সিলেটের উজানে থাকা ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে আবারও ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এসব বৃষ্টির পানি ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা দিয়ে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। এতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। ফলে দীর্ঘ হচ্ছে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় সিলেট জেলা ও মহানগরে ৪১ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। এসব ঘরবাড়ির তালিকা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
জানা যায়, গত ১৫ জুন থেকে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে ক্রমশ, বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে গত ১৫ দিন ধরে বন্যার কবলে সিলেট। এ বন্যা পুরো জেলা ও মহানগর তছনছ করে দিয়েছে। বর্তমানে ভারি বর্ষণে যেসব জায়গা থেকে পানি নেমেছে ওইসব জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আবার নিম্নাঞ্চলের লোকজন এখনো পানিবন্দি জীবনযাপন পার করছেন।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, উজানে ভারতীয় অংশে আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও সিকিমে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিন ওই বৃষ্টি চলতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের অরুণাচলে ১৮৩, চেরাপুঞ্জিতে ৯৩ ও জলপাইগুড়িতে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি সিলেটেও গত দুদিন থেকে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- আজও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্ট, কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্ট, এ নদীর শেওলা পয়েন্ট ও একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দু-এক দিন অবনতি হয়ে তারপর উন্নতি হতে পারে। কারণ, সিলেটে বন্যার পানি দু-তিন দিন পর নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলার মধ্য দিয়ে নামতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘সিলেটের পাশাপাশি উজানেও বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে।’
নদী, ড্রেন ও ছড়া পানিতে ভরাট হয়ে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘সব জলাধার পানিতে টুইটম্বুর। নদী পানি টানতে পারছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামার জায়গা পাচ্ছে না। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই মঙ্গলবার নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তবে বৃষ্টি থামার পর পানি নেমে গেছে।’
এদিকে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে সিলেট। মধ্য জুনে আঘাত হানা সেই বন্যা এখনও বিদায় নেয়নি। দীর্ঘায়িত এই বন্যায় সিলেটে ৪১ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা হাজার খানেক। বাকিগুলো জেলার বিভিন্ন উপজেলার।
সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার আহসানুল আলম জানান, এবারের বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনসহ জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় জেলার প্রায় ৩০ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েন। জেলায় ৬১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ জন লোক আশ্রয় গ্রহণ করেছেন।
তিনি জানান, ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৪০ হাজার ৯১টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এ তালিকায় সিটি করপোরেশনের হিসেব নেই।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ঘরবাড়ি নির্মাণ বা মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘নগরে হাজারখানেক ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আমরা প্রস্তুত করছি। এরপর তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।’