লাশ কাটা ঘর
একদিন আমার বদলে বিছানায়
শুয়ে থাকবে আমার লাশ।
একদিন আমিও নিশ্চিন্তে
শুয়ে থাকব ওই লাশ কাটা ঘরে,
অন্যান্য লাশের পচা গলা গন্ধ
বেমালুম ভুলে গিয়ে।
যত বার হেঁটে গেছি মর্গের রাস্তায়
নাকে চেপে ধরেছি রুমাল
পেরিয়ে গিয়েছি খুব দ্রুত।
যতই এড়িয়ে চলি, যতই ছুটি না কেন
একদিন ঠিক পৌঁছে যাব
ওই লাশ কাটা ঘরে।
পোড়া
যতদিন প্রাণ ছিল পুড়িয়েছি মন
তিলেতিলে মন পোড়া, ওটাই জীবন।
আজ আর মন নেই, মন পুড়ে শেষ
চিতাতেই মহাসুখে শুয়ে আছি বেশ।
পোড়াবে? পোড়াও তবে, আজ আমি স্থির
পুড়বে না মন আর, পুড়বে শরীর।
শ্মশান
ফিরতি ট্রেনের যাত্রীরা সব জড় হয়েছে
এখানেও খুব লম্বা লাইন।
এক এক করে সব উঠে পড়ছে
রিজার্ভ স্লিপার কামরায়।
চিচিং ফাঁকের মত দরজাটা ঝপ করে বন্ধ হল
তারপর সাদা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে
ট্রেনটা চলে গেল দূর থেকে দূরে
সেই নীল তারাদের দেশে।
তুমি পরাজিত
জন্ম এবং তোমার আসা
এর মধ্যে এই যে বেঁচে থাকা
এই যে জীবনের অনুভূতি
এই যে আবেগময় অস্তিত্ব
এই যে হৃৎপিণ্ডের ছন্দিত স্পন্দন
এই যে ‘ঈশা বাস্য মিদং সর্বং’ অবলোকন
চেতন অবচেতনের প্রাচীন দ্বন্দ্বকে
অতিক্রম করে আজও
এই যে জীবনের পাদচারণা
তার মধ্যেই বুঝি তোমার পরাজয়
জীবনের জয়গান একটানা বেজে চলেছে
জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে…
সেই কোন সুপ্রাচীন অতীত থেকে
হে মৃত্যু, তুমি পরাজিত।
জীবনের জয়গান
মৌমাছিরা গাইল গুঞ্জন
ফুলে এসে বসল প্রজাপতি
পাতালের গভীরে শিকড় চলল জলের সন্ধানে
সন্ধানী পাতারা খুঁজল সূর্যালোক
পাখিরা ধরল গান
উড়ে চলল আকাশের বুক চিরে
মৃত্যুর শীতল ছোবলকে নস্যাৎ করে দিয়ে
সবাই চলল জীবনের জয়গান গাইতে…
মৃত্যু (এক)
জলের উপর একটা বুদবুদ
এই আছে এই নেই
হঠাৎ মহাকাশের বুকে
খসে পড়ে তারা
ভোরের শিউলি টুপ করে
ঝরে যায় বৃন্ত থেকে।
কেউ কেউ টুক করে চলে যায়
অজানার আঙিনায়
কেউ যার ঠিকানা জানে না…
মৃত্যু (দুই)
বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কনডেনসারের মতো
পার্থিব জীবনে মৃত্যুও এক খুব প্রয়োজনীয় ক্ষতি।
নতুন মুখের শিশু, টাটকা গোলাপ
কিছুই থাকত না, মৃত্যু না থাকলে।
মৃত্যু না থাকলে আজ পৃথিবীটা ভরে যেত
বৃদ্ধ বৃদ্ধায় আর বৃদ্ধাশ্রমে।