে’ প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জনসাধারণকে ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণা আসার পরই উৎসবে মেতে ওঠে বিক্ষোভকারীরা। রাতের আকাশে দেখা যায় আলোকবাজির ফোয়ারা। প্রেসিডেন্টের বাড়ির সামনে বিক্ষোভকারীদের একজন ফিয়োনা সিরমানা বলেন, এটা ছিল ‘প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে টেনে নামানোর এবং শ্রীলংকার জন্য নতুন যুগের সূচনার সময়’।
তিনি বলেন, ‘আমার খুব খারাপ লাগছে যে তারা আগে যায়নি, কারণ তারা আগে চলে গেলে কোন ধ্বংস দেখতে হতো না’।
৭০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে আর্থিক সংকটে পড়ে শ্রীলংকায় মুদ্রাস্ফীতি ক্রমেই বাড়ছে এবং খাবার, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা শেষ হয়ে যাওয়ায় ব্যক্তিগত যানবাহনে পেট্রোল ও ডিজেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফলে জ্বালানি সংগ্রহে দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি