রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলের সেভেরোদোনেতস্ক ও লিসিচানস্ক শহর ‘মৃত শহরে’ পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এছাড়া সেভেরোদোনেতস্ক শহরে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের চেয়ে রুশ সেনাদের সংখ্যা বেশি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (৭ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এছাড়া সোমবার সেখানে ব্যাপকভাবে কামানের গোলাবর্ষণ করা হয় এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় উভয়পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা সম্প্রতি গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ডনবাস অঞ্চলে এবং কাছাকাছি এলাকায় লড়াইয়ের তীব্রতা সেখানকার উভয় শহরকে (সেভেরোদোনেতস্ক ও লিসিচানস্ক) ‘মৃত শহরে’ পরিণত করেছে। কৌশলগত এই শহর দু’টি পুরোপুরি দখল হয়ে গেলে তা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেনের পূর্বের সমগ্র লুহানস্ক অঞ্চলে পৌঁছে দেবে।
ডনবাসের সেভেরোদোনেতস্ক শহরে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের তুলনায় রুশ সেনাদের সংখ্যা অনেক বেশি উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, তা সত্ত্বেও আমাদের যোদ্ধারা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার এবং ভূখণ্ড ধরে রাখার প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন।
সেভেরোদোনেতস্কের পার্শ্ববর্তী লিসিচানস্ক শহরে রুশ গোলাবর্ষণ আরও তীব্র হয়েছে জানিয়ে ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, গত রোববার পূর্ব ফ্রন্ট লাইন সফরের অংশ হিসেবে সেখানে পরিদর্শন করেছিলেন তিনি।
শহরের একজন বয়স্ক বাসিন্দা ওলেক্সান্ডার লিয়াখোভেটস বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নিক্ষেপ করা একটি ক্ষেপণাস্ত্র তার ফ্ল্যাটে আঘাত হানে এবং এরপরই এটি আগুনে পুড়ে যায়।
৬৭ বছর বয়সী এই বাসিন্দা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তারা এখানে অবিরাম গোলাবর্ষণ করেছে…এখানকার পরিস্থিতি ভয়ানক।’