শুভ্রা সতেরো বছর বয়সেই ঘর ছেড়েছিল৷ সবে মাধ্যমিক পাস করে, ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী৷ বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, নয়নের মনি৷
সুড়কি বিছানো গ্রামের পথ দিয়ে রোজ সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতো শুভ্রা৷ মাথায় দুটো বেনী, বেনীর শেষে দুটো সাদা ফিতে৷ পরনে স্কুল ইউনিফর্ম ছিল চুড়িদার৷ বেশ লাগতো৷ স্কুল থেকে সব বন্ধুরা একসঙ্গে দলবেঁধে সাইকেল চালিয়ে ফিরত৷ দেখে মনে হতো একঝাঁক বুনো হাস, আকাশের বদলে মাটি দিয়ে উড়ে আসছে৷
স্কুল থেকে ফিরে খাওয়ার পর্ব মিটিয়েই মাস্টারমশাইয়ের কাছে পড়ার পাঠ শেষ করে, তারপর বাবার সঙ্গে একটু সোহাগীপনা করেই, রাতের খাবার খেয়ে ঘুম৷
শুভ্রার বাবার ছিল মুদির দোকান৷ এছাড়াও বেশ কিছু জমিজমা ছিল৷ কাজেই বেশ স্বচ্ছল ছিল ওরা৷ বাড়িতে ছিল ঠাকুমা, দাদু৷ আর শুভ্রার এক পিসি ছিল, যখন শুভ্রার পাঁচ বছর বয়স তখনই তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল৷ পিসেমশাই সরকারী চাকরী করতেন, আর পিসির ছিল একটাই ছেলে, অয়ন৷
বছরে তিনবার গরমের ছুটি, পুজোর ছুটি আর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার শেষের ছুটি এই তিন ছুটিতে পিসি সাতদিনের জন্য অয়নকে নিয়ে এসে থাকত৷ যেদিন পিসি চলে যেত সেদিন পিসেমশাই আসত, দুপুরে খেয়েদেয়ে পিসি আর অয়নকে নিয়ে চলে যেত৷
শুভ্রার এখনও মনে আছে শুভ্রা যখন ছোটো, তখন ওর পিসির বিয়ে হয় , দাদুর সেরকম একটা আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, বাবারও মুদি দোকান তখন সবে আস্তে আস্তে লাভের অঙ্ক দেখছে, পিসির বিয়ের সবকিছুর যোগার যন্তর হলেও গলার গয়নাটাই বাকি ছিল৷ শুভ্রার মা তার বিয়ের নেকলেশটা পিসিকে দিয়েছিল৷
একেইতো বলে যৌথ পরিবার, যেখানে আমার ভাবটা অচল৷
প্রতিরাতে বাবার গা ঘেষে শুভ্রার বাবার সঙ্গে চলত খুনসুটি৷ বাবা শুভ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বলত, মা এখন বড় হচ্ছো, এমন কিছু কোরো না যাতে আমার মুখ সবার সামনে ছোট হয়ে যায়৷
শুভ্রাও বাবার বুকে মুখ গুঁজে বলত, বাবা তুমি নিশ্চিন্তে থেকো৷
সেই নিশ্চিন্ত হওয়া বোধহয় শুভ্রার বাবার কপালে ছিল না৷ প্রজাপতির মতন শুভ্রাও তার রঙীন কিশোরী পাখা নিয়ে উড়ে বেড়াতে লাগল৷ রবিবার দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর সাইকেল নিয়ে চলে যেত কংসাবতীর পারে৷ নদীর ধারের নির্জনতায় কিশোরী চোখে নানা রঙের স্বপ্নের জাল বুনতো৷
এরকমই এক রবিবারে শুভ্রা যখন সাইকেল নিয়ে কংসাবতীর পাড়ে আসছে , দূর থেকে একটা সুরেলা গলার গান শুনতে পেল, “মনের মানুষ চিনলি নারে মন৷”
শুভ্রা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল একজন সুঠাম চেহারার বাউল যুবক একতারা হাতে চোখ বুজে নিবিষ্ট মনে গান গেয়ে চলেছে৷ শুভ্রাও যন্ত্রচালিতের মতন মুগ্ধ হয়ে বাউল যুবকটির পাশে গিয়ে বসল৷
বাউলের যখন গান শেষ হল, সে শুভ্রাকে দেখে লজ্জা পেল৷ পারষ্পরিক পরিচয়ে শুভ্রা জানতে পারল, ওর নাম সনাতন৷ বাড়ি বীরভূমে৷ মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে বাউল গানের টানে সে ঘর ছেড়েছে৷ এক বাউলের আখড়ায় সে থাকত৷ আর বাউলের গান শুনত৷ তারপর জয়দেব কেন্দুলির মেলায় গিয়ে এক বাউল গুরুর কাছে দীক্ষা নেয়৷ এখন গুরু জানিয়ে দিয়েছেন যে তার শিক্ষা সমাপ্ত ৷ তাই এখন সে একতারা হাতে নিজেই সুর বাঁধে, সারাদিন ঘুরে বেড়ায়, গান শুনে যে যা দেয় তাতেই তার চলে যায়৷
শুভ্রা সেদিন খুব আগ্রহ নিয়ে সনাতন বাউলের কথাগুলো শুনেছিল এবং কথা দিয়ে গিয়েছিল পরের রবিবারও সে আসবে বাউল গান শুনতে৷ সনাতনও ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিল৷
সেদিন বাড়ি ফিরে শুভ্রা কেমন যেন আনমনা হয়ে গেল, পরদিন স্কুলে গেলেও মন ছটফট করতে লাগল কবে রবিবার আসবে৷ সময়ের নিয়মে রবিবার এল, শুভ্রা চলল কংসাবতীর পাড়ে৷ গিয়ে দেখল সনাতন এসে বসে আছে৷
শুভ্রাকে দেখে সনাতন একগাল হেসে বলল, এসে গেছো রাই, আমিতো তোমার অপেক্ষায়ই বসে আছি৷ আমার একতারের তারে যে তোমার নামই বারবার বাজছে৷
শুভ্রা একগাল হেসে সনাতনের পাশে গিয়ে বসল৷ সনাতন একতারায় সুর বাঁধল, পীরিতি কাঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না৷
সত্যিই বোধ হয় পীরিতি কাঠালের আঠা, সনাতন আর শুভ্রা দুজন দুজনকে চোখে হারাতে লাগল৷
আগে শুধু রবিবার ছিল, এখন রোজ স্কুলের সময়টায় দুজনে সময় কাটায়৷ বাড়ির সবাই জানে শুভ্রা স্কুলে গেছে৷ শুভ্রার একটাই জগত সেটা হলো সনাতন৷ শুভ্রার স্কুলে না যাবার খবর এবার শুভ্রার বাবার কানে গেল৷
সেদিন রাতে শুভ্রা প্রচন্ড মার খায় বাবার কাছে৷যে বাবা কোনওদিন তার গায়ে হাত তোলে নি৷ মার খেতে খেতেও শুভ্রা চিৎকার করে বলল, কত মারবে মারো, আমার সারা শরীরে শুধু সনাতনের নাম লেখা রয়েছে৷
সেদিনই পুবের আকাশ ফর্সা হবার ঠিক আগে শুভ্রা গুটিকয়েক জামা কাপড় নিয়ে ঘর ছেড়ে উপস্থিত হল সনাতনের আখড়ায়৷
শুভ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে সনাতন সবই বুঝতে পারল৷ সেও আর দেরি না করে জামাকাপড়ের পুটলি আর একতারাটাকে সঙ্গে নিয়ে, ভোর রাতের ট্রেন ধরে শুভ্রাকে নিয়ে পাড়ি দিল লাল মাটির দেশে৷ পেছনে পরে রইল কংসাবতীর ঘাট আর শুভ্রার শৈশব আর কিশোরী হয়ে ওঠার গল্প৷
বীরভূমে পৌছে রাধা কৃষ্ণের মন্দিরে গিয়ে ওরা প্রথমে কন্ঠী বদল করল৷ তারপর খোয়াইয়ের ধারে বাউলের আখড়ায় গেল৷ বৃদ্ধা বোষ্টুমী লক্ষ্মী রানী ওদের থাকার জন্য একটা ঘর দিল ।
ওদের পাশের ঘরে থাকে হৃদয় গোঁসাই আর মালিনী৷ হৃদয় গোঁসাই ওদের দেখে একতারাতে সুর বাঁধল, মনের মানুষ চিনলি নারে মন৷
মালিনীও তার সঙ্গে সঙ্গত দিচ্ছিল৷ ওদের সুধামাখা কন্ঠ মিশে গিয়েছিল নিস্তব্ধ প্রকৃতির খোলা বুকে৷
ভালবাসার তীব্র আবেশে অবগাহন করেছিল সেদিন ওরা৷ গান শেষ হতেই মালিনী ফুঁপিয়ে উঠেছিল৷ শুভ্রা অবাক হতেই মালিনী হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, এই যে লোকটাকে দেখছিস৷ ও আমার পিরিতের মানুষ৷ ওর চোখেই আমার যত সুখ জানিস৷ ও যদি আজকে আমাকে না বাঁচাত তাহলে আমি ভেসে যেতাম রে৷
হৃদয় বলেছিল, মালিনী ওসব কথা বলেছি না আর বলবে না৷
মালিনী হৃদয়ের কথা না শুনে বলে যেতে লাগল, আমার তখন ষোলো বছর বয়স৷ বাবা গ্রামের একজন দোজ বরে বিয়ে দিয়ে দিল৷ লোকটা আমার দ্বিগুণ বয়স৷ আগের পক্ষের বউ ক্যান্সার হয়ে মারা গিয়েছিল৷ আগের পক্ষে একটা ছেলে ছিল৷ আমার বিয়ের সময় ছেলেটার বয়স ছিল ছয় বছর৷ আমার স্বামীর জমি জায়গা , পাকা বসত বাড়ি আর ছিল সরষের তেলের কল৷
বাড়িতে শ্বাশুরী ছিল৷ আমাকে তিনি খুব ভালবাসতেন৷ ছেলেটাও আমাকে খুব ভালবাসত ৷ আমার স্বামী আমার সঙ্গে কম কথা বলত৷ রাতের বেলা কোনও কোনও দিন শরীর ছুঁত৷ তাতে আমার কোনও আনন্দ ছিল না৷
আমাদের ধানকলে রজত বলে একটা ছেলে কাজ করত৷ ও আমার থেকে বছর তিনেকের বড়৷ রজত শুধু ধানকলেই না আমাদের বাড়িরও অনেক কাজ করে দিত৷ প্রতিদিন দুপুরবেলা আমাদের বাড়িতে খেত৷ ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমার একটা বন্ধুত্ব তৈরি হল৷
একদিন রজত আমাকে বলল, তোমার জীবনটা দেখলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়৷ কি বয়স, এই বয়সের মেয়েরা কত আনন্দ করে৷ আর তুমি জেলখানায় বন্দীর মতন জীবন কাটাচ্ছো৷ আমার দুচোখে জল ভরে উঠল৷ আমার মনটা রজতের কাছে বন্ধক দিলাম৷
একদিন দুপুরে ছেলে ঘুমাচ্ছে, শ্বাশুরীও কয়েকদিনের জন্য এক আত্মীয়র বাড়ি গেছেন, আমার স্বামীও ধানকলে কাজে ব্যস্ত৷ আমি রান্না সেরে বসে আছি ৷ রজত এল৷
ও আমাকে বলল, আজকে দাদার খাবারটা দাও আমি নিয়ে যাব৷
আমি বললাম, তুমি খাবে না?
ও বলল , আমার খাবারটাও গুছিয়ে দাও৷
আমি ওদের খাবার গুছিয়ে ঘরে বড় ব্যাগ আনতে গেলাম৷
দেখি ও আমার পেছনে এসে দরজায় খিল এঁটে দিল৷ তারপর আমার হাত ধরে সোজা বিছানায় টেনে নিয়ে গেল৷ সেদিন আমি আমার স্বামীর কাছে যে তৃপ্তি এতদিন পাইনি, তা ওর কাছে পেলাম৷
এভাবে দিন কয়েক চলল৷ তারপর শ্বাশুরি ফিরে এল৷ তখন আমাদের দুজনেরই নেশা৷
রজতকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত চলে না৷ একদিন দুপুরে শ্বাশুরী ঘুমাচ্ছে তখন রজত বলল, চল পালিয়ে যাই ৷
আমি বললাম কোথায়?
ও বলল, আমার এক বন্ধুর বাড়ি আছে বর্ধমানে৷ ওখানে যাব৷ তারপর তোমাকে নিয়ে ঘর পাতব৷
সদ্য যৌবনে শরীরের নেশায় কান্ড জ্ঞান হীন হয়ে সেদিন সংসার ছেড়েছিলাম৷ এক সপ্তাহের মধ্যে সবার চোখের আড়ালে সমস্ত জিনিস গুছিয়ে নিলাম৷ তারপর একদিন ভোর রাতে সবাই যখন গাঢ় ঘুমে আচ্ছন্ন তখন ঘর ছাড়লাম৷
পেছনে পরে রইল আমার এই কয় বছরের হাড়িকুড়ির চেনা সংসার৷ ট্রেনে চেপে বর্ধমানে এলাম৷ বর্ধমানে রজতের এক বন্ধু কাঠের মিস্ত্রির কাজ করে তার বাড়িতে উঠলাম৷
এভাবে এক মাস চলল৷ আমার চোখে তখনও রজতকে নিয়ে রঙীণ নেশা৷ একদিন রজত এসে বলল, আমার এবার কলকাতায় যেতে হবে৷ একটা ভাল কাজ পেয়েছি৷
আমিও জিনিস পত্র গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিলাম৷ হাওড়ায় নেমে ও আমাকে এক জায়গায় বসিয়ে বলল, তুমি এখানে বসো, আমি গাড়ি ডেকে তোমাকে নিয়ে যাব৷
আমিও জামা কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে বসে রইলাম৷ যাবার সময় ও বলল, তোমার গয়নার পুটুলিটা শুধু আমাকে দাও৷ তুমি এখানে একা বসে থাকবে তো, তোমার কাছে ওটা রাখা ঠিক নয়৷
আমিও সরল বিশ্বাসে বড় ব্যাগের ভেতর পুটুলি বাঁধা গয়না যে ব্যাগটায় ভরে রেখেছিলাম, সেই ব্যাগটা রজতকে দিয়ে দিলাম৷ আমার বাপের বাড়ির থেকে খুব বেশী গয়না না দিলেও শ্বশুর বাড়ি থেকে অনেক গয়ণা দিয়েছিল৷ কম করে ওখানে বিশ ভরি গয়ণা ছিল৷
রজত গয়নার পুটুলিভরা ব্যাগটা নিয়ে চলে গেল৷
কতক্ষণ যে এভাবে বসেছিলাম তা আজ আর মনে নেই৷ তবে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর মনে হল রজততো আসছে না৷
আমি তখন স্টেশনের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত দিশেহারা হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি, পাগলের মতন অবস্থা, মাথার ঠিক নেই৷ কোথায় খুঁজব রজতকে কিছুই বুঝতে পারছি না৷ দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে৷ থরথর করে কাঁপছি৷
তখন ভগবানের মতন আবির্ভাব হল তোমাদের এই হৃদয় গোসাই দাদার৷ উনি আমাকে স্টেশনের একদম শেষপ্রান্তে নিয়ে গিয়ে সব কথা শুনলেন৷ শুনে বললেন, যে নিজে থেকে হারিয়ে যায় তাকে তুমি খুঁজে পাবে কোথায়?
আমি জলভরা চোখে তাকাতেই উনি বললেন, এখনও বোঝোনি৷ তোমার মান, সম্মান, ধন সব নিয়ে সে তোমাকে পথের ধুলোয় ফেলে রেখে চলে গেছে৷
তুমি যদি বাড়ি যেতে চাও আমি তোমাকে পৌছে দেব৷
আমি বললাম, এই পোড়ামুখ নিয়ে আমি কিভাবে যাব৷ আমার বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি কোথাও আমার জায়গা নেই৷
সেদিন বুঝেছিলাম , মেয়েদের কোনও বাড়ি নেই৷
তারপর গোঁসাইয়ের সঙ্গে আখড়ায় এলাম৷ কন্ঠীবদল করে কপালে রসকলি এঁকে তোমাদের গোসাইদাদার বোষ্টুমী হলাম৷ দুপুরবেলা লক্ষীরানী আর মালিনীই রান্না করল৷ ওরা সবাই এক সঙ্গে খেল৷
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হতে চলল৷
বেড়ার ঘরটা পরিষ্কার করে চাটাই পাতল
সনাতন। আর মালিনী কাঠের আগুনে গোটা সবজির সিদ্ধ দিয়ে ভাত রান্না করল। রাতের বেলা শুভ্রা আর সনাতনের কপালে রসকলি এঁকে মালাচন্দন করিয়ে লক্ষ্মী রানী আর মালিনী ওদের ঘরে শুতে পাঠাল৷
সনাতন শুভ্রার কাঁধে হাত রেখে বলল, আমার জন্য যে তুমি ঘর ছাড়লে পারবে আমার সঙ্গে কষ্ট করে দিন কাটাতে। শুভ্রা একগাল হেসে বলল মনের সুখই তো আসল সুখ। সেই সুখ আমি পেয়েছি তোমার কাছে। সনাতন শুভ্রাকে কাছে টেনে নিল৷ দুজনে রতি সুখে মগ্ন হল৷
রতিক্রীড়ার চরম মুহূর্তে সনাতন রেতঃপাত থেকে নিজেকে বিরত রাখল। তারপর দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ল৷ ঝড়-বৃষ্টির ঠাণ্ডা হাওয়ায় ওদের দুজনেরই ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ তখন মধ্যরাত৷ সনাতন শুভ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, আজ আমি সহজিয়া সাধনার প্রথম স্তর অতিক্রম করলাম শুভ্রা। শুভ্রা জিজ্ঞাসু চোখে সনাতন এর দিকে তাকাল৷ সনাতন বলল, সহজিয়া সাধনা হল সেই সাধনা যে সাধনায় ঘন্টার পর ঘন্টা শৃঙ্গার সাধনায় রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সহবাসে লিপ্ত থাকলেও কোনওরকম বীর্যপাত হবে না। এই সাধনায় সাধক চিন্ময় দেহ-মনের অধিকারী হয়েও তার শরীরে শ্রীকৃষ্ণের আধার রাধাভাব ফুটে উঠবে। রাধাভাব হল আধ্যাত্ম কোটির চরম অবস্থা যা প্রেমভক্তি সাধনার দ্বারা লাভ করা যায়। মনের প্রেম ভাব কে জাগ্রত করে সহজিয়া সাধকরা সাধন সঙ্গিনী গ্রহণ করে।
তুমি শুধু আমার কন্ঠী বদল করা বাউলিনি হওয়া সহধর্মিনী নও তুমি আজ থেকে আমার সহজিয়া সাধন সঙ্গিনী।
শুভ্রা সনাতনের বুকে মাথা রেখে বলল, এখন থেকে তোমার সহজিয়া সাধনার সংসর্গে আমিও নিজেকে উৎসর্গ করলাম৷
বেড়ার ঘরের জানালা দিয়ে বৃষ্টি ঝরে যাওয়া মেঘহীন আকাশের পূর্ণিমার জ্যোৎস্না তখন ওদের চাটাইয়ের ওপর ভালোবাসার দ্যুতি ছড়াচ্ছে।