আলী আফজাল খান:রাজনীতি সচেতন অধুনান্তিকরা প্রথাগত মেরুকৃত ডান বা বাম রাজনীতির বাইরে গিয়ে তৃতীয় এক প্রকার রাজনীতির কথা বলেন। এই রাজনীতির মূল পাটাতন হচ্ছে ‘অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র’ (তৃণমূল/ইলেকট্রনিক), ‘বিকেন্দ্রীকরণ’ এবং ‘সমভোগতান্ত্রিক ব্যক্তিসমাজ’। এই রাজনীতির মূল শ্লোগান হচ্ছে – ‘ বৈশ্বিক চেতনা, স্থানীয় কর্ম’ (think globally, act locally)। যেহেতু ডান বা বাম কোনোটাই না, সেহেতু এটাকেই বলা হয় মূলকেন্দ্র যা থেকে ডান – বাম উভয় শক্তির জন্য (রাজনৈতিক প্রতিনিধি, আমলা, পুঁজিপতি কিংবা লোভী মানুষ) হুমকি জারি থাকে।
অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র (Participatory Democracy):
প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের (Representative Democracy) পরিবর্তে এমন এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ থাকবে। সমালোচকরা বলেন জনবহুল দেশে এই ধরনের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের উকিলরা সে পথও বাতলে দিয়েছেন – ইলেকট্রনিক গণভোট। অধুনান্তিকরা বলছেন আসলে এখন যা চলছে তা গণতন্ত্রের প্রদর্শনী (Spectacle Democracy), আমরা গণপ্রতিনিধি নির্বাচিত করি এবং অক্রিয়ভাবে ৫ বছর ভয়ংকর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করি। অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র বলতে বুঝায় প্রান্তের নাগরিকের সক্রিয়তা, প্রতিটি নাগরিকের সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ এবং ভোটের পরিবর্তে ঐক্যের (পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে) ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
বিকেন্দ্রীকরণ (Decentralization):
বিকেন্দ্রীকরণ বলতে বুঝায় যত দূর এবং যত বিস্তৃত পরিসরে সম্ভব ক্ষমতা ছড়িয়ে দেয়া যাতে কেন্দ্রে যতটা সম্ভব ক্ষমতা কম থাকে, প্রান্তের অধিক সংখ্যক লোককে তাদের জীবন পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতায়ন করা। বিকেন্দ্রীকরণ কার্যকরণ প্রক্রিয়ায় সরকারের দায়িত্বের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে পারে বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সুশীল বিরোধীপক্ষের কৌশলও সরকারকে দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল করতে ভূমিকা রাখে। বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষের তাত্ত্বিকরা মনে করেন ডান বা বাম যে প্রকারেরই সরকার হোক না কেন, বেশি মাত্র্রায় নির্ভর করে বলপ্রয়োগের উপর- হোক সেটা পাশবিক শক্তি (সামরিক ব্যবস্থা, নির্যাতন ইত্যাদি) অথবা চতুর কৌশল (রটনা, কারাবন্দি করা ইত্যাদি)। সত্যিকার অহিংস, অংশীদারমূলক সমাজ পেতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে এবং সকল স্তরে শেয়ার করতে হবে।
সমভোগতান্ত্রিক ব্যক্তিসমাজ (Communitarian Individual):
অধিকাংশ অধুনান্তিক সমর্থণ করেন সমভোগতান্তিক ব্যক্তিবিশিষ্ট সমাজের যা হবে সমবায়ভিত্তিতে স্বশাসিত ক্ষুদ্র প্রশাসনিক এলাকা বা পদ্ধতি (উদাহরণ Kibbutzim)। স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে যে কোনো সমাজসেবামূলক এবং যৌথ কর্ম বা বিষয় অধুনান্তিকরা সমর্থণ করেন। এদের অধিকাংশ মনে করেন সম্মতি ছাড়া সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে তা গরীবের মাঝে বিতরণ করার নীতি বরং গরীবের বিরুদ্ধেই শেষ পর্যন্ত, কারণ দরিদ্রতার উত্তর আসলে পূর্ণ কর্মসংস্থানমূলক অর্থনীতি। স্বল্প সময়ের স্থানীয় পর্যায়ে পর্যায়ক্রমিক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষুদ্র হলেও সমাজের সকলের কোনো না কোনো কিছু পরিচালনার সুযোগও থাকা দরকার।