নড়াইলে পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, সচেতন মহলের প্রতিবাদ

সাময়িকী ডেস্ক
সাময়িকী ডেস্ক
5 মিনিটে পড়ুন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে নড়াইল সদর উপজেলার এক কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়েছে স্থানীয় একটি পক্ষ। এ ঘটনার ছবি ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

পুলিশের উপস্থিতিতে কীভাবে একজন শিক্ষককে এভাবে অসম্মান করা হলো, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, কেবলমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ওই শিক্ষককে এভাবে অপমানিত হতে হয়েছে।

গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে সরব ছিল এই প্রতিবাদ। এবার সেই প্রতিবাদ গড়াচ্ছে মাঠেও। সোমবার (২৬ জুন) বিকেলে ঢাকার শাহবাগে ওই ঘটনার প্রতিবাদে সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

- বিজ্ঞাপন -

সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক রবীন আহসান বলেন, “ওই ঘটনায় (ফেসবুক পোস্ট) ভুক্তভোগী শিক্ষকের কোনো ভূমিকাই নেই। ওনাকে না বাঁচিয়ে পুলিশ তাকে বের করেছে। প্রশাসন যারা চালায় তারা কী চাইছে?’’

তার অভিযোগ, “কয়েকশ পুলিশের প্রহরায় এটা করা হলো। এটা বাংলাদেশের জন্য সিগনাল।”

প্রশাসনযন্ত্র মৌলবাদীদের কবলে পড়েছে কি-না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

কী ঘটেছিল

ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে নড়াইলের এক কলেজছাত্র একটি পোস্ট দেয়। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী।

- বিজ্ঞাপন -

স্থানীয়রা জানায়, গত ১৭ জুন পোস্টটি দেওয়ার পরদিন ওই ছাত্র কলেজে গেলে কিছু মুসলমান শিক্ষার্থী তাকে পোস্ট মুছে ফেলার জন্য বলে।

এরই মধ্যে ‘‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’’ এমন কথা রটানো হয়। এই কথাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয় এলাকায়। স্থানীয়দের একটি পক্ষ অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়।

- বিজ্ঞাপন -

ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। ঘটনার কিছু ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবি ও ভিডিওতে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।

প্রতিবাদের ঝড়

শিক্ষককে এমন লাঞ্ছনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে দেশের সচেতন মহল।

নাট্যকর্মী জুলফিকার চঞ্চল ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, “ছবিতে নড়াইল মির্জাপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা পরিয়ে দিচ্ছে তারই ছাত্র, তাও আবার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে। অভিযোগ কী? উনি ধর্ম অবমাননা করেছেন। কীভাবে? একদল ছাত্র তাঁকে গিয়ে উত্তেজিতভাবে জানান, তার কলেজের একজন হিন্দু ছাত্র ভারতের নূপুর শর্মার পক্ষে পোস্ট দিয়ে ধর্ম অবমাননা করেছে। স্বপন কুমার বিশ্বাস সঙ্গে সঙ্গে থানায় ফোন করেন। কেন তিনি ফোন করলেন? ফোন করাই অপরাধ। এই ফোন করাটাই ধর্ম অবমাননা। সাথে সাথে এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হলো শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস ছাত্র .. এর পক্ষ নিয়েছে। তারপর তাদের উপর হামলাও চালানো হয়, মারধর করা হয়। কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, এলাকাবাসীর সামনে পুলিশ-প্রশাসনের উপস্থিতিতে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতার মালা গলায় পরিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।”

কবি কাজী কাদের নেওয়াজের ‘‘শিক্ষকের মর্যাদা’’ কবিতা ফেইসবুকে তুলে ধরে আসমা উল হুসনা নামে একজন ফেইসবুকে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছেন বেশ করছেন। কিন্তু মানুষের মগজের একটু উন্নয়নও কি প্রয়োজন নেই? এত উগ্র ধর্মান্ধ তো আমার দেশ ছিল না, এখন কেন হয়ে গেলো? কেন আইন-আদালত থাকতেও পাবলিক বিচার করে আর পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখে? এভাবে কি একটা সভ্য দেশ চলতে পারে?”

পুলিশের ভূমিকা

ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। তিনি আতঙ্কে বাড়িতেও থাকছেন না।

এদিকে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আটক করেছিল নড়াইলের পুলিশ।

কলেজ অধ্যক্ষকে কেন আটক করা হয়েছিল-জানতে চাইলে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শওকত কবীর বলেন, “কলেজ অধ্যক্ষ কোনো ধর্ম অবমাননা করেননি। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথাও ঠিক নয়। সেদিন তাকে সেইফ করা হয়েছিল। যেহেতু তিনি অপরাধ করেননি, তার বিরুদ্ধে মামলা করারও বিষয় নেই।”

জুতার মালা পরানো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, এ কাজ যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জুতার মালা পরানোর কোনো ঘটনা আমি দেখিনি। সেরকম কিছু আমার জানা নেই।”

ওই শিক্ষকের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন করলে ওসি বলেন, “উনি আমাদের এরকম কিছু বলেননি, বললে নিশ্চয়ই নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তারকৃত ছাত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, “সে এখন হাজতে আছে। (মামলার) তদন্ত চলছে।”

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!