ময়লা ও নোংরা পরিবেশে বসবাসের কারণে ঢাকা শহরের ৫ হাজারের বেশি বস্তিতে বসবাসরত অন্তত ৪০ লাখ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। আর এতে করে বেড়েছে পারিবারিক সহিংসতা ও সামাজিক অসহিষ্ণুতা
এছাড়া বস্তিবাসী শিশুদের বিদ্যালয়ে যেতে অনাগ্রহ, কিশোর ও যুবকদের শিক্ষা বা কাজে যেতে অনাগ্রহের মতো সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে। একই সঙ্গে আয় কমে যাওয়া ও চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রভাব” শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলেন এসব কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক), কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওর (কাপ), ইনসাইটস ও দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যগত প্রভাববিষয়ক প্রতিবেদন তুলে ধরেন ঢাকা কলিং প্রজেক্টের কারিগরি উপদেষ্টা সুমন আহসানুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “কঠিন বর্জ্যের অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট পরিবেশে বস্তির মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, চর্মরোগ, প্রসাবে জ্বালাপোড়াসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যানসার, জন্ডিস, নিউমোনিয়া, টাইফয়েডের মতো বিপজ্জনক রোগের ঝুঁকির বিষয়টিও গবেষণায় উঠে এসেছে।”
২০১৬ সালের একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে সুমন আহসানুল ইসলাম বলেন, “নোংরা পরিবেশের কারণে প্রায় ৩৪% বস্তিবাসী এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হন। ময়লা পানির কারণে ২৭% মানুষ ও জলাবদ্ধতার কারণে ১৯% মানুষ এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।”
অনুষ্ঠানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, “বস্তির মানুষকে দূরে রেখে তাদের জীবনমান উন্নয়ন সম্ভব নয়। ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও পূর্বাচলের মতো জায়গায় সরকারিভাবে বস্তিবাসীর জন্য আবাসন থাকা উচিত।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী বলেন, “ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এবারও বস্তির মানুষ বেশি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ বস্তির নিম্নবিত্ত মানুষেরা বেশি পানিবাহিত রোগের শিকার হচ্ছেন।”
সংবাদ সম্মেলনে বস্তির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহি এবং সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বর্জ্যের কারণে জনস্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো নিরূপণ করে তা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউএসএআইডির আর্থিক ও কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় প্রমোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস (পার) কর্মসূচির আওতায় ঢাকা কলিং নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডিএসকের নেতৃত্বে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বারসিক, কাপ ও ইনসাইটস। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৬ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।