গত এক দশকে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এলেও দেশের মানুষের জন্য পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে কৃষিবিদ ও বিজ্ঞানীদের আরও উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সেই সঙ্গে কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সহকর্মীদের রুমে রুমে গিয়ে চা-শিঙাড়া খাওয়া বন্ধ করার আইন প্রণয়নেরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জাতীয় ফল মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার ফল মেলার আয়োজন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর অনেক কাজ আটকে থাকায় কৃষিখাতের ধীর অগ্রগতির কথা তুলে ধরে কৃষিবিদদের গল্পগুজব করে সময় নষ্ট না করার পরামর্শ দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কে কী কাজ করে? এই বসে বসে একজন আরেকজনের রুমে গিয়ে চা খেলো, শিঙাড়া খেলো… কেউ কারোর রুমে গিয়ে চা খেতে পারবেন না। কেউ কারোর রুমে গিয়ে শিঙাড়া খেতে পারবেন না।”
বিভিন্ন দপ্তরের মহাপরিচালকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “যদি বড় কোনো বিদেশি বা উদ্যোক্তা আসে, তাকে আপনি চা খাওয়ান। কিন্তু পাশের রুম থেকে ইকোনমিক বিজ্ঞানী আপনার রুমে আসবে, আর চা-শিঙাড়ার অর্ডার দেবেন, গল্পগুজব করবেন…এগুলো আইন করে, অর্ডার দিয়ে বন্ধ করে দেন, সব ডিজিদের বলছি। খামারবাড়ির কোনো রুমে কেউ চা-ও খাওয়াতে পারবেন না, শিঙাড়াও না। আমি এই অর্ডার দেখতে চাই।”
দেশের মানুষের জন্য পুষ্টি ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কৃষিবিদ ও বিজ্ঞানীদের আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “খালি দুইটা পেপার বের করার জন্য গবেষণা করলে তো হবে না, গবেষণা মাঠভিত্তিক হতে হবে। আমাদের আরও বেশি করে কাজ করতে হবে।”
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ৪.০২ লাখ হেক্টর জমিতে ৭৮ প্রজাতির ৫১.৪ লাখ মেট্রিক টন ফল উৎপাদন হয়। অথচ দেশে ফলের চাহিদা ১ কোটি ১৭ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, ঘাটতি ৬৫.৪ লাখ মেট্রিক টন বা ৫৭%।
বাংলাদেশে এত প্রজাতির ফল চাষ হলেও প্রধান ফল ১০-১২টি। মোট উৎপাদনের ৭৭% আসে আম, কলা, কাঁঠাল, তরমুজ এবং আনারস থেকে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ একটা সময় ৫৫ মিলিগ্রাম করে ফল-সবজি খেতাম দৈনিক, এখন খাই ৮২ মিলিগ্রাম। অথচ এটা হওয়া দরকার কমপক্ষে ২০০ মিলিগ্রাম। এটা কীভাবে আমরা করব?”
উপায় হিসেবে তিনি বলেন, “আমরা প্রায় ৯০% তেল জাতীয় ফসল বিদেশ থেকে আমদানি করি। কিন্তু আমরা যদি বিজ্ঞানসম্মতভাবে আমাদের কর্মসূচি মাত্র ৩ বছর চলমান রাখতে পারি, তাহলে আমাদের ৪০% তেলের চাহিদা দেশীয় উৎপাদন থেকে পূরণ করতে পারি।”
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বাংলাদেশে ফল উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কম, এটা সত্যি। কিন্তু এটাও সত্যি যে, কোনো ফসল যদি বেশি উৎপাদন হয়, কৃষক তা বিক্রি করতে পারে না। সেজন্য স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও যেতে হবে।”