ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টিউশন ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে সিনেটে এ প্রস্তাব তোলা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে ভবনে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশের সময়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এ প্রস্তাব দেন।
৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই সরকার থেকে আসে। বর্তমানে সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একই হারে বেতন নেওয়া হলেও এ নিয়মে পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সমাজের বিত্তবান অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য উচ্চশিক্ষার যুক্তিসঙ্গত ব্যয় বহন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাড়বে, যা থেকে গরিব শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।”
ঢাবি কোষাধ্যক্ষ বলেন, ভর্তুকিমূলক উচ্চশিক্ষার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত না। এই দেশে প্রায় ১৫% লোক আয়কর দিয়ে থাকেন। পরোক্ষ করই সরকারের রাজস্বের প্রধান উৎস। এই পরোক্ষ কর ধনী বা দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই দিয়ে থাকেন। দরিদ্রদের প্রদেয় পরোক্ষ করের টাকায় ধনী পরিবারের সন্তানদের প্রায় বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রদান অযৌক্তিক। তাই ‘অ্যাবিলিটি টু পে’ নীতির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের ফি নির্ধারণ করা যেতে পারে।”
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ৯২২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বাজেট পাস করেছে, যার ৮৪% আসবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা সরকার থেকে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আয় ৮৩ কোটি টাকা ধরেও ঘাটতি থাকছে ৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৬.২৪%। বিদায়ী অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ছিল ৬৫ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতির বিষয়ে অধ্যাপক মমতাজ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো লাভজনক প্রতিষ্ঠান না বিধায় নিজস্ব তহবিল থেকে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে না। প্রতিবছর এভাবে তহবিলের ঘাটতি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন কষ্টসাধ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের নতুন নতুন খাত খুঁজে বের করতে হবে অথবা সরকারের নিকট হতে বিশেষ অনুদান চাওয়া যেতে পারে।”
সরকারি অনুদান না বাড়ার বিষয়ে অনুযোগ করে কোষাধ্যক্ষ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ মঞ্জুরি কমিশন তার অনুদান যথাযথভাবে বৃদ্ধি করছে না, যা অপ্রত্যাশিত। সম্পদ শিক্ষার মানের উত্তরণ যেমন ঘটায় না, তেমনি বলা যায় পর্যাপ্ত সম্পদ ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার কাজ নিশ্চিত করা যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে শিক্ষার্থী যে টিউশন ফি দিতেন, প্রাইস ইনডেক্স অনুযায়ী তা বর্তমানে কত হওয়া উচিত, তা আপনারা বিচার করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় বাড়ানো হলে সরকারের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কমবে।”
ঢাবির শিক্ষার্থীদের ফি বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে অধ্যাপক মমতাজ বলেন, “ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ফান্ড আসে না। অ্যালামনাইদের নিকট থেকে আমরা এ খাতে পর্যাপ্ত ফান্ড প্রত্যাশা করি।”
সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আনয়ন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভূমিকা রাখে বলে আমাদের ধারণা। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারিত করা খুবই জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। বেশকিছু নতুন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে এবং এ লক্ষ্যে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। এসব ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় শুধু শিক্ষার্থী বৃত্তি প্রদানই নয়, গবেষণা-সেমিনার আয়োজনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”