বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা “অধিকার”-এর নিবন্ধন বাতিল করেছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো। রবিবার (৫ জুন) ব্যুরোর এক আদেশে সংস্থাটির নিবন্ধন নবায়ন আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়।
দীর্ঘদিন সুরাহার অপেক্ষায় থাকার পর অবশেষে নিবন্ধন হারালো সংস্থাটি। এর আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।
এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কাজে নিয়োজিত হওয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে “অধিকার”-এর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিভিন্ন সময় তলব করা তথ্য যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার বিষয়টিও আমলে নেওয়া হয়েছে।
অধিকার-এর নিবন্ধনের মেয়াদ ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ শেষ হয়। নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করলেও তা দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। পরে বিষয়টি নিষ্পত্তি চেয়ে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করে সংগঠনটি।
এখন অধিকার’র আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় উচ্চ আদালতে আবেদনের বিষয়টিও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে জানান এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক কে এম তারিকুল ইসলাম।
মহাপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, “অধিকার-এর নিবন্ধন নবায়নের বিষয়ে ব্যুরোতে একটি আবেদন ছিল। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে সুনির্দিষ্ট কারণের ভিত্তিতে তাদের নবায়নের আবেদনটি নামঞ্জুর করা হয়েছে।”
এনজিও ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে কথিত গুম-খুনসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে অধিকার তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে যে তথ্য উপস্থাপন করেছে, তাতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এনজিও ব্যুরো ব্যক্তির নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা চায়। তবে মামলার কারণ দেখিয়ে সংস্থাটি কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
এছাড়া নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, নতুন আইন অনুযায়ী আরোপিত বর্ধিত ফি ও ভ্যাট না দেওয়া, বৈদেশিক অনুদানে বাস্তবায়িত প্রকল্পের আটটি আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ওপর আপত্তির কোনো জবাব বা ব্যাখ্যা না দেওয়া এবং তিনটি প্রকল্পে আর্থিক লেনদেন অসঙ্গতি বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বিষয়ে যথাযথ জবাব না দেওয়াও অধিকার-এর নিবন্ধন নবায়নের আবেদন নামঞ্জুরের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
আবেদন নিষ্পত্তির আদেশে বলা হয়, “বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্চাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন ২০১৬ এর ধারা ৪(৪) মোতাবেক সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত নিবন্ধন নবায়নের আবেদনপত্রে অসঙ্গতি থাকা, বিভিন্ন সময় চাওয়া তথ্যাদির সঠিক জবাব বা ব্যাখ্যা ও কাগজপত্র দাখিল না করা এবং রাষ্ট্রের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এমন কাজে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সংস্থার কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় ‘অধিকার’ নামীয় সংস্থা কর্তৃক দাখিলকৃত নিবন্ধন নবায়নের আবেদনটি বিবেচনা করার কোনও সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সংস্থাটির নবায়নের আবেদনটি নামঞ্জুর করা হলো।”
এর আগে ২০১৮ সালের নভেম্বরে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত সংগঠন “অধিকার”-এর নিবন্ধন বাতিল করে। এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০১৭ এর ৬ এর ২ উপধারা অনুযায়ী সংস্থাটির নিবন্ধন বাতিল করে ইসি।