প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার পানি অপসারণে প্রয়োজনে রাস্তা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, সিলেটের বন্যাদুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে। আর মন্ত্রণালয় থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
শনিবার (১৮ জুন) বিকেলে মিন্টু রোডে সরকারি বাসভবনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সিলেট অঞ্চলের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, সিলেটে শুক্রবার পর্যন্ত ৪০% এলাকা জলমগ্ন ছিল। তবে এখন প্রায় সব এলাকাই জলমগ্ন হয়ে গেছে। হাসপাতালে পানি ঢুকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাৎক্ষণিক সিটি মেয়রকে বলেছি জেনারেটরের ব্যবস্থা করে আইসিইউয়ের রোগীদের যেন রক্ষা করা যায়। তারা জেনারেটর নিয়ে সেখানে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমাদের সেনাবাহিনী অত্যন্ত ভালো ভূমিকা পালন করছে। বন্যার্তদের সহযোগিতা করতে গিয়ে তাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের বেশিরভাগ রাস্তা তলিয়ে গেছে, রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, কোথাও কোনো রাস্তার কারণে পানি অপসারণে বাধা পেলে সেই রাস্তা যেন কেটে ফেলা হয়। এর দায়িত্ব স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জেরও একই অবস্থা। সেখানে কোমর সমান পানি। ওই এলাকার মানুষকে বাঁচাতে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা বন্যাদুর্গত এলাকার খোঁজখবর রাখছেন। সেসব এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে সমস্ত টিউবওয়েল রাইজ করার সুযোগ আছে, সেগুলো রাইজ করে দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে মিস্ত্রি পাঠানো হচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় যে স্টক আছে, সেখান থেকে তা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে যুগ্ম সচিব জসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তারা জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।
বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি ছিল কি না- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক জেলায় ৮-১০ লাখ করে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট রয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করতে পেরেছি। তাৎক্ষণিকভাবে টিউবওয়েল রাইজ করার জন্য লোক পাঠাতে পেরেছি। স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছেন, তারা ১১০-১২ বছরের মধ্যে পানির এমন তাণ্ডব দেখেনি। ৭০-৮০ বছরের আগ পর্যন্ত যেখানে পানি উঠেনি, এবার সেখানেও পানি উঠেছে। আমরা সতর্ক ছিলাম। আমাদের আগাম প্রস্তুতি না থাকলে এ আয়োজনগুলো থাকতো না।
বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে নৌপথকে কতটুকু ব্যবহার করতে পারছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এখন নৌপথই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। সেসব এলাকায় যেতে নৌকার ব্যবহার হচ্ছে। নৌবাহিনীর সদস্যরা পথে আছেন। দ্রুত তারা সেখানে চলে যাবেন।
হাওর অঞ্চলে তৈরি বড় রাস্তাটির কারণে পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, কোথাও কোনো রাস্তার কারণে পানি প্রবাহে সমস্যা দেখা দিলে সেটা কেটে দিয়ে বেইলি ব্রিজ বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত এমন কোনো রাস্তার খবর আমাদের কাছে আসেনি। মেয়র আমাদের জানিয়েছেন, শহরের মধ্যে দুয়েকটা রাস্তা কাটা লাগতে পারে। আমি তাকে রাস্তা কাটার অভয় দিয়েছি এবং বলেছি বন্যার পানি নেমে গেলে ওসব রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য আমরা বরাদ্দ দেব।