ইউক্রেনের শরণার্থীদের জন্য নিজের পদক নিলামে তুলছেন রুশ সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাটভ। গত বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী এ সাংবাদিকের দাবি, রাশিয়ার অধিকাংশ নাগরিকই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে সমর্থন করেন না।
স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়ে গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করায় ২০২১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন দিমিত্রি মুরাটভ। তিনি ক্রেমলিনের সমালোচক বলে পরিচিত সংবাদপত্র নোভায়া গাজেটার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান সম্পাদক।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নৈতিক সাংবাদিকতার চর্চা করায় এ রুশ সাংবাদিককে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছিল নোবেল কমিটি। নোবেল পুরস্কার কমিটির সহায়তায় আগামী ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে পদকটি নিলামে তুলবেন মুরাটভ।
এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে মুরাটভ বলেন, “আমার মাতৃভূমি এমন একটি দেশকে আক্রমণ করেছে, যেখানে এখন এক কোটি ৫৫ লাখ শরণার্থী রয়েছে। আমরা কী করতে পারি তা নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ভেবেছি৷ তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, প্রত্যেকেরই প্রিয় কিছু দেওয়া উচিত।”
রুশ আগ্রাসনের শিকার হওয়া শরণার্থীরা দের অতীতের স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন৷ তাই নিজের প্রিয় নোবেল পদক নিলামে তোলার মাধ্যমে সেই শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ালেন মুরাটভ।
নোবেলজয়ী এ রুশ সাংবাদিক বলেন, “এখন তাদের ভবিষ্যৎ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে৷ তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটি আমরা বলতে চাই এবং দেখাতে চাই তা হলো- মানব সংহতি৷”
নোবেল পদকের নিলাম করে কী পরিমাণ অর্থ আশা করছেন জানতে চাইলে মুরাটভ জানান, ২০ লাখ মার্কিন ডলার বা তার বেশি দাম উঠতে পারে।
বেশিরভাগ রুশ নাগরিক ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর হামলাকে সমর্থন করে- সরকারের এ গবেষণায় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন দিমিত্রি মুরাটভ৷ তার ভাষ্য, অধিকাংশ নাগরিকই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনকে সমর্থন করেন না।
দিমিত্রি মুরাটভ বলেন, “যখন তারা ফোন করে জিজ্ঞাসা করে, ‘আপনি কি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?’ অথবা ‘আপনি কি রাশিয়ান সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে সমর্থন করেন?’ অথবা আপনি কি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেন?’- তখন ব্যক্তিটি কী বলবে বলে আপনার মনে হয়?”
তিনি আরও বলেন, “আপনি যদি এখন মস্কোর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, আপনি দেখতে পাবেন যে রাস্তায় কার্যত কোনো ‘জেড’ অবশিষ্ট নেই।” মূলত মুরাটভের বিশ্বাস, বাস্তবে, যুদ্ধের প্রতি সমর্থন, প্রায়শই ল্যাটিন বর্ণমালা থেকে জেড দিয়ে প্রদর্শিত হয়।
বর্তমানে রাশিয়ায় মুক্ত সাংবাদিকতা সম্ভব নয় দাবি করে মুরাটভ বলেন, “রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতা নেই, মতামতের প্রকৃত বিনিময় নেই, মতপ্রকাশের প্রকৃত স্বাধীনতা নেই। এতেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের কাছে কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের প্রচারকারীরা যা বলছে, জনগণকে বিশ্বাস করতে হচ্ছে। কোনো মুক্ত গণমাধ্যম নেই। যেকোনো বিবৃতির জন্য, একটি প্রশাসনিক বা ফৌজদারি মামলা শুরু করা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “আধুনিক রাশিয়ায় স্বাধীন সাংবাদিকতা অসম্ভব। তবে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কন্টেন্ট দেওয়া সম্ভব। এছাড়া ভিপিএন পরিষেবার মাধ্যমে কিছু কাজ করা যায়। কিন্তু প্রতিদিন এগুলো আরও কঠিন হচ্ছে।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করে এ সাংবাদিক বলেন, “রাশিয়া এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুতিন যতক্ষণ তিনি নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন, ততদিন ক্ষমতায় থাকবেন। তিনি মনে করেন, এতে রাশিয়ার মঙ্গল। তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন নাকি কোনো রাজা হবেন, আমি জানি না। কিন্তু স্বৈরাচারী হওয়ার দিকে তার ঝোঁক একেবারে স্পষ্ট।”